সৃষ্টি হোক সৌভ্রাতৃত্বের পরিবেশ
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২১, ১৬:৩৮ | আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৩
দেশের রাজনীতিতে এ মুহূর্তে স্বস্তিকর খবর হলো, আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন করেছে। ১৯৭১ সালে এ দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালিন রেসকোর্স ময়দানে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অন্যতম মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু ওই জনসমুদ্রে জাতিকে পরবর্তী দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে কথা সবার জানা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠির ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা তথা বাঙালির ন্যায্য অধিকারকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্রএদেশের মানুষকে সেদিন ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। সেদিনের সে ভাষণে বঙ্গবন্ধু ‘আমাদের এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, মূলত সেটাই ছিল আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা। পরবর্তীতে ২৫ মার্চের রাতে পাক হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহ এবং চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তার স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আমাদের স্বা:ধীনতা সংগ্রামের প্রাণপুরুষ। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জুলুম-নির্যাতন এবং পূর্ব-বাংলার মানুষের ন্যায্য অধিকার হরণের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক অনেক নেতাই বিভিন্ন সময়ে সোচ্চার হয়েছেন, জাতিকে মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন। কিন্তু এক পর্যায়ে এসে বঙ্গবন্ধু পরিণত হন এদেশের একচ্ছত্র নেতায়। তাঁর নির্দেশে এদেশের মানুষ পথে নেমেছে, গতি-প্রকৃািত পরিবির্তিত হয়েছে রাজনীতির। ১৯৭১-এ এসে তা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে।
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণের রয়েছে ঐতিহাসিক ভূমিকা ও তাৎপর্য। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সে ভাষণ নিছক একটি রাজনৈতিক ভাষণই ছিল না, ছিল একটি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের পথনির্দেশ। তাঁর সে ভাষণ এদেশের াাবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, সর্বোপরি সর্বস্তরের মানুষকে মুক্তির লড়াইয়ে শামিল হতে অনুপ্রণিত করেছিল। আজ সে ভাষণ জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃত। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য আত্মশ্লাঘার ব্যাপার। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক সংকীর্ণতার কারণে তা নিয়ে অনর্থক বিতর্ক চলে আসছিল দীর্ঘদিন যাবত। এবার বিএনপি কর্তৃক ৭ মার্চ পালনের মধ্য দিয়ে সেসব কূটবিতর্কের অবসান হবে- দেশবাসী সেটাই প্রত্যাশা করে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিএনপি ১০ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসও পালন করবে। এটাকে শুভলক্ষণ না বলে উপায় নেই। জাতীয় যে ইস্যুগুলো নিয়ে এতদিন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভেদ-বিসম্বাদ চলে আসছিল, বিএনপির এ ইতিবাচক সিদ্ধান্তে তার অবসান হবে, এটা আশা করা নিশ্চয় উচ্চাশা নয়। বরং ঐতিহাসিক সত্যকে বিলম্বে হলেও স্বীকার করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপি যে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। সে সাথে জাতি আশা করে, তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে একটি চরম বাস্তবতাকে মেনে নেবে। আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধু কোনো দল বা গোষ্ঠীর সম্পদ নন। তিনি সমগ্র বাঙালি জাতির সম্পদ। তাঁকে জাতির পিতার আসনে অবিসংবাদিতভাবে বসালে কেউ ছোট হয়ে যাবে না। বরং তাতে আমরা সবাই মহিমান্বিত হবো।
বিএনপির এ ইতিবাচক সিদ্ধান্তের ফলে আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে যে রবরফ জমাট হয়েছিল, তা অচিরেই গলতে শুরু করবে, রাজনীতি সচেতন মহল তেমনটাই মনে করেন। তবে সে বরফ গলানোর ক্ষেত্রে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি বিএনপির এ সিদ্ধান্তকে উদার মনে গ্রহণ করে পারষ্পরিক সৌহার্দ্য স্থাপনের ক্ষেত্রকে উপযেগী করে তোলার ব্যাপার এগিয়ে না আসে, তাহলে কাক্সিক্ষত ফল নাও আসতে পারে। বিএনপির ৭ মার্চ পালন বা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে স্বাগত না জানিয়ে আওয়ামী লীগ যদি কটাক্ষ করতে থাকে, তাহলে সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ সোনার হরিণ হয়েই থেকে যাবে।
বিএনপি কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটি পালনের মধ্য দিয়ে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরাজমান দূরত্ব কমে আসবে, সৌভ্রাতৃত্বের পরিবেশ সৃষ্টি হবে, সচেতন দেশবাসী সেটাই প্রত্যাশা করে। তাদের সে প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপদানের দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বের। তারা সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন, আমরা সেটাই আশা করি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত