গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কী বললেন বিশ্বনেতারা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৮ |  আপডেট  : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:৩৮

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি আরও আগে দরকার ছিল। তবে দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত হয়েছে, এতেই বিশ্বনেতারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১৫ মাস পর হওয়া এই যুদ্ধবিরতিতে মূল মধ্যস্থতাকারী ছিল যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর। আগামী রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল-থানি গতাকল বুধবার সন্ধ্যায় যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আলাদাভাবে যুদ্ধবিরতির কথা নিশ্চিত করেছেন। দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পোস্ট করেছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার প্রাথমিকভাবে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। এর মধ্যে কয়েকটি ধাপে নানা শর্ত বাস্তবায়ন করা হবে। যেমন উত্তর গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ক্রমান্বয়ে প্রত্যাহার, গাজায় হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি, ইসরায়েলি কারাগার থেকে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনির মুক্তি, গাজায় মানবিক সহায়তা জরুরি ভিত্তিতে বাড়ানো, গাজায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য মিসরের সীমান্তবর্তী ফিলাডেলফিয়া করিডর অতিক্রমের অনুমতি ইত্যাদি। প্রাথমিক ৬ সপ্তাহ বা ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির পর তা স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রূপান্তরিত হবে।

গতকাল সন্ধ্যায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গাজায় বাঁধভাঙা উল্লাস দেখা গেছে। ইসরায়েলে জিম্মি পরিবারের স্বজনদেরও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা নিয়ে বিশ্বনেতাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, তা দেখে নেওয়া যাক।

জো বাইডেন

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তির কথা নিশ্চিত করে জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই চুক্তি গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করবে, ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করবে এবং ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে বন্দী থাকার পর জিম্মিদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের পুনর্মিলন ঘটাবে।’

বাইডেন আরও বলেছেন, ‘এই পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা আমি ২০২৪ সালের ৩১ মে (জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে) তুলে ধরে ছিলাম। উপস্থাপনের পর তা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছিল।’

জো বাইডেন বলেন, ‘লেবাননে যুদ্ধবিরতি ও ইরান দুর্বল হওয়ার পরে হামাস যে ব্যাপক চাপে ছিল এবং আঞ্চলিক সমীকরণ যেভাবে বদলে গিয়েছিল, এই যুদ্ধবিরতি কেবল সেটারই ফলাফলই নয়; বরং আমেরিকার দৃঢ় ও কষ্টসাধ্য কূটনীতিরও ফলাফল। এটা সম্পন্ন করার জন্য তাঁদের (কূটনীতিকদের) প্রচেষ্টায় আমার কূটনীতি কখনো থেমে থাকেনি।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে বিশ্বনেতাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এ বিষয়ে একাধিক পোস্ট করেছেন।

প্রথম পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে জিম্মিদের জন্য আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। খুব শিগগির তাঁদের মুক্তি দেওয়া হবে। সবাইকে ধন্যবাদ!’

ট্রাম্প দ্বিতীয় পোস্টে লিখেছেন, ‘এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমার জাতীয় নিরাপত্তা দল ইসরায়েল এবং আমাদের মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবে, যাতে গাজা আর কখনো সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল না হয়।’

কাতারের প্রধানমন্ত্রী

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল-থানি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠক শেষে গতকাল সন্ধ্যায় দোহায় আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি এখন থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ওই দিন থেকেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

মিসরের প্রেসিডেন্ট

মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে এক পোস্টে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি গাজায় দ্রুত মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সাংবাদিকদের বলেছেন, জাতিসংঘ এই চুক্তিকে সমর্থন করতে এবং এখনো ভোগান্তিতে থাকা অগণিত ফিলিস্তিনির জন্য টেকসই মানবিক ত্রাণ সরবরাহ বাড়াতে প্রস্তুত ছিল।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আঙ্কারায় সাংবাদিকদের বলেছেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের সমাধানের জন্য তুরস্কের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবরকে ‘উষ্ণভাবে’ স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘জিম্মিদের তাঁদের প্রিয়জনদের সঙ্গে পুনর্মিলন করা হবে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছাবে। এটি (যুদ্ধবিরতি) একটি পুরো অঞ্চলে আশা জাগিয়ে তুলেছে, যেখানে মানুষ দীর্ঘকাল ধরে অপরিসীম দুর্ভোগ সহ্য করেছে। উভয় পক্ষকে এই চুক্তি অবশ্যই পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, যা এই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা এবং সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধানে সহায়তা করবে।’

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আশা করা যায় যে অবশেষে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং গাজায় প্রাণহানি বন্ধ হবে।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মাসের পর মাস ধরে ভয়াবহ রক্তপাত এবং অগণিত প্রাণহানির পর অবশেষ সেই দীর্ঘ বিলম্বিত খবর এল, যেটার জন্য ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি জনগণ মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী

বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার ডি ক্রু বলেছেন, ‘দীর্ঘ সংঘাতের পর ‘জিম্মিদের বিষয়ে আমরা বেশ স্বস্তি বোধ করছি। আশা করি, এ যুদ্ধবিরতি যুদ্ধের অবসান ঘটাবে এবং একটি টেকসই শান্তির সূচনা করবে। বেলজিয়াম সাহায্য করতে প্রস্তুত।’

নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী

নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোয়ের ‘গাজাসহ (সমগ্র ফিলিস্তিনের) পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্ব গ্রহণের জন্য’ ফিলিস্তিনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়কেই বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেতে হবে এবং এই সমাধান আঞ্চলিকভাবে স্থির করতে হবে।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত