ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ

আদমদীঘিতে নির্মাণ কাজে তিন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম

  মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম (উজ্জল)

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৩ |  আপডেট  : ৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০৭

বগুড়ার আদমদীঘিতে তিন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিম্নমানের ইট, পাথর, রড, খোয়া, বালু ও কাঠের বদলে বাঁশ নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করে তারা নানা ধরনের জন গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজ করে আসছেন। এতে বছর পেড়িয়ে যেতেই নির্মাণ কাজে দেখা দিচ্ছে বিরূপ প্রতিফল। ফলে সরকারি কাজের উদ্দেশ্যকৃত বরাদ্দ বিফলে যাওয়ায় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন জনসাধারণ। এভাবে দীর্ঘদিন চলার পর একপর্যায়ে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জনসাধারণের জীবনমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নয়নমূলক রাস্তাঘাট, ড্রেন, বিদ্যালয় ভবন সহ বিভিন্ন স্থাপনার কাজ করে সরকার। এসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলীদের তত্ত¡াবধানে ঠিকাদার দিয়ে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকা সোহেল, জাহিরুল ও জিয়াউল হক পুটু ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে টেন্ডারারবাজি ও নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারাসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজের প্রকল্প বাগিয়ে নিজেরা পকেট ভরাতেন। ফলে নির্মান কাজগুলো বছর পেড়িয়ে যেতে না যেতেই গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

জানা যায়, উল্লেখিত তিন ঠিকাদার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ছাড়ে কাজ পেতেন। এজন্য কাজের মানও হয়েছে নিম্নমানের। দীর্ঘদিন ধরে এসব নির্মাণ কাজে ব্যবহার করছে নাম্বার বিহীন ইট, ব্যান্ড বিহীন সিমেন্ট, পরিত্যক্ত পাথর, পুরাতন লোহার রড, কাদাযুক্ত বালু। এসব কাজ করতে দেখে কেউ প্রতিবাদ করলে উল্টো নানা ধরনের ভয়ভীতি ও বিভিন্ন মামলা-হামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাদের এসব কাজে সহযোগিতা করেছেন এবং আসছেন দায়িত্বরত উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর। যার ফলে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অনিয়মের সুযোগ পান ঠিকাদাররা। কয়েক মাস আগে ঠিকাদার সোহেল ছাতিয়ানগ্রাম অন্তাহার স্কুলের বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ আসে। পরে তথ্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিষয়টি সত্যতা পাওয়ার পরেও পুনরায় কাজ চালু করার অনুমতি দেন উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর। পরে আবারও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

এরপর সান্তাহার হার্ভে স্কুল নির্মাণ কাজে অনিয়ম আসে তার বিরুদ্ধে। এদিকে সান্তাহার পৌরসভার প্রকৌশল দপ্তরের যোগসাজশে ঠিকাদার জাহিরুল ওয়ার্কশপ থেকে রথবাড়ি রাস্তায় নিম্নমানের ইট, কাদাযুক্ত বালু, আবর্জনাসহ খোয়া দিয়ে কাজ শুরু হলে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করে। এ বিষয় নিয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে কাজটি বন্ধ হলে কিছু নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে পুনরায় কাজটি চালু করে এ ঠিকাদার। এরপর সান্তাহার ইউপির দমদমা গ্রামে একটি রাস্তার কার্পেটিং কাজের একদিন পরেই ঢালাই পিচ উঠে যাচ্ছিল পরে গ্রামবাসী প্রতিবাদ করে।

আবার ছাতিয়ানগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণ শেষে বিল্ডিং হস্তান্তরের আগেই দেওয়ালের নোনা, ফাটলসহ প্লাস্টার উঠে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা এবং তাঁরাপুর স্কুলের প্রাচীর নির্মাণে একই কান্ড করেছেন তিনি। বিষয়টি তদন্তের পর সত্যতা পান উপজেলা প্রশাসন। ঠিকাদার জিয়াউল হক পুটুর বিরুদ্ধে সদর ইউনিয়ন পরিষদে সংষ্কার কাজে নিম্নমানের বালু, ইট, খোয়া, দরজা, জানালা ব্যবহার করার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি কারন সে সময়ে তিনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানের সহযোগিতায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন।  এভাবে বিগত সরকারের আমলে এসব ঠিকাদার সরকারি অর্থ নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে একাধিক বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রিসিভ করেননি।

কা/আ 

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত