’৭১ সালের পর প্রথম ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ‘নিরাপত্তা মহড়ার’ নির্দেশ

প্রকাশ: ৬ মে ২০২৫, ১৪:১৪ | আপডেট : ৬ মে ২০২৫, ২৩:৩৬

কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর টানা ১২ রাত ধরে গোলাগুলি হয়েছে। এছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাসহ নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে উভয় দেশ। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দেশটির বেশ কয়েকটি রাজ্যকে নিরাপত্তা মহড়া চালানোর নির্দেশ দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
এর আগে শেষবার এমন মহড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ১৯৭১ সালে। মঙ্গলবার (৬ মে) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই এবং সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
পিটিআই’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগামীকাল বুধবার যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এই মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষকেও মহড়া দেওয়া হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে এই মুহূর্তে ভারত সরকারের এই পদক্ষেপের তাৎপর্য বেশ গভীর বলে মনে করা হচ্ছে। এর কারণ, ভারতে সর্বশেষ এমন মহড়া হয়েছিল ১৯৭১ সালে। সেইসময় ভারত ও পাকিস্তান দুই ফ্রন্টে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। তখন ভারতজুড়ে সতর্কতা জারি ছিল।
গতকাল ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ-প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে কী করণীয় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যে সব প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বাজলে কী করণীয়, বেসামরিক নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ, হঠাৎ ব্ল্যাক আউট হলে কিংবা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রয়োজন পড়লে কী করতে হবে সেসব বিষয়ও রয়েছে।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া, মানুষ সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হালনাগাদ ও অনুশীলন, রাজ্যগুলোর সিভিল ডিফেন্সেরও উদ্ধারকাজ সংক্রান্ত মহড়াও এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এরই মধ্যে ভারতের পাঞ্জাবের ফিরোজাবাদে গত সপ্তাহে রাতে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আধ-ঘণ্টার ব্ল্যাকআউট মহড়া হয়েছে। মহড়ার জন্য সেনা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখার অনুরোধ করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মহড়ার উদ্দেশ্য যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ব্ল্যাকআউট কৌশল প্রয়োগের প্রস্তুতি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মিরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। অধিকৃত কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের এই হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
এছাড়া ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
এই পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তান গত শনিবার “আবদালি” ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে। ভারতের কর্মকর্তারা এটিকে “খোলামেলা উসকানি” বলে মন্তব্য করেছেন। ৪৫০ কিমি রেঞ্জের এই ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তান “সিন্ধু মহড়ার” অংশ হিসেবে পরীক্ষা করেছে বলে জানিয়েছে।
এছাড়া ভারতের সঙ্গে চলমান তীব্র উত্তেজনার মাঝে সোমবার ফের আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায় পাকিস্তান। আর এর মধ্যেই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে মহড়া চালানোর নির্দেশ দেওয়া হলো।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত