জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২২, ১০:৩৪ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪০

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া এবং প্রতিশ্রুতির আন্তরিক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও লিঙ্গ-সমতা ভিত্তিক টেকসই বিশ্ব নিশ্চিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা।  

জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে কমিশন অন দ্যা স্ট্যাটাস অব উইমেন (সিএসডব্লিউ) এর ৬৬তম অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
 
৬৬তম সিএসডব্লিউ এর অধিবেশন গত ১৪ মার্চ শুরু হয়েছে যা ২৫ মার্চ শেষ হবে। বুধবার (২৩ মার্চ) জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সিএসডব্লিউ-এর এবারের প্রতিপাদ্য হলো, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস নীতি ও কর্মসূচিসমূহের প্রেক্ষাপটে লিঙ্গ-সমতা অর্জন এবং সব নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন’। প্রতিমন্ত্রী সিএসডব্লিউতে পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।

প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করাসহ নারীর ক্ষমতায়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট বাংলাদেশের নাজুক পরিস্থিতি ও দুর্যোগ ঝুঁকির ওপর আলোকপাত করেন এবং এক্ষেত্রে নারীর ও মেয়েদের অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাবের কথা তুলে ধরেন।

 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম, যদিও বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে আমাদের অবদান মাত্র ০.৪৭ শতাংশেরও কম।

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম-এর ৫৫ সদস্যের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপ-২৬ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বেঁচে থাকার জন্য অর্থায়ন নিশ্চিতের ওপর জোর দেওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তা তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো নারীরা।

লিঙ্গ সংবেদনশীল জলবায়ু কর্মসূচি, অভিযোজন, প্রশমন, ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত বিভিন্ন আইন, নীতি, ও কর্মসূচিগুলোর কথা উল্লেখ করেন নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা ২০০৯, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রান্ট ফান্ড আইন ২০১০, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১, জলবায়ু পরিবর্তন ও লিঙ্গ কর্মসূচি পরিকল্পনা ২০১৩, দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জাতীয় পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫, সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাসটার রিক্স রিডাকশন ২০১৫-২০৩০, সাইক্লোন প্রস্তুতি কর্মসূচি, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা দশক ২০৩০, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১, বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০, সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে মুজিব কেল্লা স্থাপন ইত্যাদি পদক্ষেপের উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।

‘সাইক্লোন প্রস্তুতি কর্মসূচি’তে ৩৮ হাজার নারী স্বেচ্ছাসেবী অন্তর্ভূক্তিকরণের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, এর ফলে এই কর্মসূচিটি জাতিসংঘের পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০২১ অর্জন করেছে যা দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে লিঙ্গ সমতার অনন্য উদাহরণ।  

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এ জাতীয় প্রকল্পসমূহ নারী ও মেয়েদের দুর্যোগ পূর্ববর্তী হুইসেল ব্লোয়ার হিসেবে কাজ করার ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করবে, সম্পদ রক্ষা করবে, এবং জীবিকা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বৈচিত্র্য আনবে।

জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে নারী ও মেয়েরা যে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তা কাটিয়ে উঠতে আর্থিক, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সম্পদের সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া তিনি ‘সমতার নীতি’ ও ‘লিঙ্গ সমতাভিত্তিক -জলবায়ু ন্যায়বিচার’ চালু করার ওপরও জোর দেন।

সিএসডব্লিউ এর ৬৬তম অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যের পর বুরুন্ডি’র নারী ও যুব মন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন বাংলাদেশের নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। স্ব স্ব দেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে মত বিনিময় করেন তারা। এছাড়া মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদ্বয় নারী উন্নয়ন বিষয়ক দুদেশের উত্তম অনুশীলনসমূহ উভয় দেশের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত