কার্বন কমাতে জি-২০ দেশগুলোর ‘প্রধান ভূমিকা’ চান শেখ হাসিনা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:০৩ |  আপডেট  : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৬

বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন বন্ধে জি-২০ (গ্রুপ অব টুয়েন্টি) দেশগুলোর ‘প্রধান ভূমিকা’ প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে প্যারিস চুক্তি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।

মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুই দিনের ‘পররাষ্ট্র নীতি ভার্চুয়াল ক্লাইমেট সামিট’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এই আয়োজনটি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

পূর্বে ধারণকৃত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নির্দিষ্ট সীমানায় আবদ্ধ নয়। যদি একটি দেশ থেকেও কার্বন নির্গত হয়, তার প্রভাবও সব দেশের ওপর পড়ে। তাই প্রতিটি দেশকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে, ধনী দেশগুলো, বিশেষ করে জি-২০ দেশগুলোকে বিশ্বব্যাপী (কার্বন) নির্গমন বন্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা বিশ্বব্যাপী মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী ১০০টি দেশ। অন্যদিকে জি-২০ দেশগুলো ৮০ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী।

প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়নকেই বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন ও এর ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধের একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন শেখ হাসিনা। এই চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই চুক্তিতে ফেরা একটি ভালো খবর। আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সিদ্ধান্ত এবং গত সপ্তাহে জলবায়ু বিষয়ক নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের প্রশংসা করছি।

পৃথিবীকে বাঁচাতে আগামীকাল নয়, আজই পদক্ষেপ নেওয়ার সময় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্যারিস চুক্তিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অভিযোজন ও প্রশমনের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করেছে।

চলমান করোনাভাইরাস নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারাবিশ্ব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মারাত্মক এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

কোভিড-১৯-এর পর জলবায়ু পরিবর্তনকেই সবচেয়ে আলোচিত বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি এখন প্রতিটি দেশের জন্য, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু দুর্বল দেশগুলোর জন্য একটি বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সব অসুস্থতার জন্য মূলত এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি দায়ী। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার ক্রমাগত বৃদ্ধি মানব জাতির জন্য সবচেয়ে জরুরি উদ্বেগের বিষয়।

তিনি বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠতে না দিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন রোধে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট কিছু করা হয়নি। সে কারণেই বাংলাদেশের মতো দেশগুলো প্রতিনিয়ত ভয়াবহ বন্যা, খরা, জোয়ারের ঢেউ, জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাত ইত্যাদির মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিজ্ঞতা অর্জন করে আসছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে তাপপ্রবাহ চলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অথচ গত বছর বাংলাদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত ছিল। শুধু তাই নয়, সুপার সাইক্লোন আমফানসহ বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই ঘটেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ নয়। বাস্তবিক অর্থে শুধু বাংলাদেশই নয়, বরং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) কোনো সদস্য রাষ্ট্রই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন নির্গমন করে না। তা সত্ত্বেও আমরাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমার দেশের ২ শতাংশ জিডিপি হারাচ্ছি।

সিভিএফ জলবায়ু অভিযোজনের সম্মুখভাগে রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। শুধু তাই নয়, আট শতাধিক অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে ৪১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছি।

বাংলাদেশ সংসদ চলমান জলবায়ু পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা দেশব্যাপী তিন কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। কম-কার্বনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ প্রণয়নের পরিকল্পনাও আমরা নিয়েছি। প্রতিবছর আমরা আমাদের জিডিপি’র প্রায় আড়াই শতাংশ বা প্রায় ৫শ কোটি মার্কিন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যয় করি।

ঢাকায় সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল অফিস অব গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন স্থাপনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কেন্দ্রটি স্থানীয় উদ্ভাবিত অভিযোজন প্রচারণায় কাজ করে যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত