অলিম্পিকে অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখেন জাকিয়া  

  মুন্সীগঞ্জ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:১২ |  আপডেট  : ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২১:১৪

৩৯তম জাতীয় জুনিয়র (বয়স ভিত্তিক) এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় লৌহ গোলক নিক্ষেপ ইভেন্টে স্বণর্ পদক জয়ী জাকিয়া সুলতানার স্বপ্ন অলিম্পিকে কোয়ালিফাই এবং জাতীয় পর্যায়ে নতুন রেকর্ড গড়ার মাধ্যমে আরো সাফল্য অর্জন করা।

সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের চন্দনধুর গ্রামের জামাল তালুকদারের কণ্যা জাকিয়া সুলতানার ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক ছিল। মালখানগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই মাঠের সাথে জাকিয়ার সখ্যতা গড়ে উঠে।

অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম তাকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আন্ত:স্কুল প্রতিযোগিতায় জেলার গন্ডি ছাড়িয়ে ২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে জাতীয় প্রতিযোগিতায় লৌহ গোলক, বর্ষা  এবং চাকতি নিক্ষেপে সাফল্য অর্জন করে সবার নজড়ে আসেন জাকিয়া।

সেখান থেকেই সুযোগ আসে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ এ্যাথলেটিকস ফেডারেশন আয়োজিত অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের। প্রথমবার জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়েই লৌহ গোলক নিক্ষেপে ১ম এবং চাকতি নিক্ষেপে ৩য় স্থান অর্জন কনে জাকিয়া। ২০২৪ সালে জাতীয় জুনিয়র (বয়স ভিত্তিক ) এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় বর্ষা নিক্ষেপে ৩য়, লৌহ  গোলক নিক্ষেপে ২য় স্থান অর্জন করেন। এ বছর ৩৯তম জাতীয় জুনিয়র (বয়স ভিত্তিক) এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় লৌহ গোলক নিক্ষেপ ইভেন্টে স্বণর্ পদক জয় করে। কোন প্রকার একাডেমিক প্রশিক্ষণ ছাড়া সামনের দিকে এগিয়ে যাবার অদম্য ইচ্ছাই জাকিয়াকে আজকের সাফল্য এনে দিয়েছে।

প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা জাকিয়া সুলতানা জানান, তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বড় বোনের বিয়ে  হয়ে গেছে। মেঝ বোন শারীরিক প্রতিবন্ধি। বাবা ২০০৯ সালে মারা গেলে অভাবের সংসারে তিন মেয়েকে নিয়ে মা নাসিমা বেগম চলে আসে নানা বাড়ী। সেখানে থেকেই মালখানগর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। হাঁস-মুরগি পালন করে আর মামাদের আর্থিক সহায়তায় সংসার চালায় মা।

সংসারের অভাব অনটনের পিছুটান জাকিয়াকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অভাব অনটনের মধ্যেও জাকিয়া খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। আগামীতে খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাবার ইচ্ছা রয়েছে। বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক নিত্যা নন্দ ভক্তের কাছে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

জাকিয়া আরো জানান মা এবং বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌসের অনুপ্রেরণায় এতদুর আসতে পেরেছে। বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষক মোঃ মঞ্জুরুল আলম স্যার পড়াশুনা সহ খেলাধুলার ক্ষেত্রে সবসময় সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

ক্রীড়া শিক্ষক নিত্যা নন্দ ভক্ত বলেন, ৮ম শেণিতে থাকাকালীন সময় থেকেই জাকিয়া লৌহ গোলক, বর্ষা এবং চাকতি নিক্ষেপে থানা এবং জেলা পর্যায় ভালো করে আসছিল। তখন থেকেই কিছু নিয়ম কানুন শিখেয়ে আসছি । জাকিয়া একা একাই অনুশীলন করেছে। প্রধান শিক্ষক মোঃ মঞ্জুরুল আলম বলেন লেখাপড়া এবং খেলাধুলার প্রতি জাকিয়া ছিল আন্তরিক। জাকিয়ার মা সবসময়ই পড়াশুনার খোজ খবর নিতেন। চিন্তা ছিল জাকিয়াকে নিয়ে, অভাবের সংসারে মেয়ে লেখাপড়ায় ভালো করতে না পারলে সংসারে অন্ধকার নেমে আসবে।

৩৯ তম জাতীয় জুনিয়র (বয়স ভিত্তিক) এ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় গোলক নিক্ষেপ ইভেন্টে স্বণর্ পদক জয়সহ বিগত কয়েক বছর সাফল্য অর্জন করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাকিয়াকে খেলোয়াড় কোটায় চাকুরী দেবার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে রেকর্ড ভেঙ্গে ক্যারিয়ারকে আরো অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে যেতে আশাবাদী জাকিয়া। তারই ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে অলিম্পিকের মঞ্চে দেশের পতাকা উড়ানোর ইচ্ছা রয়েছে জাকিয়ার।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত