অপহরণ মামলায় রহস্যের জাল উন্মোচনের আশ্বাস

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২:১৭ |  আপডেট  : ১৩ মার্চ ২০২৫, ১৬:৪৭

আট বছর আগে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই ভোরে রাজধানীর শ্যামলীর রিং রোডের ১ নম্বর হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও কবি ফরহাদ মজহার।

পরে স্ত্রীকে নিজের মোবাইল ফোনে জানান, কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাকে মেরেও ফেলা হতে পারে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয়বার কল করে তার স্ত্রী বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারকে ফোন করে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে মোবাইল ট্র্যাকিং করে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এবং ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগরে হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে।

এই অভিযোগে ওইদিনই রাজধানীর আদাবর থানায় অপহরণ মামলা করেন ফরিদা আখতার।

এরপর মামলার তদন্ত শেষে একই বছরের ৩১ অক্টোবর অপহরণের সত্যতা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাহাবুবুল ইসলাম। একই সঙ্গে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ও হয়রানির অভিযোগে দণ্ডবিধির ২১১ ও ১০৯ ধারায় মামলার ভুক্তভোগী ফরহাদ মজহার ও বাদী ফরিদা আখতারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মামলার অনুমতি চান তদন্ত কর্মকর্তা।

অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেওয়ার জন্য সময়ের আবেদন করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ। শুনানি শেষে ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর সকালে বাদীপক্ষের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।

কিন্তু বিকেলে সে আবেদন নামঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম খুরশীদ আলমের আদালত। একইসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন মঞ্জুর করে বাদীপক্ষের (ফরহাদ মজহার-ফরিদা) বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মামলার অনুমতি দেন।

পরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপহরণ মামলা করার অভিযোগে পুলিশের প্রসিকিউশন মামলা আমলে নেন ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। একইসঙ্গে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর ফরহাদ মজহার ও মামলার বাদী তার স্ত্রী ফরিদা আখতারকে সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম সুব্রত ঘোষ শুভ। ফলে অপহরণের পর মামলা করে নিজেরাই আসামি হন ফরহাদ মজহার ও ফরিদা আখতার।

এদিকে তদন্ত কর্মকর্তার দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষের নারাজি নামঞ্জুরের ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটির পুনরায় তদন্ত চেয়ে একটি রিভিশন মামলা করে বাদীপক্ষ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সম্প্রতি সেই রিভিশন মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে মামলায় বাদীপক্ষের (ফরহাদ মজহার-ফরিদা) নারাজির ওপর পুনরায় শুনানির আদেশ দেন ঢাকার দশম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রেজাউল করিম।

গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) শুনানি শেষে বাদীপক্ষের নারাজি গ্রহণ করে অপহরণ মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মিনহাজুর রহমান। একইসঙ্গে এ মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে আগামী ২৭ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ফলে ফরহাদ মজহারকে অপহরণ রহস্য উন্মোচনের আশা দেখছে বাদীপক্ষ। এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ বলেন, তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের লোকজন ফরহাদ মজহারকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু অপরাধীদের বাঁচাতে মামলাটির সঠিক তদন্ত না করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ডিবি পুলিশ। একইসঙ্গে ভুক্তভোগী ও বাদীকে আসামি করে প্রসিকিউশন মামলা করা হয়। এখন আদালত পুনরায় মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করছি এবার রহস্যের জাল উন্মোচিত হবে এবং দোষীরা আইনের আওতায় আসবে।

 

সা/ই

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত