তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে “মজলুম জননেতা”

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২২, ১০:৪৯ |  আপডেট  : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৪২

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১২ ডিসেম্বর ১৮৮০ - ১৭ নভেম্বর ১৯৭৬ - যিনি মওলানা ভাসানী নামেই সমধিক পরিচিত) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক, যিনি জীবদ্দশায় ১৯৪৭-এ সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে “মজলুম জননেতা” হিসাবে সমধিক পরিচিত। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়ও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি মাওপন্থী কম্যুনিস্ট তথা বামধারার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার অনুসারীরা অনেকে এজন্য তাকে "রেড মওলানা" নামেও ডাকতেন।[৩][৪] তিনি কৃষকদের জন্য পূর্ব পাকিস্তান কৃষক পার্টির করা জন্য সারাদেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা। তিনি পঞ্চাশের দশকেই নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের “আস্ সালামু আলাইকুম” বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম।

১৯৩১-এ সন্তোষের কাগমারীতে, ১৯৩২-এ সিরাজগঞ্জের কাওরাখোলায় ও ১৯৩৩-এ গাইবান্ধায় বিশাল কৃষক সম্মেলন করেন। ১৯৩৭-এ মওলানা ভাসানী কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। সেই সময়ে আসামে 'লাইন প্রথা' চালু হলে এই নিপীড়নমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। এসময় তিনি "আসাম চাষী মজুর সমিতি" গঠন করেন এবং ধুবরী, গোয়ালপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৪০ সালে শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের সঙ্গে মুসলিম লীগের লাহোর সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে মাওলানা ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫-৪৬ সালে আসাম জুড়ে বাঙালিদের বিরুদ্ধে "বাঙ্গাল খেদাও" আন্দোলন শুরু হলে ব্যাপক দাঙ্গা দেখা দেয়। এসময় বাঙালিদের রক্ষার জন্য ভাসানী বারপেটা, গৌহাটিসহ আসামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান। পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৯৪৭ সালে আসামে গ্রেফতার হন। ১৯৪৮-এ মুক্তি পান। এরপর তিনি টাঙ্গাইলের সন্তোষে ফিরে আসেন।

বন্দী অবস্থায় ১৯৬২-র ২৬ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বন্যাদুর্গতদের সাহায্য ও পাটের ন্যায্যমূল্যসহ বিভিন্ন দাবিতে অনশন ধর্মঘট পালন করেন। ৩ নভেম্বর মুক্তিলাভ করেন এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট-এর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হন। ১৯৬৩-র মার্চ মাসে আইয়ুব খানের সাথে সাক্ষাত করেন। একই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর চীনের বিপ্লব দিবস-এর উৎসবে যোগদানের জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন এবং চীনে সাত সপ্তাহ অবস্থান করেন। ১৯৬৪-র ২৯ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পুনরুজ্জীবিত করে দলের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং একই বছর ২১ জুলাই সম্মিলিত বিরোধী দল গঠনে ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৫-র ১৭ জুলাই আইয়ুব খানের পররাষ্ট্র নীতির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ১৯৬৬-তে শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থাপিত ছয় দফা কর্মসূচীর বিরোধিতা করেন। ১৯৬৭-র ২২ জুন কেন্দ্রীয় সরকার রেডিও এবং টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ জারি করলে এর প্রতিবাদ করেন।

ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ২০০৪ সালে বিবিসি জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় তিনি ৮ম হন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত