তেঁতুলিয়ার পর্যটনকে দৃষ্টিনন্দন করতে ইউএনও’র উদ্যোগে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান

প্রকাশ: ৯ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৩২ | আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৪০

হিমালয়কন্যা নামে খ্যাত উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ার সৌন্দর্য ও পর্যটন সম্ভাবনাকে ঘিরে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু।
হিমালয়ের কন্যা হিসেবে পরিচিত দেশের সর্বোত্তরের সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়া এ উপজেলায় কোনও ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। তেমন কোন উন্নয়নের ছোঁয়া নেই ভৌত অবকাঠামো খাতেও। তবে গত কয়েক বছরে তেঁতুলিয়া উপজেলা ক্রমশ পর্যটন সমৃদ্ধ উপজেলার দিকে এগিয়ে চলেছে। এর ফলে পর্যটন খাতে বিশাল সম্ভাবনার এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার শিক্ষা, পর্যটন শিল্প বিকাশ এবং সৌন্দর্যবর্ধনের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় দেশের সর্বোচ্চ পতাকা স্তম্ভ এবং প্রাঙ্গণ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটির কাজ পুরোপুরি শেষ হলে আগত পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠবে।
তেঁতুলিয়া পুরাতন বাজার সংলগ্ন মহানন্দা নদীর তীরে শিশুদের বিনোদনের জন্য নির্মিত হচ্ছে আধুনিক শিশু পার্ক। শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে পার্কে বসানো হচ্ছে বিভিন্ন চিলড্রেন রাইডস এবং খেলাধুলার সরঞ্জাম।
শুধু পর্যটনই নয় শিক্ষার্থীদের জন্য নেয়া হয়ে নানামুখী উদ্যাগে, পথে বিদ্যালয়ে যাতায়াত সহজ করতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বাইসাইকেল। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার এতিমখানার শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে স্কুলব্যাগ। এতে খুশি এতিমখানার শিশু শিক্ষার্থীরা।
উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষের উন্নয়ন ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনের অফিসার্স ক্লাব সংলগ্ন মাঠের উন্নয়নের কাজ চলমান হয়েছে। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মসজিদ-মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তি থেকে ফিরে আসা, বিধবা এবং নির্যাতিত নারীদের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিতরণ করা হচ্ছে সেলাই মেশিন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের চলাচল সহজ করতে বিতরণ করা হয়েছে হুইল চেয়ার। এছাড়াও জনসেবাকে আরও স্বচ্ছ করতে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে দুটি ওয়েব-ভিত্তিক এপ্লিকেশন সফটওয়্যার। এতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকারি সেবা প্রদানে প্রকৃত উপকারভোগী যাচাই এবং উন্নয়ন প্রকল্পের গ্রহণে দ্বৈততা শনাক্ত করা সহজতর হওয়ার পাশাপাশি সরকারি অর্থের সঠিক ব্যয় নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ওয়েব-ভিত্তিক এপ্লিকেশনটি সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং কারিগরি কর্মীদের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া কালান্দিগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসা ও এতিমখানা লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ছাত্র আদনান বলেন, "ইউএনও স্যার আমাদের নতুন ব্যাগ দিয়েছেন। এতে আমরা অনেক খুশি। আগে কেউ এতিমখানার শিশুদের বাচ্চাদের দিকে এমনভাবে তাকায়নি।"
কথা হয় পা হারানো যুবক শাহাজাহানের সঙ্গে, তিনি বলেন, উপজলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের একটি হুইল চেয়ার দেয়া হয়েছে৷ যেটি আমার চলার পথে অনেক সাহায্য করছে৷
পর্যটন বিকাশে কাজ করা নর্থবাংলা ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম'র পরিচালক আবু সুফিয়ান বলেন, তেঁতুলিয়ায় সারা বছরই নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন৷ কিন্তু পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোর মতো তেমন কিছুই নেই। তবে উপজেলা প্রশাসন যেসব নতুন উদ্যাগে গ্রহণ করেছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলে তেঁতুলিয়ার পর্যটন শিল্প আরও এগিয়ে যাবে। এমন মহতী উদ্যাগকে আমরা স্বাগত জানাই৷
জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত পরিবেশ কর্মী মো. মাহমুদুল ইসলাম বলেন,তেঁতুলিয়ায় শিশু পার্ক ও মহানন্দা পার্ক নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন । সব মিলিয়ে ইউএনও সাহেবের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তিনি বাস্তবেই কাজ করে দেখাচ্ছেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, স্বপ্নের শহর তেঁতুলিয়াকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোসহ নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য এ বছর পর্যটন খাতে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরত্ব দেয়া হচ্ছে। সর্বোপরি তেঁতুলিয়া উপজেলায় জনকল্যাণমুখী উন্নয়ন প্রকল্প চিহ্নিত করে সেটি বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত