এ বছর মৌলভীবাজারে সহস্রভুজা প্রতিমার অর্চনা হবে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৫৭ |  আপডেট  : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:৩১

ফাইল ছবি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুরে রয়েছে দেশের অন্যতম সুন্দর ও আকর্ষণীয় মন্দির। এই মন্দিরটি কাদিপুর-শিববাড়ি নামে পরিচিত। কাদিপুরের শিববাড়িতে এবারের দুর্গাপূজায় পাথরের তৈরি এক হাজার হাতের দেবী দুর্গা স্থাপিত হয়ে পূজিত হবেন। বিশালাকার এ মূর্তি এবছর কাদিপুর শিববাড়ি মন্দিরের মূল আকর্ষণ।

শিববাড়ি মন্দিরের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য ও আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য খুব সহজেই পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। অত্যাধুনিক এই মন্দির পূণ্যার্থীদের কাছে একটি তীর্থ স্থান হিসেবে বিবেচিত। যা দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর শৈল্পিকতায় মুগ্ধ করে পূণ্যার্থীসহ আগতদের।

শিববাড়ির মূল মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশের পূর্বে অনেক দূর থেকে মন্দিরের সুউচ্চ চূড়া দেখা যায়। মন্দিরের প্রবেশ পথে ভৈরব মন্দির ও কিছুটা এগিয়ে গেলে দেখা মেলে মূল মন্দিরের। এখানেই অধিষ্ঠিত রয়েছেন দেবীদুর্গা।

নয়নাভিরাম নানা কারুকার্যখচিত শৈল্পিক আঁচড় আর চারপাশের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের নিদর্শন এই শিববাড়ী। দুর্গাপূজা এলেই এখানে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা। তবে দুর্গাপূজা ছাড়াও বছর জুড়ে শিববাড়িতে মনস্কামনা পূরণে আসেন ভক্তরা।

মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রধান পুজারি আচার্য্য পুলক সোম প্রতিবেদককে জানান, বেশকয়েক বৎসর পূর্বে স্বপ্নাদিষ্টে পাওয়া সহস্রভুজা (এক হাজার হাত) দেবীদুর্গার প্রতিমা নির্মাণ শুরু হয় ২০১৮ সালে নভেম্বর মাসে। কিন্তু বিগত করোনাকালীন সময়ে ধীরগতিতে নির্মাণ কাজ বিলম্ব হয়। ৪ বৎসরব্যাপী চলা এই কাজে ২০ জন নির্মাণ শিল্পীর দ্বারা গত মাসে প্রতিমার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এই প্রতিমা নির্মাণে পাথর, সিমেন্ট, রড ও বালু ব্যবহার করা হয়।

তিনি জানান, আগামী ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর পূর্বেই আনুসঙ্গিক সব কাজ শেষ হবে। পাথরের তৈরি প্রায় ২৩ ফুট উঁচু তপ্তকাঞ্চন বর্ণের সহস্রভুজা প্রতিমায় এখন রঙের কাজ চলছে।

প্রধান পুজারি স্বল্পভাষী আচার্য্য পুলক সোম বলেন, ‘মহাষষ্ঠীর দিন দুর্গাপূজার মূল আচার অনুষ্ঠান শুরু হবে ও সেদিন স্থায়ী প্রতিষ্ঠা হয়ে পূজিত হবেন সহস্রভুজা দেবীমা।’

কাদিপুর শিববাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে লোকমুখে শোনা যায়, এই বাড়ির অনঙ্গ কুমার সোম ছিলেন জমিদারবংশীয়। এই বংশের কোন এক বংশধর তাঁদের দীঘির পাড়ে বেলগাছের নিচে আসন পেতে নিয়মিত শিবের সাধনা করতেন। শিবের সাধনা করলেও তখনো এ বাড়িতে কোন শিবলিঙ্গ ছিলনা।

পরে অনঙ্গ কুমার সোমের পুত্র স্বর্গীয় অজিত কুমার সোমের পরবর্তী বংশধর পুলক সোমের তপস্যার ফসল হিসেবে ১৪০৫ বঙ্গাব্দের (১৯৯৮ খ্রিঃ) শ্রাবণ মাসের ১৮ তারিখ শিবলিঙ্গটি পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় সেই শিবলিঙ্গটি ১৫০ বছর পূর্বেকার। পরে পুরনো মন্দিরটি সংস্কার করে সেখানেই শিবলিঙ্গটি স্থাপন করা হয়।

দৈব শিবলিঙ্গ পাওয়ার খবর মুখেমুখে ছড়িয়ে পড়লে, ধর্মপ্রাণ ভক্তরা শিবলিঙ্গটি দর্শনের জন্য ভীড় জমাতে থাকেন এই বাড়িতে। সেই থেকে আজ অবধি এই ধারা অব্যাহত আছে এবং এই মন্দিরে প্রতিদিন পূজা অর্চনা, ভোগ ও আরতি হয়ে থাকে।

জানা যায়, শিববাড়ির জমিদারী প্রথার বিলুপ্তি ঘটলে একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী জমিদার পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পতিত হয়। ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রায় ৩১ বৎসর ঘটপুজা তারা করেন। তখন সেই বনেদী পূজা-পার্বণে আকাশছোঁয়া জৌলুস হারিয়ে যায়। তবে এর প্রভাবে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে একবিন্দু ঘাটতি পড়েনি। ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনেই পূজা-পার্বণ অব্যাহত ছিল। পরবর্তীতে ২০০১ সাল থেকে মন্দিরটি আগের জৌলুস ফিরতে শুরু করে। যা আজও চলমান আছে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজায় এই ধর্মীয় উপাসনালয়ের গুরুত্বটাও অন্যরকম। তাই প্রতি বছরই লাখো ভক্তের ভিড়ে মন্দিরটির পার্শ্ববর্তী কয়েক কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে।

এখানে আসা অনেক পুণ্যার্থীরা জানালেন, বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়নের এই মন্দিরটিই সেরা। পূজার সময় ভক্তদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠে ঐতিহাসিক অনিন্দ্যসুন্দর এ মন্দিরটি। এর স্থাপত্যশৈলী শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নয় বরং মুগ্ধ করবে যে কোন ধর্মের সৌন্দর্য্য প্রেমী রুচিশীলদের।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত