করোনায় কী করণীয়, পালনীয়

  ডা: আবু বকর সিদ্দিক 

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১২:৩৯ |  আপডেট  : ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:১২

কোভিড-১৯ দ্বিতীয় ওয়েভ এর আগ্রাসনে সারা বিশ্ব আজ ধ্বংসলীলায় পরিণত হচ্ছে। আর এই চলমান ক্ষয়ক্ষতির দায় অনেকটা আমাদেরই।  স্বাস্থ্য বিধি না মানা, পিকনিক স্পট-রিসোর্ট ভ্রমণ, বিয়ে, বৌ-ভাত ,খাতনা, জন্মদিন, ওয়াজ মাহফিল, মিছিল-মিটিং ও কেনাকাটায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। তাছাড়া  বিদেশ ফেরত যাত্রীদের ক্ষেত্রে শিথিলতা করে আইসোলেশন বন্ধ করা-বিশেষ করে আফ্রিকা, ইউরোপ, লন্ডন থেকে আগত যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। কি ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তা হয়তো আমরা জানি না, তবে পূর্বের সেই ভয়াবহ মহামারী প্লেগ রোগের তান্ডবতার কথা মনে করিয়ে দেয়।  ডা. বিজন শীল ও অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে লন্ডন ও দক্ষিণ আফ্রিকার করোনা ভেরিয়েন্ট এর উপস্থিতি আমাদের দেশে দেখা গিয়েছে। যা গতবারের চেয়েও বহুগুণ শক্তিশালী ও প্রাণ নাশকারী। বিজ্ঞানীদের মতে  সারা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো শক্তিশালী ডাইনোসর কালের বিবর্তনে পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়ে গেছে যা থেকে চিন্তাশীলদের অনেক কিছু বোঝার আছে। মানুষ যুদ্ধের সময় কারো কাছে কখনো খাবার চায়না বরং ভালোবাসার বাড়িঘর ছেড়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে এদিক ওদিক পালায়। চলমান পরিস্থিতিতে সর্বাত্মক লকডাউন আমাদের এখন অত্যন্ত জরুরী। তাই আমাদের সচেতন ও তার পাশাপাশি,  স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত। আর এই  স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ সরকারের একার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়, তাই  পুলিশ প্রশাসন বা অন্য যেকোন আইন রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।  প্রত্যেক পাড়া- মহল্লায় রাজনৈতিক কর্মী , সমাজের সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম সকলকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সম্পৃক্ত হতে হবে।সমাজের বিত্তশালীদের সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। মহান স্রষ্টা আল্লাহর বিধি-বিধান পালন করতে হবে। 

এসব ছাড়াও প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়া ,চলাফেরা , ব্যায়াম ও ঘুমের নিয়ম কানুন আমাদেরকে মেনে চলা উচিত। প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ /জগিং করুন। বিশেষ করে বুকের ব্যায়াম (DBE) ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ যেমন সকাল বিকাল খোলা আকাশের নিচে -প্রকৃতির মাঝে অথবা জানালা খুলে লম্বা করে শ্বাস নিন ।কয়েক সেকেন্ড শ্বাস বন্ধ করে রাখুন, তারপর দুই ঠোঁট চেপে সিস দেওয়ার মতো শ্বাস আস্তে আস্তেছেড়ে দিন। এভাবে সকাল-বিকাল ১৫ থেকে ২৫ বার করুন যা ফুসফুসের অ্যালভিওলাইকে শক্তিশালী করবে। এতে করে বডির ইমিউনিটি/ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। 

লক্ষণাবলী :
এমনিতেই জ্বর ঠান্ডার মৌসুম চলছে, উপরন্তু চলছে করোনা মহামারী। এ সময়ে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি  কমবেশি যাই হোক না কেন ,একে অবহেলা করবেন না। বরং বেশি সাবধান হতে হবে। করোনার সংক্রমণের শুরুতে শরীরে মৃদু জ্বর/জ্বর থাকে। সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকলে তাপমাত্রা ১০০ থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে।কারো কারো জ্বর ২/৩ দিনে থেমে গেলেও অনেকেরই সহজে নামতে চায় না। জ্বর দীর্ঘমেয়াদী হলে বা হালকা শ্বাসকষ্ট হলে ভাবতে হবে, ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে নিউমোনিয়া হয়েছে। শুকনো কাশি বা কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে। নরমাল ফ্লুর মত হাঁচি ,কাশি, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া ততটা দেখা যায় না , সাথে স্বাদ ও গন্ধ অনুভূতি চলে যেতে পারে। সারা গায়ে ব্যথা সহ তীব্র মাথা ব্যথা হতে পারে, কারো কারো ক্ষেত্রে ডায়রিয়া , চোখের কনজাংটিভাইটিস , অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। করোনার মারাত্মক উপসর্গ হলো শ্বাসকষ্ট। কারো কারো ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট তেমন তীব্র অনুভূত না হলেও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। যদি জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয় ,অল্প পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট হয়, রক্তচাপ কমে যায় ,শরীর দুর্বল লাগে , এবং রক্তের অক্সিজেন সেচুরেশন যদি ৯২% নিচে চলে যায়, তাহলে   রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করুন। কেননা এসব ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি রক্ত জমাট বাঁধা ও আপার রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। তবে যারা বয়স্ক-বৃদ্ধ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বিধায় এ রোগটি তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

যা করা উচিত :
কিছু সচেতনতার মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধ করা যায়, যেমন: বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করা , নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা ,বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা-বিশেষ করে বাজার, গণজমায়েত , গণপরিবহন,মিছিল-মিটিং, বউ ভাত ,বিয়ে , খৎনা ও জন্মদিনের অনুষ্ঠান ইত্যাদি  থেকে নিজেকে বিরত রাখা। যেহেতু এই রোগটি নাক ও গলার মাধ্যমে ফুসফুসের সংক্রমিত হয় এবং কয়েক দিন পর্যন্ত নাক/ গলায় অবস্থান করে। তাই এ লক্ষণ দেখা দিলে,  দিনে চার-পাঁচবার কুসুম গরম জলে লবন অথবা ভিনেগার দিয়ে গড়গড়া করা যেতে পারে। এই অবস্থায় প্রতিদিন  চার-পাঁচবার norsol drop ০.৯% উভয় নাকে ব্যবহার করা যেতে পারে। আমাদের চিকিৎসক সমাজ যথেষ্ট মেধাবী। তাই জ্বর ও ঠান্ডা ও করোনা সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যায় নিকটস্থ হাসপাতাল /স্বাস্থ্য কেন্দ্র / সরাসরি বা অনলাইনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।সুস্থ থাকুন।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত