কারফিউর মতো লকডাউন চাই

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৫ এপ্রিল ২০২১, ১৬:১৬ |  আপডেট  : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:০৩

সারাদেশে আজ থেকে শুরু হয়েছে সাতদিনের লকডাউন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুতগতিতে ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, লকডাউন চলাকালিন নাগরিকদের কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। এ সময় সবধরনের গণপরিবহন ও বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটসমূহ বন্ধ থাকবে। সমস্ত দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। তবে ওষুধের দোকান, খাদ্যপণ্য ও কাঁচাবাজার সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সংবাদপত্র ও জরুরি সেবাসমূহ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। ব্যাংক বেলা আড়াইটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ খোলা থাকবে, তবে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারিদের নিজস্ব পরিবহনে আনা নেওয়া করতে হবে। সরকারের ঘোষণায় লকডাউন কার্যবকর করার জন্য কঠোরতা অবলম্বন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। 

লকডাউনের এ সিদ্ধান্ত ঘোষিত হবার পর রাজধানীসহ বড় শহরগুলো থেকে নগরবাসীর গ্রামের দিকে ছুটে যাবার খবর মাধ্যমে এসেছে। বাস, ট্রেন, লে ছিল উপচে পড়া ভিড়। টিকিট না পেয়ে অনেকে ট্রাক ভাড়া করে তাত চড়েই গ্রামের দিকে ছুটেছে। এই গ্রামে যাওয়াকে আমরা দোষের কিছু মনে করছি না। বরং সাতদিনের অখন্ড অবসরে কর্মজীবী মানুষের গ্রামে গিয়ে নিশ্চিন্ত সময় কাটানোর যুক্তি আছে। কিন্তু তারা যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গ্রামে গেছে এবং সেখানেও যদি লকডাউনের নিয়ম-কানুন না মেনে যথেচ্ছ চলাফেরা করে, তাহলে সংক্রমণ অথিক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 
 
অন্যদিকে কেউ কেউ লকডাউনের বিরোধিতাও করছেন। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা এতে তাদের মারাত্মক ক্ষতির কথা বলছেন। কেউ কেউ শিল্প-কারখানা খোলা রেখে দেকানপাট বন্ধ রাখাকে সরকারের দ্বি-মুখী নীতি বলেও মন্তব্য করেছেন। কোথাও কোথাও ব্যবসায়ীরা লকডাউনের বিরুদ্ধে মিছিল করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের এ ক্ষোভের যৌক্তিকতাকে অমরা অস্বীকার করছি না। তবে জনজীবনের হুমকি মোকাবিলায় কখনো কখনো এ ধরনের সাময়িক ক্ষতি মেনে নিতে হয়। করোনার মহামারি থেকে জাতিকে সুরক্ষা দিতে আইনি ঘোষণা কার্যকর করতে সরকারকে সহযোগিতা করা নাগরিক দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে।

অন্যদিকে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে লকডাউনের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন সচেতন মহল। তবে, সাতদিনের লকডাউন করোনা নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর ফল দিবে কিনা তা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন। কেননা, করোনাভাইরাস মানবদেহে দু’ সপ্তাহ সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। তাই সংক্রমিত ব্যক্তিকে জনসমাগম থেকে দূরে রাখার জন্য কমপক্ষে দু’ সপ্তাহের লকডাউনের দরকার ছিল বলে তারা মনে করেন। 

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এ লকডাউন কতটা কার্যকর হবে। কেননা, ইতোপূর্বে আমাদের দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার কার্যকারিতা দেখা যায়নি। মানুষকে ঘরে রাখার জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও সেসময়ে দেশের পর্যটন এলাকাগুলোতে তাদের অবাধ বিচরণ ছিল চোখে পড়ার মতো। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানতে এক শ্রেণির মানুষের চরম অনীহা-অবজ্ঞার কথাও কারো অজানা নয়। মুখে মাস্ক পরা, সাবান দিয় মাঝে মাঝে হাত ধোয়া, হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করাকে তারা গ্রাহ্যের মধ্যেই আনেন না। বস্তুত আমাদের মতো এমন স্বাস্থ্য অসচেতন জাতি পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আছে কি না সন্দেহ। 

একটি বিষয় সবাই একমত যে, বাধ্য না করলে আমরা নিয়ম-নীতি মানতে চাইনা। তাই সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, শুধু লকডাউন ঘোষণা করলেই চলবে না, সে ঘোষণাকে কার্যকর, অর্থাৎ জনগণকে তা মানতে বাধ্য করার জন্য কঠোর পদক্ষেপও সরকারকে নিতে হবে। কেউ কেউ কারফিউর মতো লকডাউনের প্রযোজনীয়তার কথাও বলেছেন। আমরা সরকরের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি জনস্বার্থে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। লকডাউন যাতে অক্ষরিক অর্থেই লকডাউন হয়, সে পদক্ষেপ নেয়া অতীব জরুরি। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত