সিরাজদিখানে থামছে না ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব

  লতা মন্ডল,সিরাজদিখান (মুন্সগিঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২১, ১৯:০৪ |  আপডেট  : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:২৪

মুুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানে কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব। বন ও পরিবেশ আইন অমান্য করে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়  প্রশাসন ও আইনশৃংখলাবাহিনী ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে একটি চক্র দেদারছে মাটি কেটে বিক্রি করলেও কোনো আইনি পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রশাসনের। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা আদায় করলেও তা আমলে নিচ্ছেন না মাটি ব্যবসায়ীরা। 

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে আইন অমান্য করে এস্কেভেটর (ভ্যাকু) দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল কাটা হচ্ছে। ফসলি জমির মাটির বেশিরভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে ইটভাটায়। উপজেলার লতব্দী, খিদিরপুর,বালুচর,বাসাইল ও কুচিয়ামোড়া গ্রামে রয়েছে ৫০-৫৫টি ইটভাটা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ফসলি জমির টপসয়েল কেটে ট্রাক দিয়ে এসব ভাটায় ইট প্রস্তুুতের জন্য মাটি জমা করা হচ্ছে। একইভাবে মাটির টপসয়েল কেটে উপজেলার লতব্দী, খিদিরপুর কয়রাখোলা, রামকৃষ্ণদী, বালুচর, পাথরঘাটা, কুচিয়ামোড়াসহ ৫৫টি ইটভাটায় মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণির দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে ফসলি জমির মাটি বিক্রিতে উৎসাহিত করছেন। আর কৃষকরা লোভে পড়ে নগদ টাকার আশায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দেন। ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে অনেক জমিই ডোবায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিমত, প্রতিবছর শত একর ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। যার কারণে দিন দিন আবাদী জমির পরিমাণ  হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে। 

এলাকার কৃষকেরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জোরপূর্বক মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন। ভুক্তভোগী মাহবুবুর রহমান রন্টু,সার্জেন্ট(অবঃ) মোঃ কবির হোসেন সরকার,অবসরপ্রাপ্ত আর্মি মিজানূর রহমান সরকার,ফ্রান্স আওয়ামীলীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন জমির মালিক ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লতব্দী ও বাসাই ইউনিয়নের  রামকৃষ্ণদী মৌজায় কৃষকদের নামমাত্র মূল্য দিয়ে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। তাদের অনুমতি ছাড়াই জমির উপর দিয়ে ভেকু,মাহেন্দ্র ও ড্রামট্রাকদিয়ে জমির মাটি নেওয়ার রাস্তা তৈরী করেছে। আবার অনেককে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এসব মাটি সরাসরি চলে যাচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন ইটভাটায়। প্রশাসনের চোখের সামনে মাটিসন্ত্রাস হলেও ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা জড়িত বলে ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এর প্রতিতবাদ জানাচ্ছে। প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান করলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে তিন ফসলি জমিকেও পুকুর বানাচ্ছে মাটিসন্ত্রাসীরা। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, সিরাজদিখান লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর চকে খননযন্ত্র দিয়ে আট-দশ ফুট গভীরতায় ফসলি জমির মাটি কেটে ট্রাকে বোঝাই করা হচ্ছে। খননযন্ত্রের চালক আকাশ জানান, পাশের রামকৃষ্ণদী এলাকায় অবস্থিত ইটভাটায় মাটি নেওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় প্রশাসন জেল জরিমানা করার পর কিছু দিন বিরতি দিয়ে আবার পুরোদমে মাটি কাটার কাজ শুরু করেন মাটি ব্যবসায়ীরা। আবার অনেক মাটি ব্যবসায়ী কৌশল পরিবর্তন করে দিনের বদলে রাতের বেলায় ফসলি জমি কেটে সাবাড় করছেন। তাদের অভিযোগ গ্রামীন পাকা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মাটির ট্রাক চলাচলের কারণে সড়ক নির্মাণের দুই এক বছরের মধ্যে তা ভেঙে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘ফসলি জমির উপরিস্তরের ছয় ইি  গভীরতায় মাটি কেটে নিলে উর্বরতা নষ্ট হয়। এর পর যে মাটি থাকে, তাতে ফলন ভালো হয় না। প্রতিবছর লতব্দীতে ৫ থেকে ৬ শতাংশ আবাদযোগ্য জমি কমছে। 

সিরাজদিখান সহকারী কমিশনার ( ভূমি) আহম্মেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, সরকারি জায়গার মাটি কাটার জন্য জরিমানা করছি । অনেক সময় মালিক মাটি বিক্রি করলে আইনিভাবে তাঁদের করার কিছু নেই। 

মুন্সীড়গঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নয়ন মিয়া বলেন, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ফসলি জমির মাটি কাটা অবৈধ। অভিযোগ পেলে  এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাটি কাটা বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এ ব্যাপারে সকল  শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত