এসব দুস্কৃতকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কাম্য

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৬ জুলাই ২০২১, ১৬:২৫ |  আপডেট  : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৪

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় বলেছেন-‘যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস/ যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ’। কবি নজরুল আজ নেই আমাদের মাঝে। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে চরম হতাশ হতেন এটা দেখে যে, তাঁর রক্ত-লেখায় যাদের সর্বনাশ তিনি সেদিন কামনা করেছিলেন, তারা আজো বহাল তবিয়তে আছে। বরং তাদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে ভায়াবহ আকারে। ওই সর্বনাশা জীবগুলোর অবাধ বিচরণ আজ সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে। ধেড়ে ইঁদুরের মতো ওরা কুরে কুরে খাচ্ছে এদেশকে। সে সাথে বিবেক-বিচেনাহীন পশুর মতো নির্দ্বিধায় গিলে খাচ্ছে জনগণের সম্পদ, গরিবের হক। 

রিলিফ চুরির বিষয়টি আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। সমাজের এক শ্রেণির লোক, যারা রিলিফ বন্টন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত তারা রিলিফের চাল গমসহ নানা দ্রব্য আত্মসাত করে থাকে। সরকারি দফতরগুলোতে চলে অবাধ ঘুষ বানিজ্য। বিভিন্ন দুর্যোগে দরিদ্র মানুষের জন্য আসা চাল, ডাল, তেল, গম, টিন চলে যায় চেয়ারম্যান-মেম্বার ও এক শ্রেণির টাউট-বাটপারের উদরে। না, এ কথা বলা যাবে না যে, দেশের সব চেয়ারম্যান-মেম্বার রিলিফ আত্মসাতকারী। এমনও চেয়ারম্যান-মেম্বার আছেন, যারা নিজেদের গাঁটের টাকা খরচ করে এলাকার উন্নয়নের চেষ্টা করেন, দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করেন। 

 দরিদ্রদের সম্পদ নিয়ে নয়ছয় করার যে খবরেটি অতি সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছে তাহলো, মুজিব শতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ভ‚মিহীন অসহায় মানুষদের জন্য গৃহসংস্থান প্রকল্প নিয়ে। আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যেই সারা দেশে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০ জন ভূমিহীনকে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি করে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং তা হস্তান্তর করেছেন। সেই মহতী প্রকল্পটিতেও দুর্নীতি-অনিয়মের ভুত আছর করেছে। মাত্র ক’মাস আগে নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলোর মধ্যে বেশকিছু ধসে পড়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগসাজসে ঠিকাদাররা ঘর নির্মাণে অনিয়ম করেছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় চলতি বর্ষায় স্বাভাবিক বর্ষণেই বিভিন্ন জেলার শতাধিক ঘর ভেঙে পড়েছে, ফাটল ধরেছে অনেক ঘরের দেয়াল কিংবা পিলারে। ৬ জুলাই সমকালে এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম, অর্থ আত্মাসাৎ ও অবহেলায় সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। অনিয়মে জড়িত ১৮০ জনের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। দেশের ২২টি জেলার ৩৬টি উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভ‚মিহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারি কমশিনার (ভ‚মি) এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রয়েছে এই অভিযুক্তদের মধ্যে। বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যেই ওএসডি করা হয়েছে, আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। 

দরিদ্র ভূমিহীন মানুষদের জন্য ঘর তৈরি করে দেয়ার প্রকল্পটি সর্বস্তরে প্রশংসিত একটি পদক্ষেপ। সেই প্রকল্পে যারা অনিয়ম- দুর্নীতি করেছে তারা দুস্কৃতকারি। কোনো বিচারেই এদের ছাড় পেতে পারেনা। শুধু ওএসডি নয়, এদেরকে প্রচলিত আইনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। দিতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যাতে আর কোনো দুর্নীতিবাজ-দুস্কৃতকারি অন্তত গরিবের মুখের গ্রাস কেড়ে খাাবার সাহস না পায়। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত