আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে পরনির্ভরশীল করছে: ফখরুল

আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে পরনির্ভরশীল করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জাতীয় নেতা শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।শেরে বাংলা জাতীয় যুব স্মৃতি ফাউন্ডেশন 'আজকের প্রেক্ষাপটে শের-ই-বাংলার প্রাসঙ্গিতকতা' শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

ফখরুল বলেন, আজকে আমরা শেরে বাংলা ফজলুল হক সম্পর্কে একেবারেই ভুলতে বসেছি। আমাদের পাঠ্যপুস্তক বাদ দিন, অন্যান্য যে বইপত্র রচনা হয় সেখানেও তার প্রাসঙ্গিকতা সেভাবে আসে না। আমরা যখন দেখি, স্মৃতি সংসদগুলো আলোচনা করে সেখানে শের-ই-বাংলার ওপরে গবেষণার কাজ করেছেন এই ধরনের মানুষ কিন্তু আমরা আসতে দেখি না, কথা বলতে শুনি না।

তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে যে একটা মাত্র পরিবার, একটি মাত্র দর্শন, তাকেই সামনে নিয়ে আসার জন্যে, তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আজকে সমস্ত বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছে। অবশ্য বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এ বক্তব্য তারা ছিল ১ নেতা ১ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। মুজিববাদকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর কিছু থাকবে না। তখন তারা ব্যর্থ হয়েছিল, পারেনি। এবার তারা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকাংশে তারা সফল হয়েছে। আজকে পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে কিন্তু একজন নেতা ছাড়া কারো কোনো নাম গন্ধ নেই। আমাদের ছোট ছোট নাতি-নাতনি যারা স্কুলে পড়াশুনা করে সেখানে কিন্তু তারা একজনের নাম জানে, অন্য কারো নাম জানে না। এমনকি আপনার কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছে তারাও বোধ হয় শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের নাম একেবারে ভুলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। কেউ কি জানে শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের কবর এখান (জাতীয় প্রেসক্লাব) থেকে খুব কাছে সোহরাওর্দী উদ্যানে?

ফখরুল আরও বলেন, আজকে এই সরকারের আগ্রসনটা সর্বগ্রাসী। একদিকে আমার ইতিহাস বিকৃতি করছে, আরেকদিকে আমার অর্থনীতিকে পুরোপুরিভাবে ধবংস করে দিয়ে পরনির্ভরশীল করে ফেলছে। অন্যদিকে আবার রাজনীতিকে পুরোপুরিভাবে একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে গিয়ে আমার যে মূল গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা তার থেকে একেবারে সরিয়ে দিয়ে পুরো একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে দিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। এই সরকার এগুলো পরিকল্পিতভাবে করছে। শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার ব্যাপারটা না। একইসঙ্গে দার্শনিকভাবে এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করছে।

ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আজকে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধবংস করে দিয়েছে। আপনারা দেখছেন যে, পুলিশ কিছুদিন ধরে যে কাজটা করছে। এই যে ঢাকা কলেজ এবং নিউ মার্কের্টের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে সংঘর্ষ হলো, ২ জন প্রাণ দিলেন। এটাতে পুলিশ প্রথমে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে একজনকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠালো। অথচ গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এর জন্য মূলত দায়ী হচ্ছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা, যারা অস্ত্র হাতে নিয়ে আক্রমণ করেছে এবং ওই দুজনকে হত্যা করেছে। কলাবাগানে যে পার্ক দখল, বাচ্চাদের যে ফুটবল খেলার মাঠ সেই মাঠ দখল সেখানে থানা বানাচ্ছে। এ রকম অসংখ্য ঘটনা। আজকে সারা বাংলাদেশে মানুষের কোনো রকমের নিরাপত্তা তো দূরের কথা, কী করে তাদের আরও বেশি করে হয়রানি করা যায় সেই ঘটনাগুলো চলছে, বলেন তিনি।

ফখরুল আরও বলেন, পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিকে ধবংস করা হচ্ছে, বিরোধী রাজনীতিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হচ্ছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একসঙ্গে ৬টা জায়গা বোমা মারা মামলা আছে। এই যে মিথ্যাচার, এই যে ভয়াবহভাবে পুরো রাজনীতিকে বিনষ্ট করে দেওয়া এটা আওয়ামী লীগ শুরু করেছে। আমরা সেই কারণে সব সময় বলি আওয়ামী লীগ প্রকৃতপক্ষে জনগণের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান নিয়েছে, রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সে জন্য আজকে শের-ই-বাংলা একেএ ফজলুল হক আমাদের কাছে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। আমাদের মূল জায়গাটা আমরা বুঝি, আমাদের মূল অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য কাজ করতে পারি তা হলে আমরা অবশ্যই সেই জায়গা সফল হওয়ার চেষ্টা করতে পারবো।