সিরাজদিখানে মামলা দায়েরের ১২ দিনেও আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ! 

  লিটন মাহমুদ,মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশ: ৮ আগস্ট ২০২২, ১৩:২২ |  আপডেট  : ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৮

পরিবারে একমাত্র কর্মক্ষম ছেলে জনি শেখ (২৪)। ছোট বয়স থেকেই বাবার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরে খরচ যোগান দিতে কাজে লেগে যান। ট্রাক চালকের কাজ করে মাসে যা আয় হতো তা দিয়েই সংসারের খরচ যোগান দিয়ে আসছিলেন জনি। পূর্ব শত্রুতার জেরে গত ২৩ জুলাই শনিবার দিবাগত রাত অনুমান সাড়ে ১১ টার দিকে পূর্ব রাজদিয়া গ্রামের মোশারফ শেখের ছেলে ট্রাক চালক জনি শেখকে বাড়ী সংলগ্ন রাজদিয়া আব্দুল জাব্বার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে রাত ভর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে পরদিন ২৪ জুলাই রবিবার ভোরে মুমূর্ষ অবস্থায় বাড়ীর সংলগ্ন রাস্তায় ফেলে  যায় সন্ত্রাসীরা।

 এ ঘটনায় জনি শেখের মাতা ভুক্তভোগী মোসাঃ রেশমা বেগম বাদী হয়ে মূল অভিযুক্ত  বড় পাউলদিয়া গ্রামের মাইনুদ্দিন দেওয়ানের ছেলে  মালয়েশিয়া প্রবাসী  রবিন দেওয়ানকে একমাত্র এজাহার নামীয় আসামী ও ৩-৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে (সিরাজদিখান থানার মামলা নং-১৮) মামলা দায়ের করলেও ঘটনার সাথে জড়িত আরো বেশ কয়েকজনের নাম ভুক্তভোগী জনি শেখের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। এদিকে মামলার ১১ দিন অতিবাহিত হলেও কোন আসামী গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ। 

বিজ্ঞাপণ

ভুক্তভোগী জনি শেখ অভিযোগ করে বলেন, "ঘটনার দিন রাত ইয়াছিন আমাকে কাজ আছে বলে তার সাথে রেখে বাড়িতে যেতে না দিয়ে তার সাথে সাথে রেখেছে। আমি তিনবার বাড়িতে যেতে চাইলে সে যেতে দেয় নি। পরে সে রাত অনুমান সাড়ে ১১ টার দিকে রাজদিয়া ক্লাবের সামনে মোটর সাইকেল থেকে নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার পর পরই দুটি মাইক্রো এসে আমার সামনে থামে। গাড়ির ভিতরে থাকা লোকজন আমার চোখে লাইটের আলো ধরে রাখে। এসময় কেউ একজন পিছন থেকে  আমার পিঠে আঘাত করলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। যখন জ্ঞান ফিরে তখন রবিন বলে তোকে জানে মারলাম না। তোর লাইফ নষ্ট করে দিলাম। যাতে আজীবন আমাকে মনে রাখস। আমাকে মারধরের ঘটনার সাথে ইয়াছিন বেপারী ও মেম্বার হিরা জড়িত। কারণ গাড়ীর ভিতরে রবিনকে ইয়াসিন ও হিরার কথা বলতে শুনেছি। ওরা দুইজন গোপন থেকে এঘটনায় জড়িত ছিলো। আমি তাদের বিচার চাই।"

শনিবার সরেজমিনে  জনি শেখের বাড়ীতে গিয়ে জানা যায়,  ঘটনার পর থেকে ঢাকার পঙ্গু ও হৃদরোগ হাসপাতাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ১১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার গুরুতর আহত জনি শেখকে চিকিৎসা শেষে সাময়িক সময়ের জন্য তার নিজ বাড়িতে আনা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের মারধরে জনির বাম হাতের কনুই ও কবজিমসহ বাম পায়ের হাটুর উপরের অংশ  এবং মেরুদন্ডের মাঝ বরাবর দুটি হাড় ভেঙে গেছে। জনির পরিবার বলছে, যেভাবে তাকে মারধর করা হয়ে়ছে তাতে তার জীবনে কর্মক্ষমতা হারিয়ে গেছে। জনি শেখের পুরোপুরি সুস্থ্যতা লাভ করা নিয়েও পরিবারের মাধ্য সংশয় রয়েছে। আসামী পক্ষের লোকজন প্রভাবশালী ও বিত্তবান হওয়ায় জনির পরিবারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠ বিচার পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের কথা জানিয়েছেন। এদিকে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাদী রেশমা বেগম। এজাহারে বর্ণিত আসামীর অবস্থান ও উপস্থিতি জানানোর জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বারংবার ফোন করেও পাননি। মামলা দায়েরের পর থেকে ১১ দিনে এ পর্যন্ত একবার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেখা পেয়েছেন। সংসারে একমাত্র কর্মক্ষম ছেলে হাত পা ভেঙে ঘরে শুয়ে থাকার কারণে জনির পরিবার অসহায় হয়ে পরেছে। 

মামলার বাদী রেশমা বেগম বলেন, "ওরা আমার ছেলেকে বাড়ীতে আনার পর গত রাতে ইয়াছিন বেপারী ও মেম্বার হিরা লোকজন নিয়ে এসে হুমকি ধমকি দিয়ে গেছে। আমরা রবিনকে দেখে ধরার জন্য দারগা সাদ্দামকে অনেকবার ফোন দিয়েছি সে ফোন ধরে নাই। এ পর্যন্ত দারগা একবার এসেছে। ওরা আমার ছেলেকে মেরে কয়েক জায়গার হাড় ভেঙে দিয়ে ছেলের জীবনটাই নষ্ট করে দিয়েছে। আমি ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।" 

বিজ্ঞাপণ

অভিযুক্ত ইয়াছিন বেপারীর কাছে এ ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত না।  তাকে যখন মেরে ফেলে রেখে গেছে তখন থেকে এ পর্যন্ত আমি তার চিকিৎসার জন্য পাঠাইছি। মানুষের কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে দিয়েছি। সব দিক থেকে তাকে সাহায্য করেছি।এখন সে যদি আমার নাম বলে তাহলে আমার কিইবা করার আছে।"

 ইছাপুরা ৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোঃ হিরা বলেন, "আমি এর মধ্য জড়িত না ,আমি কোন ঝামেলায় নাই। মেম্বার হিসেবে যতটুকু করা দরকার ততটুকুই করেছি। আমিও চাই যারা জড়িত তাদের বিচার হোক।"
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিরাজদিখান থানার  এসআই সাদ্দাম মুঠোফোনে বলেন, "মামলাটি তদন্ত চলছে। এখনো পর্যন্ত কোন আসামী গ্রেফতার হয় নাই।"

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত