উত্তরে চীন ও পশ্চিমে পাকিস্তানের মোকাবিলায় ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৩৪ |  আপডেট  : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:০৩

উত্তরে চীন ও পশ্চিমে পাকিস্তানের মোকাবিলায় ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির দিকে নজর দিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। গত বুধবার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার সময় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিরক্ষা খাতে ১৩ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন তিনি। আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ৫ লাখ ৯৪ হাজার রুপির একটা বড় অংশ যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন ও ট্যাংক কিনতে খরচ হবে। চলতি অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি রুপি।

সামরিক অস্ত্রসম্ভারের আধুনিকায়নে ১০ হাজার কোটি বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতবার ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি রুপি, এবার বরাদ্দ ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি। এই অর্থের একটা বড় অংশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের অধীন দেশে উৎপাদিত অস্ত্রসম্ভার কেনা হবে। অর্থমন্ত্রী বাজেট ভাষণে ‘আত্মনির্ভরতার’ কথা বারবার উল্লেখ করেন। প্রতিরক্ষা বাজেটের একটা বড় লক্ষ্য অস্ত্রসম্ভারে ক্রমে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠা।

আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর চোখে প্রতিরক্ষা ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরেই ভারতের অবস্থান। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধ বেড়েছে। পশ্চিমে পাকিস্তান সীমান্তের অবস্থাও অপরিবর্তিত। হিমালয়জুড়ে উত্তরে লাদাখ থেকে শুরু করে পূর্বে অরুণাচল পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনী তার উপস্থিতি ও নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে।

উত্তরাখন্ডে তৈরি হচ্ছে চার ধাম সংযোগকারী সড়ক। এই সড়ক সম্প্রসারণের সময় বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করার বিষয়টি। সড়কপথে অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও হালকা ট্যাংক যাতে নিয়ে যাওয়া যায়, সেদিক বিবেচনায় রেখে এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ভারতে ইতিমধ্যে হালকা ট্যাংক উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বাজেটে ‘বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন’-এর বরাদ্দ সাড়ে ৩ হাজার কোটি থেকে ৪৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ হাজার কোটি রুপি করা হয়েছে।

নতুন বরাদ্দের একটা বড় অংশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সাইবার দক্ষতা বাড়াতে খরচ করা হবে। পাকিস্তান ও চীনের মোকাবিলায় এই ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি জরুরি বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

প্রতিরক্ষা বাজেটের এক–চতুর্থাংশ খরচ হয় পেনশন দিতে। বাজেটে সেই বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। পেনশনের এই বিপুল বোঝা কমাতে কেন্দ্রীয় সরকার ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পে প্রতিবছর তিন বাহিনীতে যত জওয়ান নেওয়া হবে, চার বছর পর তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশকে পাকাপাকি নিযুক্তি দেওয়া হবে। বাকিদের চার বছর পর প্রায় ১২ লাখ রুপি দিয়ে বিদায় দেওয়া হবে। তাঁরা পেনশনের আওতায় থাকবেন না। এই প্রকল্প ঘিরে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছিল।

প্রতিরক্ষাবিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই বাজেট বৃদ্ধিকে যথার্থ মনে করছেন না। তাঁরা মনে করছেন, চীন যেভাবে ক্রমে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, তাতে এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত কৌশিসের মতে, বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ঠিকই। বৃদ্ধির আশাও করা হয়েছিল। কিন্তু সম্ভবত যত বাড়ানো উচিত ছিল, ততটা হয়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাহিদা আরও খানিকটা বেশি ছিল।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত