৪০ বছরের গাছকে শতবর্ষী বটগাছ বানিয়ে লংকাকান্ড

  এসআর শফিক স্বপন  মাদারীপুর 

প্রকাশ: ৭ মে ২০২৫, ১৭:৪৩ |  আপডেট  : ৮ মে ২০২৫, ০৯:০৮

মাদারীপুরে কথিত শতবর্ষী বটগাছ কাটা নিয়ে লংকাকান্ড। বাড়ি করার জন্য গাছটি বিক্রি করলে ক্রেতারা গাছটি কাটা শুরু করলে এ লংকাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাভিঃশ্বাস উঠার অবস্থা। করা হয়েছে ৩ সদস্যের কমিটি।বুধবার দুপুরে  যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন বিভাগ ও জমি এবং গাছের মালিক।

জানা যায়, মাদারীপুরের সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরের কান্দি গ্রামে হান্নান হাওলাদাদের পতিত জমিতে একটি বটগাছ হয়। গাছটি বড় হলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে মাঝে মাঝে পুজা করতো। ধীরে ধীরে বটগাছটির অলৌকিক ক্ষমতা আছে বলে প্রচার হয়ে যায়। এই গাছে মোমবাতি জ¦ালিয়ে এবং লাল কাপড় বাধলে মনের আশা পূরণ হয় বলেও প্রচার হয়। এরপর এখানে হিন্দুদের সাথে সাথে মুসলিম অনেকে মোমবাতি জ¦ালাতো এবং লাল কাপড় বেঁধে দিত গাছে। গাছটির মালিক হান্নান হাওলাদার বাড়ি করার উদ্দেশ্যে জমিটি পরিস্কার করার জন্য এই গাছটি স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে ১৫০০ টাকায় বিক্রি করে দেয়। সেই ব্যক্তি গাছটি কিনে স্থানীয় মাদ্রাসায় দান করে দেয় যাতে এই গাছটি কেঁটে লাকরি করে মাদ্রাসার রান্না করতে পারে। ৫ এপ্রিল সকালে গাছটি কাঁটতে যায় মাদ্রাসার হুজুর ও ছাত্ররা। তখনই কেউ একজন ভিডিও করে গাছটি শতবর্ষী এবং অলৌকিক ক্ষমতার কথা লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। মূহুর্তে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে গাছ কাঁটা বন্ধ করে দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বন বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করে। আলোচনা সমালোচনায় মূখর হয়ে উঠে পুরো জেলা। গণমাধ্যমগুলেতে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হতে থাকে। পরে বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলা প্রশাসন ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে। ৭ এপ্রিল উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বন বিভাগ ও গাছ ও জমির মালিক উপজেলার হলরুমে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে। ব্যাখ্যা করেন পুরো বিষয়।

সংবাদ সম্মেলনে মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা ঘটনার তদন্ত করে দেখেছি। গাছটিও পর্যালোচনা করা হয়েছে। শতবর্ষী দাবি করা হলেও মূলত গাছটির বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছর। যেহেতু গাছটি ব্যক্তিমালিকানাধীন তাই মালিক চাইলেই গাছটি বিক্রি বা নিজে কেঁটে ফেলতে পারেন। এতে আইনী কোন ব্যপ্তয় ঘটবেনা।

জমির মালিক হান্নান হাওলাদার বলেন, আমি ঐ জমিতে বাড়ি করবো। এই গাছটি জমির বেশিরভাগ জায়গা দখল করে আছে। তাই জমিটি ঘর করার উপযুক্ত করতে গাছটি ১৫০০ টাকায় বিক্রি করে দেই।

সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সদর সার্কেল চাতক চাকমা বলেন, উপজেলা প্রশাসন যে কমিটি করেছে তার রিপোর্ট আসার পর সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে আমরা আইনীব্যবস্থা নিব। অহেতুক মিথ্যা ভিডিও ছড়িয়ে কেউ যদি অরাজকতা সৃষ্টি দুরসন্ধি করে তাহলে যে ভিডিও ছড়িয়ে তাকেও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, বাড়ির করার জন্য বা যে কোন প্রয়োজনে নিজের জমির গাছ জমির মালিক কাঁটতে পারে। এ বিষয়টিকে কেউ ভুলভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে যদি ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় সেটাও অন্যায়। আমরা তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নিব।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত