উৎপাদন হয় প্রায় ১০হাজার মেট্রিক টন

চলতি মৌসুমে কাউনিয়ায় সুপারি চাষীরা দাম পেয়ে বেজায় খুশী

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৪৬ |  আপডেট  : ৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:২৩

প্রকৃতির বৈরি আবহাওয়া ও কাটবিড়ালীর কারনে সুপারির ফলন কম হলেও ভাল দাম পাওয়ায় কাউনিয়ায় সুপারি চাষীরা বেজায় খুশী। বিগত বছর গুলোর চেয়ে চলতি মৌসুমে সুপারির বেশী দাম পাওয়ায় চাষীরা বাগান তৈরীতে ঝুঁকে পড়ছে। আর এ অঞ্চলে ব্যাপক সুপারী বাগান গড়ে উঠলে পালটে যাবে কাউনিয়ার কৃষি অর্থনীতি। 

জানাগেছে সুপারি বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। সুপারি গাছের উৎপত্তি ফিলিপাইনে হয়েছিল বলে মনে করা হয়। শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, পাকিস্তান, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, চীন, প্রভৃতি দেশে সুপারি চাষ করা হয়। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকাসহ উত্তরবঙ্গের রংপুরের কাউনিয়ায় সুপারির চাষ হয়। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১পৌরসভায় বাড়ীর উঠানে, আনাচে-কানাচে, জমির আইলে সুপারীর বাগান রয়েছে ২১০ হেক্টর জমিতে। এ জমি থেকে প্রতি বছর সুপারি উৎপাদন হয় ৮ থেকে ১০হাজার মেট্রিক টন। সংখ্যায় যার পরিমান ১২ কোটি পোন সুপারী। এ বছর এক পোন (৮০ টি) সুপারি ছোট আকারের ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকা আর বড় আকারের টা ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিগত বছর গুলোতে ছোট আকারের এক পোন সুপারি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, বড়টা ২২০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু চলতি বছর চাষীরা সব থেকে বেশি সুপারীর দাম পাচ্ছে। হলদীবাড়ি গ্রামের সুপারী বাগান মালিক মজিবর রহমান বলেন প্রকৃতির বৈরি আবহাওয়া, খরা, ও কাটবিড়ালীর কারণে সুপারী গাছের ফল ঝরে পড়েছে। তাই গাছে তেমন সুপারী ধরে নাই। এ কারণে ফলন কম হওয়ায় সুপারীর দাম অনেক টা বেড়ে গেছে। এছাড়াও অনেকের বাগানের সুপারীর গাছের বয়স হয়েছে আবার ঝড়ে অনেক চাষীর গাছ ভেঙ্গে পরে বাগান ছোট হয়ে আসার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় সুপারীর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বালিকা বিদ্যালয় মোড়ের সুপারী ব্যবসায়ী জুল হোসেন জানায় বর্তমানে সীমান্ত বন্ধ থাকায় ভারত থেকে সুপারী আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে সুপারির দাম দ্বিগুণ তিন গুণ বেড়ে গেছে। তকিপল বাজারের পাইকার রহমত আলী জানান, কাউনিয়ার সুপারি চলতি মৌসুমে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় রফতানি হচ্ছে। এবছর তাদের ভাল ব্যবসা হচ্ছে। অনেকে আবার সুপারি (মজা) সংরক্ষন করে রাখার জন্য ক্রয় করছেন। স্থানীয় কবিরাজ জানান, সুপারির অনেক গুণাগুণ রয়েছে,  প্রতি ১০০ গ্রাম সুপারিতে আছে ২৮৯ ক্যালরি শক্তি যোগানোর ক্ষমতা। সুপারির উপকারিতা মুখের ঘা সারায়, কৃমি দূর করে, বমি ভাব দূর করে, দাঁতে ব্যথা কমায়, মলদ্বারের প্রদাহ দূর করে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইয়েদুল ইসলাম জানান, বর্ষাকালে বীজ পুঁতে সুপারির চারা তৈরি করা হয়। লোনা নয় এরকম মাটিতে এক বছর বয়সী চারা ৩মিটার দূরে দূরে গর্ত করে লাগালেই সুপারি বাগান দাঁড়িয়ে যায়। বণিক সমিতির সহসভাপতি গফুর আলী জানান প্রতিটি বাড়ীর উঠানে, আনাচে- কানাচে, ক্ষেতের আইলের ধারে ব্যাপক ভাবে সুপারী বাগান গড়ে তুলতে পারলে বদলে দিতে পারে কাউনিয়ার সুপারী কৃষি অর্থনীতি। সুপারি গাছ লাগতে তেমন জমির প্রয়োজন হয়না, গাছের চারা সহজ লভ্য, দামেও কম। ক্ষেতের আইলে লাগানো হলেও জমিতে ছায়া পরে না। তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয়না, প্রকৃতির আর্শিবাদেই সুপারীর ফলন হয়। তাই একবার রোপণ করতে পারলেই যুগ যুগ ধরে ফলন পাওয়া যায়। উপজেলা কৃষি অফিসার তানিয়া আকতার জানান উপজেলায় সুপারী চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মৌসুমে চাষিরা ভাল দাম পেয়েছে। এ এলাকায় সুপারীর বাগান করে চাষীরা ব্যাপক ভাবে লাভবান হতে পারে। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত