কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শক

কাউনিয়ায় শ্রম আইনের বাস্তবায়ন নেই, নারী শ্রমিকরা বৈষ্যমের শিকার

  সারওয়ার আলম মুকুল

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১৮:০০ |  আপডেট  : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৫

জগতে যা কিছু মহান চির কল্যান কর, অর্ধেক করিয়াছে নারী আর অর্ধেক তার নর। রংপুরের কাউনিয়ায় শ্রম আইনের প্রকৃত বাস্তবায়ন না হওয়ায় সেই নারীরা আজ কর্ম ক্ষেত্রে শ্রম বৈষ্যমের শিকার। কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শকের ভূমিকায়।

সরেজমিনে তিস্তার চরসহ বিভিন্ন গ্রামে নারী শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, তারা শ্রম আইন কি জনে না। এই আইনের প্রয়োগ কি ভাবে হয় তাও তারা বুঝে না। তারা শুধু বুঝে পেটের দায়ে সংসারের অভাব মিটাতে তাদের কাজ করতেই হবে। কাউনিয়ায় কৃষি ও হোটেল এবং রাজমিস্ত্রীর যোগালী নারী শ্রমিকরা চরম মজুরী বৈষম্যের শিকার। নারীদের নিয়ে বিভিন্ন দিবস সভা সমাবেশ অনেক কিছুই হয় কিন্তু শ্রম আইন এর বাস্তব প্রয়োগ উপজেলায় নেই বললেই চলে। উপজেলায় হারাগাছ পৌর সভাসহ ৬টি ইউনিয়নে পুরুষ শ্রমিকের পাশা পাশি নারী শ্রমিকেরা সমান ভাবে কাজ করছেন। বর্তমানে পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকের কদর বেশী হলেও বৈষম্যে থেকে তারা রেহাই পাচ্ছে না। নারী শ্রমিকরা হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হয়ে অতি কষ্ঠে জীবন যাপন করছে। কৃষি কাজ, মাটি কাটা, হোটেল, রাইচ মিল, চাতাল, বিড়ি ফ্যাক্টরী, ইটভাটা, রাজমিস্ত্রীর জোগালী, পাথর ভাঙ্গারসহ সব রকম ভারী কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা সাফল্যের সাথে করালেও নারীরা ন্যায্য মজুরী পাচ্ছে না। কাউনিয়া বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধি ২০১৫ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ করন সভা ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ এমএইচ মনিরুজ্জামান, শ্রম পরিদর্শক সৈয়দ সাইফুল্লাহ। অনুষ্ঠান করেই শেষ, বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ নেই এই উপজেলায়। নতুন শ্রম আইনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, কর্মঘণ্টা, মজুরি কাঠামো, এবং শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়গুলো। কর্মঘণ্টা দৈনিক ১০ ঘণ্টা বা সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে, তবে সাপ্তাহিক গড় ৫৬ ঘণ্টা বজায় রাখতে হবে। নারী শ্রমিকদের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু প্রতিনিয়ত নারী শ্রমিকরা পুরুষদের দ্বারা ইভটিজিং এর শিকার হয়। নতুন আইনে শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষার কথা কলা হলেও বাস্তবায়ন নেই। উপজেলার অধিকাংশ নারী শ্রমিক স্বামী পরিত্যাক্তা, বিধবা, কেউবা অধিক সন্তানের জননী আবার কারও স্বামী পঙ্গু। অভাবের তারনায় তাদের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়। বিনিময়ে পায় তা দিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হয়। যদি কেউ মজুরী নিয়ে প্রতিবাদ করে তাদের কাজ থেকে বাদ দেয়া হয়। পুরুষ শ্রমিক যেখানে একই কাজ করে পায় ৫০০টাকা সেখানে নারী শ্রমিকরা পায় ৪০০ টাকা। নারী শ্রমিক খোতেজা জানান জিনিস পত্রের যে দাম মালিক যে টাকা দেয় তাতে কিছুই হয় না। যা পাই তাই দিয়ে কোন মতে বেঁেচ থাকি, খেয়ে না খেয়ে। একটি বে-সরকারী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, উপজেলায় ৬ হাজারের অধিক নারী শ্রমিক রয়েছে, যারা শ্রম আইনের আওতায় নেই বরং বৈষম্যের শিকার। সভ্যতার বিকাশে নারীর অবদানের জয়গান শোনা গেলেও কাউনিয়া উপজেলায় নারী শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো শ্রমের মর্যাদা ধুলোয় লুটিয়ে মিশে যেতে বসেছে। যত  বৈষম্যে সব যেন শুধু নারীরই জন্য। নারী শ্রমীকদের ন্যায্য অধিকার ফিরে দিতে শ্রম আইনের বাস্তব প্রয়োগ প্রয়োজন। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত