খালেদা জিয়ার নির্দেশনাকে সাধুবাদ জানিয়ে যা বললেন জয়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৪, ১২:১০ |  আপডেট  : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩

গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের জন্য বিএনপির সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। শুক্রবার রাতে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে তিনি রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন।

সাক্ষাৎকারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রশংসা করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে সব ধরনের শত্রুতা বা প্রতিশোধপরায়ণতা ভুলে যাওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি সেটির প্রশংসা করেছেন।

জয় বলেন, ‘খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বলেছেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে, সেগুলো মনে রাখার প্রয়োজন নেই। তার এমন বক্তব্যে আমি খুশি। আমরা অতীত ভুলে যাই। আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ না করি। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, সেটি ঐকমত্যের সরকার হোক বা না হোক।’

গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের জন্য বিএনপির সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাপোষণ করে আওয়ামী লীগ সরকারে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদে থাকা জয় বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই এটি নিশ্চিত করার জন্য যে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকবে, যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’

জয় বলেন, ‘রাজনীতি ও আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে আমি মনে করি। আমরা নানা ইস্যুতে তর্ক করতে পারি। আমরা কোনো বিষয়ে একমত নাও হতে পারি। তবে ভিন্নমত পোষণের অধিকারের প্রতি আমাদের একমত থাকতে হবে। আর আমরা সবসময়ই আপস করার উপায়ও খুঁজে বের করতে পারি।’

সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ বলেছেন, শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগই করেননি। সে সময়টুকু পাননি তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমার মা দেশবাসীর উদ্দেশে একটি বিবৃতি দিয়ে তারপর পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ সময়ে আন্দোলকারীরা গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেয়। তিনি ব্যাগ গোছানোর সময়টুকুও পাননি। আমি যতদূর জানি, সংবিধান অনুযায়ী তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’
 
তবে জয় এমন দাবি করলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভিন্ন কথা বলেছেন। গত সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতের পথে সামরিক হেলিকপ্টারে করে রওয়ানা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই সেনাপ্রধান গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন। বিকেল ৪টার দিকে জেনারেল ওয়াকার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে তাদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। তার এই বক্তব্যের প্রায় আড়াই ঘণ্টা আগেই শেখ হাসিনা ভারতের পথে রওয়ানা দেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এর পরদিন রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। চার দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়।

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘সেনাপ্রধানসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশে। এই সরকার গঠনকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে।'

চলমান অবস্থায় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে বলেও আশাবাদ জানান জয়। বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে। আমি আশাবাদী, ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। তা না হলেও আমরা বিরোধী দলে থাকব। যেটাই হোক, তাতেই আমরা সন্তুষ্ট।’

শেখ হাসিনা বা তার নিজের রাজনৈতিক পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘যাই ঘটুক না কেন, মা [শেখ হাসিনা] তার এই মেয়াদের শেষে অবসর গ্রহণ করতেনই। এখন দল যদি আমাকে [প্রধানমন্ত্রী পদে দলের প্রার্থী হিসেবে) চায়, অবশ্যই আমি সেটি বিবেচনায় রাখব।’

গ্রেপ্তারের হুমকিকে আমার মা কখনো ভয় পাননি-উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘আমার মা ভুল কিছু করেননি। তার সরকারের লোকেরা বেআইনি কাজ করেছেন। তার মানে এই নয় যে- আমার মায়ের নির্দেশেই এ কাজগুলো করেছে। যারা এসবের জন্য দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।’

বিক্ষোভের সময় মানুষকে গুলি করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারে কারা দায়ী তা তিনি বলেননি। তবে তিনি বলেন, ‘আমার মা একেবারেই কাউকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা করার নির্দেশ দেননি। পুলিশ সহিংসতা বন্ধ করার চেষ্টা করছিল, কিন্তু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে।’

জয় বলেন, আমি আমার মাকেও বলেছিলাম, ‘আমাদের অবিলম্বে [আমাদের ছাত্র সংগঠন] বলতে হবে আক্রমণ না করতে, সহিংসতা বন্ধ করতে। আমরা পুলিশ কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেছি, যারা ছাত্রদের উপর গুলি করেছে। আমরা যা করতে পেরেছি তা করেছি।’

যখন খুশি দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনাপুত্র জয়। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো বেআইনি কিছু করিনি। তাহলে কেউ আমাকে আটকাবে কি করে?’

জয় বলেন ‘রাজনৈতিক দলগুলো কোথাও যাচ্ছে না। আপনারা আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবেন না। আমাদের সাহায্য ছাড়া, আমাদের সমর্থক ছাড়া আপনারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনতে পারবেন না।’

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই রাজপথে আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুরুতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চললেও ১৬ জুলাই সারা দেশেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই দিন ছয় শিক্ষার্থী প্রাণ হারান। এরপর সংঘর্ষ-সংঘাত বাড়তেই থাকে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৮ জুলাই দুপুরে মোবাইল ইন্টারনেট ও রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। দেশ ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে প্রাণহানি বাড়তে থাকলে ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। তবে সংঘাত-সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দুই শ মানুষ প্রাণ হারান।

নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে গত শনিবার [৩ আগস্ট] এই আন্দোলন সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। পরদিন সারা দেশে অসহযোগ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এ দিন ১৪ পুলিশ সদস্যসহ প্রায় এক মানুষ প্রাণ হারান।

পরদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা যখন ঢাকা প্রবেশ করছেন, এমন সময় দুপুর দেড়টার দিকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দুপুর আড়াইটার দিকে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতের পথে রওয়ানা হন তিনি। কিছুক্ষণ পরই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের তথ্য নিশ্চিত করেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত