হাসপাতালের অনিয়মের চিত্র-১

কাউনিয়ায় ১৮ বছর ধরে আবাসিক মেডিকেল অফিসার নেই

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৯ |  আপডেট  : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫১

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২০০৩ সালের হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কার্যপরিধির ৩৩টি পদের মধ্যে ৪ নম্বরে রয়েছে আবাসিক মেডিকেল অফিসার। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা ৫০ শয্যার হাসপাতালে দীর্ঘ ১৮ বছর থেকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদটি শূন্য। জানা গেছে ২০০৬ সালে সর্বশেষ আরএমও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ডাঃ শাহ মোজাহেদুল ইসলাম রঞ্জু। তিনি চলে যাওয়ার পর এ পদে আর কেউ যোগদান করেননি। দীর্ঘদিন ধরে জুনিয়র মেডিকেল অফিসার (এমও) দিয়ে এ পদের কার্যক্রম চলিয়ে আসছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত ও জরুরি বিভাগে আগত এবং ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা কাঙ্খিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে কাগজে কলমে ১জন অবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) দেখান হলেও তিনি আসলে এমও। ডাঃ মেহেদী হাসান নামের জুনিয়র মেডিকেল অফিসার কে দিয়ে এতো বড় পদের দায়িত্ব পালন করান হচ্ছে। একজন এমও হলেন মেডিসিনের লাইসেন্স প্রাপ্ত জেনারেল প্র্যাকটিসের ডাক্তার এবং তিনি কোনও বিশেষায়িত বিভাগে বিশেষজ্ঞ নন। অপর দিকে একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার হলেন নিবন্ধিত ডাক্তার যিনি নির্বাচিত বিশেষায়িত বিভাগে বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। জানাগেছে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের কাজ হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও রোগীর সেবা নিশ্চিত করা। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার অধীনে কাজ করেন, এবং হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আগত রোগীদের সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করণ ছাড়াও তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন প্রশাসনিক ও পরিচালনামূলক কাজ, কর্মীদের তদারকি এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করেন। একজন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে তার হাসপাতালে অবস্থান করে ভর্তি রোগীদের দিনে কমপক্ষে দুবার ওয়ার্ড ভিজিট করার কথা থাকলেও তিনি তা করেন না। তিনি হাসপাতালে অবস্থান করেন না, থাকেন জেলা সদরে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আগত রোগীদের যথাযথ ও দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা তার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। অথচ ২টার পর এই হাসপাতালে কোন আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে পাওয়া যায় না। তিনি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তত্ত্বাবধান এবং তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে কিনা তা নিশ্চিত করার কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায় না। এছারাও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং কমিউনিটি আউটরিচসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কার্যক্রমেও তিনি ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বেহাল চিত্রই বলেদেয় কি দায়িত্ব পালন হচ্ছে। তিনি অনুমোদিত মান ও সূচী অনুসারে রোগীর পথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করবেন। কিন্তু হাসপাতালে প্রায়ই নি¤œমানের খাবার পরিবেশন করে ঠিকাদার, এসব দেখার কেউ নেই। তিনি মেডিকেল অফিসার, স্টাফ নার্স ও অনান্য সহায়ক কর্মচারীদের কার্যক্রম তদারকি করবেন। কিন্তু রোগিদের সাথে নার্সদের দুর্ব্যবহার অসৌজন্যমূলক আচরনের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেই। একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার হাসপাতালের একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও চিকিৎসা কর্মকর্তা। যিনি হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিচালনা এবং রোগীদের উন্নত সেবা প্রদানে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন কিন্তু কাউনিয়া হাসপাতালে ভিন্ন চিত্র। নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত এবং রোগীদের চিকিৎসাসেবায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বিঘিœত হচ্ছে ভর্তি রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সময় আবাসিক মেডিকেল অফিসার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তার জন্য ক্যাম্পাসে ১ম শ্রেনীর কোয়ার্টার তৈরী করা হয়েছে, সেই কোয়াটারে এই ২কর্মকর্তার কেউই থাকেন না। সর্বশেষ জুনিয়ার মেডিকেল অফিসার ডাঃ মেহেদী হাসান কে আরএমও পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। এই পদে দায়িত্ব নিলেও তিনি রংপুর শহরে থাকেন। ফলে কর্মদিবসে পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় শুধু একবার ওই চিকিৎসকের দেখা পান। দায়িত্বপ্রাপ্ত আরএমও মেহেদী হাসান বলেন, আমাকে এই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ পদে দায়িত্ব পালনে বাড়তি কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেই। অহেতুক ঝামেলা আর বাড়তি টেনশন। তারপরও যেহেতু দায়িত্ব নিয়েছি, যতটুকু পারছি দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি। স্থায়ী আরএমও না থাকায় রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ সুজয় সাহা জানান, আরএমও না থাকায় হাসপাতালে অনেক সমস্যা হয়। বিশেষ করে ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে মেডিকেল অফিসারের খুবই প্রয়োজন। উপজেলায় জনসংখ্যা অনুযায়ী হাসপাতালে ডাক্তারসহ অন্যান্য পদে জনবল কম। সকল সমস্যার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার জানানো হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে শূন্য পদ পূরণ, রোগীদের জরুরি ও নিয়মিত সেবা নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করার দাবী এলাকবাসীর। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত