২৬ টুকরো লাশ: প্রেমের ফাঁদ, অন্তরঙ্গ ভিডিও করে টাকা আদায় ছিল উদ্দেশ্য : র‌্যাব

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৫৬ |  আপডেট  : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৩১

রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ১০ লাখ টাকা আদায় করতে চেয়েছিল বন্ধু জরেজুল ইসলাম ও তার প্রেমিকা শামীমা আক্তার ওরফে কোহিনুর [৩৩)। এ জন্য এক মাস আগে আশরাফুলের সঙ্গে মিথ্যা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন শামীমা। পরে তাকে ঢাকায় এনে খুন করে লাশ ২৬ টুকরো করেন জরেজ মিয়া ও শামীমা।আজ [শনিবার) কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।

ফায়েজুল আরেফীন বলেন, ১৪ নভেম্বর সকালে কুমিল্লার লাকসামের বড় বিজরা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে শামীমা আক্তারকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩। গত ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় ব্যবসায়ী আশরাফুল হক তার ব্যবসা সংক্রান্ত পাওনা আদায়ের লক্ষে একই গ্রামের বাসিন্দা বন্ধু জরেজুল ইসলামের সাথে রংপুর থেকে ঢাকায় রওনা দেন। পরদিন সকাল থেকে আশরাফুলের পরিবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পায়। পরবর্তীতে গত ১৩ নভেম্বর হাইকোর্টে পানির পাম্প সংলগ্ন দুইটি নীল রংয়ের ড্রামের ভেতর অজ্ঞাত নামা পুরুষের ২৬ খণ্ডের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আঙ্গুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে সিআইডি নিশ্চিত হয় লাশটি নিখোঁজ ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের।

তিনি বলেন, ওইদিন রাতেই নিহতের বোন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় আশরাফুলের বন্ধু জরেজুল ইসলামকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে এই ঘটনায় তদন্তে নেমে জরেজুলের প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে নিহত আশরাফের রক্তমাখা সাদা রংয়ের পায়জামা-পাঞ্জাবীসহ হত্যার কাজে ব্যবহৃত দড়ি, স্কচটেপ, একটি গোলগলা গেঞ্জি এবং একটি হাফ প্যান্ট একটি বস্তার ভিতর মুখবাঁধা অবস্থায় শনির আখড়ার নূরপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, শামীমার সঙ্গে জরেজের এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জরেজ শামীমাকে জানায়, তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে। জরেজ এই টাকার ৭ লাখ টাকা নেবে, আর শামীমা ৩ লাখ টাকা পাবে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা নিহত আশরাফুল ইসলামের সাথে একমাস আগে থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ শুরু করে তার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। মোবাইল ফোনে তাদের নিয়মিত অডিও এবং ভিডিও কলে কথা চলতে থাকে। পরবর্তীতে গত ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় জরেজ ভিকটিম আশরাফুলকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হন। ঢাকায় আসার পর গত ১২ নভেম্বর জরেজ ও আশরাফুল শামীমার সাথে দেখা করে ঢাকার শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাসা ভাড়া করে তিনজন একত্রে ভাড়া বাসায় ওঠেন।

ফায়েজুল আরেফীন বলেন, রংপুর থেকে ঢাকায় আসার আগে জরেজ তার প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে ফোনে জানান, আশরাফুলের সাথে সে যেন অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে এবং সেই ভিডিও দেখিয়ে যাতে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগী আশরাফুলকে মালটার শরবতের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হালকা অচেতন করেন শামীমা। যাতে বাইরে থেকে জরেজ অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও ধারণ করলে আশরাফুল তা বুঝতে না পারে। পরবর্তীতে যখন তারা একান্ত সময় কাটায় তখন জরেজ বাইরে থেকে ভিডিও ধারণ করেন। ওই ভিডিও শামীমার মোবাইলে ধারণ করা হয়, যা বর্তমানে উদ্ধারকৃত মোবাইলে রয়েছে।

শামীমার বরাত দিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, গত ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ আশরাফুলের হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেন। জরেজ অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করে উত্তেজিত হয়ে অচেতন থাকা ভিকটিম আশরাফকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। অতিরিক্ত আঘাত এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকানো থাকায় শ্বাস না নিতে পেরে ঘটনাস্থলেই আশরাফুল মারা যায়।  

তিনি আরও জানান, আশরাফুলের মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্য গত ১৩ নভেম্বর সকালে জরেজ নিকটস্থ বাজার থেকে চাপাতি ও ড্রাম কিনে আনে। জরেজ চাপাতি দিয়ে লাশ ২৬ টুকরা করে দুইটি নীল রংয়ের ড্রামে ভরে রাখে। পরবর্তীতে দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রাম দুটি সিএনজিতে নিয়ে দুপুর ২টা ৫২ মিনিটে বাসা থেকে রওনা করে। পথিমধ্যে তারা ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা চিন্তা করে সিএনজি পরিবর্তন করে অন্য একটি সিএনজিতে রওনা হন। দুপুর ৩টা ১৩ মিনিটে হাইর্কোট মাজার গেইটের নিকট এলে রাস্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে লাশভর্তি ড্রামদুটি হাইকোর্টের পানির পাম্প সংলগ্ন প্রধান সড়কের পাশে একটি বড় গাছের নিচে ফেলে তারা অতিদ্রুত হাইকোর্ট এলাকা থেকে একটি অটো যোগে সায়েদাবাদ চলে যান। সায়েদাবাদ যাওয়ার পর জরেজ শামীমাকে কুমিল্লায় তার নিজ বাড়িতে চলে যেতে বলেন এবং তিনি রংপুরে তার নিজের বাড়িতে চলে যাবে বলে শামীমাকে জানায়। সে অনুযায়ী শামীমা কুমিল্লায় তার নিজ বাড়িতে যান এবং জরেজের সাথে  যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

তিনি আরও জানান,  শামীমার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্লাকমেইল করে টাকা উপার্জন করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। তবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে পূর্ব শত্রুতা আছে কি না তা মূল আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসা জানা যাবে।উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে এই হত্যাকান্ডের মূল আসামি জরেজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত