করোনার নমুনা পরীক্ষায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে যবিপ্রবি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১, ০৯:১৮ |  আপডেট  : ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩১

করোনার (কোভিড-১৯) নমুনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা শুরু করে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তা কামনা করেও কোনো সাড়া মেলেনি।

তারপরেও মহামারির এ ক্রান্তিকালে জাতীয় দায়িত্ব মনে করে করোনার নমুনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা অব্যাহত রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুজীব বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, বৈশ্বিক মহামারির এ ক্রান্তিকালে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও জাতীয় দায়িত্ব মনে করে গতবছরের ১৭ এপ্রিল যবিপ্রবির জেনোম সেন্টারে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ শুরু হয়। এখানে বৃহত্তর যশোরের চার জেলার অধিবাসীদের (যশোর, নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ) করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনেই ১৩টি নমুনা আসে। তবে প্রথমদিনে যশোরের নমুনা দিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়।

তিনি জানান, এ ল্যাবে একবছরে প্রায় ৩৮ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে সাত হাজার পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়।

এসব নমুনা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত আরএনএ কিট, পিপিইসহ ব্যবহার্য সামগ্রী পর্যাপ্ত না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এ খাতে বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও খরচ করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গতবছরের কিছু অব্যবহৃত গবেষণা তহবিল এবং এ বছরের বিশেষ বরাদ্দ থেকে জেনোম সেন্টারের ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ছোট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ব্যয়ের এ দায়ভার বহন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমরা এজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেখান থেকে কোন আথিক সহায়তা পাওয়া যায়নি। আর্থিক অবস্থার দৈন্যদশা দেখে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান সম্প্রতি এক লাখ টাকা সহায়তা করেছেন বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, আমরা করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্বান্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নমুনাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা চেয়েছিলাম। ১০০ টাকা করে বরাদ্দও হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রায় ৩৮ হাজার নমুনা পরীক্ষার জন্য আমরা সরকারের কাছে ৩৮ লাখ টাকা পাব। সরকারের কাছে পাওনা এ টাকা পেলে আরও একবছর ল্যাব চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে তিনি জানান।
 
সরকারি বরাদ্দ না পেলে কি করবেন- জানতে চাইলে প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন-‘করোনার বিরুদ্ধে এটা আমাদের একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আমাদের বিজয়ী হতেই হবে। তাই যতক্ষণ শরীরে রক্ত আছে ততক্ষণ এ কার্যক্রম চলবে।’ তিনি সকলের সহায়তা কামনা করেন।

যবিপ্রবির জেনোম সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, ল্যাবে গত একবছর ১৬ জন শিক্ষক, ২৯ জন কর্মচারী ও ৪২ জন শিক্ষার্থী সেচ্ছাসেবক হিসেবে রাতদিন বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। রিজেন্ট বোর্ডের এক সভায় শিক্ষকদের মূল বেতনের ২৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা হিসেবে প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু দেশের স্বার্থে শিক্ষকরা এ প্রণোদনা গ্রহণ করছেন না। এটা এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে করছেন অনেকেই। তবে সেচ্ছাসেবক হিসেবে শিক্ষার্থীরা প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, দেশবরেণ্য বিশিষ্ট অনুজীব বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেনের ব্যক্তিগত আগ্রহে একবছর আগে ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। ‘লো কস্ট মেথড’-এর সফল প্রয়োগের মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নতুন এক বিপ্লবের সূচনা হয় দেশে এর দুই মাস পর জুনে করোনাভাইরাসের জীবনরহস্য উন্মোচন করে সাড়া ফেলে দেয় এ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত