জনগণের উপর ভ্যাট না বাড়িয়ে সরকারকে খরচ কমানোর পরামর্শ বিএনপির

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০ |  আপডেট  : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:০৭

জনগণের উপর ভ্যাট না বাড়িয়ে সরকারের অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালন ব্যয় কমানো ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোকে দেয়া ঋণ বাজেট কমানোর দিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে গুলশানের বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের সর্বপ্রথম নজর দেওয়া উচিত খরচ কমানোর দিকে। সরকার উন্নয়ন বাজেট পুনর্বিবেচনা করে অপ্রয়োজনীয় ও আর্থিকভাবে অযৌক্তিক প্রকল্পগুলো বাদ দিলে প্রায় ২০ শতাংশ খরচ কমানো সম্ভব এবং এতে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সহায়ক হবে। পরিচালন ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকার যদি স্থানীয় সরকারের বাজেট এবং ভর্তুকি খাতে খরচ কমায় এবং সার্বিকভাবে পরিচালন ব্যয় ১০ শতাংশ কমাতে পারে, তাহলে ন্যূনতম ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব। তাছাড়া সরকার কর্তৃক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া ঋণের বাজেট কমিয়ে সাময়িকভাবে ব্যয় সাশ্রয় করতে পারে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৫০,৮৭৫ কোটি টাকা ঋণ বাজেট করা হয়েছিল।

সরকার খরচ কমানোর মাধ্যমে বাজেটের ন্যূনতম ১ লাখ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই পদক্ষেপগুলো দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি। সরকারের খরচ কমানোর এই উদ্যোগগুলি সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা কমাবে এবং অর্থনৈতিক চাপ লাঘব করবে। ফলে জনগণ আর্থিকভাবে স্থিতিশীল হবে, দেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের এমন আকস্মিক ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ী মহলসহ আর্থিক খাতসহ সংশ্লিষ্ট নানা মহলে তীব্র অসন্তোষ পরিলক্ষিত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত স্পষ্ট প্রমাণ করে যে সরকারের মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের চরম ঘাটতি রয়েছে। যদিও এনবিআরের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে দাবী করা হয় বর্ধিত করারোপ খাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নেই, তথাপি দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদেরা এনবিআরের এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের মতে, ওষুধ, এলপিজি, মোবাইল সেবা, রেস্তোরাঁর খাবার, এবং পোশাক এর মতো নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রে করারোপ বৃদ্ধি পেলে জনজীবনে ভোগান্তি আরও ত্বরান্বিত হবে এবং মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন ঘটবে।

ভ্যাট ব্যবস্থার সমালোচনা করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, এমনিতেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এই ভঙ্গুর অবস্থায় সহজ রাস্তায় হেঁটে ভ্যাটের হার বাড়িয়ে সরকারের খরচ মেটানোর চেষ্টা করলে তা দেশের জনগণের জন্য কোনভাবেই কল্যাণকর হবে না। আমাদের মনে রাখা উচিত এই দেশের জনগণ আওয়ামী দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে অকাতরে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আমরা যেন ভুল নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে তাদেরকে আবার সেই দুঃশাসনের মাঝে ফিরিয়ে না নিয়ে যাই।

আমরা পূর্বেও বলেছি এই অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা করে যাব। তাই সরকারকে অনুরোধ করছি, আপনারা নীতিমালা প্রণয়নে জনগণের কথা সর্বপ্রথম বিবেচনায় নিন। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রাজস্ব সংগ্রহের জন্য অন্যান্য উপায় বিবেচনা করার এবং সে অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

সরকারকে পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেবার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কারণ পরোক্ষ কর সকল শ্রেণীর মানুষকে প্রায় সমানভাবে প্রভাবিত করে এবং নিম্নবিত্ত মানুষের ওপর বোঝা বাড়ায়। প্রত্যক্ষ কর না বাড়িয়েও সরকারি খরচ কমিয়ে চলতি বাজেটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পুনঃবিন্যাস করেও আর্থিক সমস্যার সমাধান করা যায়।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইসমাইল জাবিউল্লাহ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত