কাউনিয়ায় ভুট্টার পাতা বিক্রি করে কৃষকের ভাগ্য বদলের হাতছানি

  সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩ মে ২০২৫, ১৮:০৩ |  আপডেট  : ৪ মে ২০২৫, ১২:২৪

তিস্তার চরে স্বপ্ন বুনে ভাগ্য বদলের হাতছানি। কাউনিয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকেরা ভুট্টা চাষ করে একদিকে যেমন ভুট্টা থেকে আয় হচ্ছে অন্য দিকে ভুট্টার পাতা বিক্রি করে করছে বার্তি আয়।

সরেজমিনে বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক হাটে সারি সারি ভুট্টার পাতা বিক্রির জন্য বসেছে। রংপুরের কাউনিয়ায় প্রধান অর্থকরী ফসল ধানের পাশাপাশি এখন ভুট্টা স্থান করে নিয়েছে, যার আরেক নাম দিয়েছে ‘সোনালি দানা’। এই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও চরাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে ভুট্টা চাষ। শুধু দানাই নয়, এখন ভুট্টার গাছ ও পাতা বিক্রি করেও চাষিরা বাড়তি আয় করছেন, যা কৃষিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। উপজেলায় দিনদিন গরুর খামার বৃদ্ধিতে গো খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে, ফলে ভুট্টার কাঁচা সবুজ পাতার পুষ্টিগুণের কারণে গোখাদ্য হিসেবে এর কদর দিন দিন বাড়ছে। চাহিদা বৃদ্ধির ফলে উপজেলায় বসছে ভুট্টাপাতার বিক্রির হাট। কৃষকরা জানাচ্ছেন, ভুট্টা পাকার ১৫ দিন থেকে এক মাস আগে কাঁচা পাতা ৩-৫ টাকা দরে আটি হিসেবে বিক্রি হয়। এছারা গাছ খড়ি হিসেবে বিক্রি হয়। এতে উৎপাদন খরচের একটি বড় অংশ উঠে আসে। উপজেলার খোপাতি গ্রামের চাষি হামিদুল ইসলাম বলেন, আগে ভুট্টার গাছ ও পাতা জমিতে পচিয়ে ফেলতাম, এখন প্রতি বিঘায় ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় পাতার বিক্রি থেকে। বুড়িরবাজার এলাকার কৃষক তাজুল ইসলাম জানান, পাতা ও ভুট্টার গাছ বিক্রি করে চাষের খরচ অনেকটাই উঠে আসে। নাজিরদহ চর এলাকার কৃষক সামছুল বলেন, ভুট্টা গাছ থেকে পাতা কেটে আটি বানিয়ে হাটে নিয়ে গিয়ে প্রতি আটি ৪-৫ টাকা করে বিক্রি করি। খামারিরা ভুট্টার পাতা কিনে গবাদি পশুকে খাওয়াচ্ছেন। খামারি মোশারফ হোসেন জানান, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ টাকার পাতা কিনে দুটো গরুকে খাওয়াই। এতে দানাদার খাদ্যের খরচ বাঁচে। বড় খামারিরা প্রাণী সম্পদ বিভাগের পরামর্শে ভুট্টার গাছ, পাতা শুকিয়ে সাইলেজ তৈরি করে কয়েক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করছেন, যা গরু-ছাগলের জন্য বিকল্প পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৩১৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জন হয়েছে ৩৮৫ হেক্টর, যার থেকে উৎপাদিত হয়েছে ৩৩৩৯ মেট্রিক টন ভুট্টা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এআর এম আল মামুন জানান, ভুট্টার পাতায় রয়েছে উচ্চ মাত্রার কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন। এটি দানাদার খাদ্যের বিকল্প। কৃষকরা সাইলেজ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলে খরচ কমে যাবে এবং লাভ বাড়বে। একসময় অপ্রয়োজনীয় ভেবে ফেলে দেওয়া ভুট্টার পাতা এখন কৃষকদের জন্য আয়ের নতুন উৎস হয়ে উঠেছে। এই পরিবর্তন শুধু কৃষকের মুখে হাসি ফোটায়নি, বরং উপজেলায় কৃষি অর্থনীতিতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত