পিটার হাসের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

'আমেরিকা স্যাংশনও দেবে নিরাপত্তাও চাইবে, এটা কেমন কথা'  

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:৫১ |  আপডেট  : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৯

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একদিকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর স্যাংশন দেবে আরেকদিকে তাদের নিরাপত্তা চাইবে এটা কেমন কথা।

তিনি বলেন, আমেরিকায় আমাদের রাষ্ট্রদূতকে তেমন কোনো নিরাপত্তা দেয়া হয় না। অপরদিকে বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাসের জন্য ১৫৮ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা রয়েছে। এছাড়া মার্কিন রাষ্ট্রদূতের জন্য রয়েছে আলাদা বডিগার্ড। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তার তেমন কোনো অভাব নেই। তবে হলি আর্টিজান হামলার পর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তার বাড়ানো হয়েছিল। তবে বর্তমানে এমন কোনো অসুবিধা নাই এবং আমাদেরও পুলিশ দরকার তাই বাড়তি নিরাপত্তা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

শুক্রবার জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাজ্য সফরের নানা দিক তুলে ধরতে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন। এদিন বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের নিজেদেরও কিছু দোষ আছে। যারা ভোট চুরি করেছে তাদের কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনতে হয়। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবই তো ভোট চোর। আওয়ামী লীগের হাত ধরে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়েছে। এদেশের মানুষ জানে, নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নতি হয়েছে। মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছে। দারিদ্র বিমোচন হয়েছে।

শেখ বলেন, দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলে তখন বলতে হয়, সন্দেহ হয় রে। যারা ভোট পাবে না, যাদের জনসমর্থন নেই। যাদের কোটি কোটি টাকা আছে, তারা বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে।

সরকারপ্রধান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যখন দেশে স্বৈরশাসন ছিল, আমরা সংগ্রাম করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থার যে সংস্কার। ভোটার তালিকা প্রণয়ন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। এটা আওয়ামী লীগই করেছে। আমাকে শেখাতে হবে না। একটানা আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওয়াশিংটন সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভানের সঙ্গে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়। আমি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রযুক্তি সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়। আমি সবুজ জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন এবং ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ ফান্ডকে কার্যকর করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি।

জেইক সুলিভান নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং সন্ত্রাস দমনের মতো সরকারের অর্জনের প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় তিনি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। সভায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে জোরদার করার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে দুই দেশ।

দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এরই মধ্যে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সবাইকে মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্যাশন হয়ে গেছে, কেউ মশারি টাঙাতে চায় না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন সিজনে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এজন্য এমপি বা ডাক্তার দাঁড় করিয়ে দিলে তো হবে না। প্রত্যেকের নিজের সচেতন হতে হবে। নিজের ঘর-বাড়ি পরিষ্কার রাখা, যেখানে মশা জন্মাচ্ছে সেই জায়গাটা দেখে পরিষ্কার করা। শুধু নিজের ঘর না বাইরে রাস্তা বা তার আশপাশে প্রতিবেশীরা মিলে পরিষ্কার করতে হবে। যেন এডিস মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো তৈরি হতে না পারে। এভাবে সবার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রচেষ্টা আছে। এছাড়া গবষণা চলছে , শুনলাম জাপান নাকি একটা টিকা আবিষ্কার করেছে। এগুলো তো আসলে সময় সাপেক্ষ।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন তো ফ্যাশন হয়ে গেছে, কেউ মশারি টাঙাতে চায় না। মশারি টাঙানো একান্ত দরকার। আর ওষুধ দিতে দিতে মশার সহ্য হয়ে গেছে। তাই ওষুধ কাজ করে না। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। সবাই উদ্যোগ নিলে এর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি যাতে উন্নয়নশীল দেশের ওপর চাপ সৃষ্টির রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা না হয়, সেজন্য বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জাতিসংঘে ২২ সেপ্টেম্বর আমার বক্তব্য দিয়েছি। সেখানে বলেছি, মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি যাতে উন্নয়নশীল দেশের উপর চাপ সৃষ্টির রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা না হয়, আমি সে দাবি জানিয়েছি। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছি যে, আমার সরকার সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাচ্ছে ও করে যাবে।

সরকারপ্রধান বলেন, বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অপব্যবহার, বিদ্বেষ সৃষ্টি এবং উগ্রপন্থা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরি। চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমার সরকারের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।

রিজার্ভ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকবো। ভোটে আসলে আবার করবো। দেখি কে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়! সব রেডি করে দিয়েছি, এখন বসে বসে বড় বড় কথা বলে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব আঁতেল, জ্ঞানীগুণী কথা বলেন, তারা কি জানেন, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি, তখন রিজার্ভ কত ছিল? বাংলাদেশ কোথায় ছিল, কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছি? যতটুকু রিজার্ভ প্রয়োজন, আমাদের আছে। আমাদের ভালো থাকা জরুরি, নাকি রিজার্ভটা দরকার বেশি? যদি বলে, তাহলে রিজার্ভ আগের জায়গায় এনে দেই? বিদ্যুতকেন্দ্র-টেন্দ্র বন্ধ করে দেই।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে অধিবেশন শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে পৌঁছান তিনি। দুই দেশে মোট ১৬ দিনের সফর শেষে বুধবার (৪ অক্টোবর) দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত