ফসলী জমি বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন
কাউনিয়ায় কবে বাস্তবায়ন হবে তিস্তা মহা পরিকল্পনা ?
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৩৮ | আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮
কাউনিয়ার ৪ ইউনিয়নের পাশদিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা তিস্তা নদী। বালু জমে তলদেশ ভরাট হয়ে শুষ্ক মৌসুমে ধু-ধু বালু চর হলেও বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহের পথ না থাকায় বন্যা আর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করে। প্রতিবছর বসত ভিটা আর জমি হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে ¶তিগ্রস্ত পরিবারগুলো। ইতোমধ্যে বালাপাড়া ও টেপামধুপুর ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গনে ৭ গ্রামের দেড় শতাধিক বাড়ি ভিটাসহ প্রায় ২শ’ হেক্টর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন রোধে কার্যত কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় আতংকে নদী তীরবর্তী মানুষ।
সরেজমিনে বালাপাড়া ও টেপামধুপুর ইউনিয়নের ঢুসমারা, নিজপাড়া, তালুকশাহবাজ, হরিচরনশর্মা, চরগনাই, বিশ্বনাথ, হয়বতখাঁ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে প্রায় শতাধিক বাড়ি ও ২০০ হেক্টর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছর ভাঙ্গনের সময় আশ্বাস্ত করা হলেও কার্যত দীর্ঘদিনের দাবি প‚রণ হয়নি। পৈত্রিক ভিটা হারিয়ে আজ দিশেহারা নিজপাড়া, তালুকশাহবাজ, হরিচরনশর্মা, গনাই, চর গনাই, বিশ্বনাথ, হয়বতখাঁ গ্রামের শত শত মানুষ। ইতিমধ্যেই অনেকে নদী ভাঙ্গনের মুখে পরে শেষ আশ্রয় টুকু হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিস্তা নদী অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে আরো অনেক পরিবার নিঃস্ব হওয়ার শংকায় আতংকিত কয়েক গ্রাম বাসি।
বালাপাড়া ইউপির তালুকশাহবাজ গ্রামের গোপাল, হরেকান্ত, নিমাই, অর্জুন চন্দ্র, ইন্দ্রজিত সহ শতাধিক মানুষের বাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হয়েগেছে। গত বছর এই এলাকার আরও শতাধিক বাড়ী গিলে খেয়েছে তিস্তা নদী। নদী ভাঙ্গনে ফসলি জমি বিলীন হওয়ায় ¶তিগ্রস্ত হচ্ছে এ অ লের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি। পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে নদী খনন করে উভয় তীরে বাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধান দাবি করছে তিস্তার বাম তীরের মানুষ। পূর্ব তালুক শাহাবাজের ক্ষিরোদ চন্দ্র জানান, “কি কমো ভাই নদী হামার সোগ নিয়া গেইছে” এল্যা কৃষানের কাজ করি জীবন চালাই। এই তিস্তা পাড়ের হাবাগোবা অনাথ মানুষ গুলো তারা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি তাদের ভবিষ্যৎ কি। টেপামধুপুর ইউপির ইমান আলী, জয়নাল,্ আজগর, আনোয়ার, নিয়াজ আলী, সফি আলমসহ অর্ধশত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েগেছে। গত বছর এই ইউনিয়নের আরও ২ শতাধিক বাড়ী গিলে খেয়েছে তিস্তা নদী। বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান তার এলাকায় প্রায় শতাাধিক বাড়ি ও বহু ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া এর ব্যাক্তিগত অর্থায়নে ও একটি এনজিও এর সহযোগিতায় ভাঙ্গনরোধে বাঁশ দিয়ে বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তা তিস্তার ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী সমাধান দরকার। টেপামধুপুর ইউপির নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম জানান তার এলাকায় অর্ধ শতাধিক বাড়ি-ঘর ও বহু ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েগেছে। নদী ভাঙ্গনের শিকার ঢুসমারা চরের তাজুল ইসলাম জানান ইতি মধ্যে তিস্তা নদী ভাঙ্গনে সুভাঘাট নামের একটি গ্রাম কাউনিয়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেলেও নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করায় আরও প্রায় ১১টি গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, ঈদগাঁও মাঠ হুমকির মধ্যে রয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধে এলাকার মানুষ তিস্তা সড়ক সেতু থেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত গার্ড ব্যাঙ্ক নির্মাণের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুন্শি এমপি কে বহুবার আবেদন নিবেদন ও মানব বন্ধন করেও কোন কাজ হয়নি। তিনজন মন্ত্রী এসে গাজিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কথা দিয়ে গেছেন নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নিবেন,কিন্তু তা বাস্তবতার মুখ দেখেনি। প্রায় ১বছর থেকে শুধু শোনা যাচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে তিস্তা মহা পরিকল্পনার। কবে বাস্তবায়ন হবে তা কেউ বলে না। নদী ভাঙ্গন রোধে এখনই ব্যবস্থা গ্রহন না করলে উপজেলার ১১টি গ্রাম তিস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে এলাকাবাসী আশংকা করেছেন।
নির্বাহী তাহমিনা তারিন জানান, তিনি নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব তার ব্যাক্তিগত অর্থদিয়ে আপাতত ভাঙ্গন রোধে বাঁশের বাঁধ দেয়া হয়েছে। এছারাও নদী ভাঙ্গনে স্থায়ী সমাধানের জন্য মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত