বাবার কাজে যোগান দেয়া হলো না তাওহিদের
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:১৮ | আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৩১
আমার সংসার দেখার কেউ রইলো না। সন্তানকে এভাবে হারাতে হবে সেটা কোনভাবেই মানতে নারাজ সালাউদ্দিন সন্ন্যামাত। অর্থাভাবে লেখাপড়া ছেড়ে সংসারের যোগান দিতেন তাওহিদ। বাবা-ছেলের যৌথ আয়ে চলতো তাদের সংসার। ‘বাবা-পুতে একলগে কাম করতাম। এখন কামে গেলেই পুতের কথা মনে পড়ে। কামে মন বসাইতে পারি না। চোখের সামনে পুতের ছবিডা ভাইসা ওঠে। আমি জানি না কিভাবে আমি ওরে ভুলে স্বাভাবক অবস্থায় ফিরবো। বাজানের জন্য খালি মনডা কান্দে।’ কথাগুওলো বলেই মুহু মুহু করে কেঁদে উঠলেন মাদারীপুর সদও উপজেলার সুচিয়াভাংগা গ্রামের রাজমিস্ত্রি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত তাহহিদ সন্যামত(১৯) এর পিতা সালাউদ্দিন সন্যামত। বাবা সালাউদ্দিন সন্ন্যামাত আরো বলেন, সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা না পেলে কোনভাবেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। ছোট সন্তান হলেও আয়ের অর্থ দিয়ে পরিবার চালানোর পাশাপাশি বড়ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ দিতো সে। তাওহীদের আকষ্মিক মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
সরেজমিনে মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সুচিয়ারভাংগা গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডের নিহত তাওহিদ সন্যামত এর বাড়িতে গেলে নিহত তাওহিদের মা রেসমা বেগম বলেন,আমার ছেলে তাওহিদ অত্যান্ত ভদ্র ও ধার্মিক ছিলেন ও (তাওহিদ) খেলাধুলার প্রতি নেশা ছিল সব সময় খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আর্থিক অনটনে ৮ম পর্যন্ত লেখাপড়া করে ওর বাপের সাথে রাজমিস্ত্রির কাম করতো। মারা যাওয়ার ২ দিন আগে বলে মা আমি আন্দোলনে যামু হয় শহীদ হমু না হয় মারা যামু। তুমি আমারে দোয়া কইরো । এইভাবে যে আমার পুতটা চইলা যাইবে স্বপ্নেও ভাবি নাই। কথাগুলো বলে অঝোরে কাঁদতে থাকলেন। একটা রোজাও ভাংতেন নাতাওহিদ। এই বিছানায় শুইতেন। এহন আমি এহানে ঘুমাই মনে করি আমার তাওহিদ প্রেত্যেক রাইতে আহে আমার কাছে। মরা যাওয়ার আগের দিন এলাকার মসজিদে কাজ করছে ।
গত শুক্রবার দিন ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের সাথে সদর উপজেলার খাগদী এলাকায় যোগ দেয় তাওহীদ। এ সময় এলোপাতারি গুলি ছুঁড়লে পায়ে গুলি লেগে নিহত হয় তাওহিদ। পরদিন পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। পরে ১৪ আগস্ট পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে শহীদের স্বীকৃতির দাবি তোলা হয়। মোস্তফাপুর ব্যাসস্ট্যান্ডের গোলচত্ত্বরটি শহীদ তাওহীদের নামে নামকরণ করার দাবি তুলে তাওহীদের বাবা সালাউদ্দিন সন্ন্যামাত। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা না পেলে কোনভাবেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
তাওহীদের মামা ইব্রাহীম খলিল বলেন, তাওহীদ ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে মারা গেছে। এর আগে একদল সন্ত্রাসী তাওহীদকে কুপিয়ে আহত করে। তাওহীদের নামে এলাকায় একটি স্মরনীয় স্থাপনা নির্মানের দাবি জানাচ্ছি। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম তাওহীদের কথা মনে রাখতে পারে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত