সান্তাহার জংশনে কালোবাজারিদের হাতে ট্রেনের টিকিট, দুর্ভোগে যাত্রীরা
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২২, ১৫:৪৯ | আপডেট : ৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২১
টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের বেড়াজালে আবদ্ধ বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশন। শুধু সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট নয়, এখান থেকেই তারা নিয়ন্ত্রণ করছে পার্বতীপুর, দিনাজপুর, নাটোর, জয়পুরহাট, আক্কেলপুর ও প গড় রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট। কাউন্টারে টিকিট না মিললেও তিন থেকে চারগুণ দামে মিলছে ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট। এতে বিপাকে পড়েছেন ঈদের পর কর্মস্থলে ঢাকায় ফেরা ট্রেন যাত্রীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সান্তাহারের রেল যাত্রীদের মধ্যে।
সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন রোডে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঈদের পর কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে না মিললেও কালোবাজারিদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে। ঈদের আগেই বিক্রির কথা বলা হলেও কালোবাজারিদের হাত থেকে তিনগুণ অথবা চারগুণ দামে মিলছে টিকিট। শোভন চেয়ার ৩৬০ টাকার স্থলে ৭০০ টাকায়, এসি চেয়ার ৬৯০ টাকার স্থলে ১৫ শত থেকে ২ হাজার টাকায় মিলছে কালোবাজারিদের কাছ থেকে। এসব কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণ করছে রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট না থাকলেও দিনাজপুর ও পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন ও এর আশপাশে অবস্থানরত কালোবাজারিদের কাছ থেকে।
সান্তাহার জংশন স্টেশনে ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকাগামী ট্রেন যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীরা ঢাকামুখী ট্রেনের ভিড় ছিল দেখার মত। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্টেশনে থেকে ৭টি ট্রেন যাত্রী নিয়ে সান্তাহার হয়ে ঢাকা যাচ্ছে। তার মধ্যে কোনো ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে পৌঁছায় নি। তবে প্রতিটি ট্রেনেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। ভিড় ঠেলে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই ব্যস্ত ট্রেনে উঠতে। ঈদের ছুটি কাটিয়ে রাজধানী ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে। তবে ট্রেন যাত্রীদের সংখ্যা আসনের চেয়ে দ্বিগুন যাত্রী ছিল। ঈদের সরকারি ছুটির পর থেকে বিভিন্ন সরকারী ও বে-সরকারী অফিস খুলেছে।
ট্রেনযাত্রী ফারুক হোসেন জিকো অভিযোগ করেন, কাউন্টারে গিয়ে ট্রেনের টিকিট না মিললেও বাড়তি টাকা দিয়ে স্টেশনের বাইরে টিকিট পাওয়া যায়। দ্বিগুণ বা তার বেশি দাম দিলে কাউন্টারের সামনেই কালোবাজারিদের হাতে পাওয়া যায় সব শ্রেণীর টিকিট। ফলে বাধ্য হয়েই স্টেশনের বাইরে থেকে বাড়তি টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হয়।
স্টেশনে টিকিট কিনতে আসা সাব্বির আহম্মেদ বলেন, কাউন্টারে গেলে টিকিট নেই বলে বিদায় করে দেওয়া হয়। পরে স্টেশনের পাশে এক জনের সঙ্গে কথা বলে পাঁচটি টিকিট অতিরিক্ত দাম দিয়ে তার কাছ থেকে কিনি।
সাবেক কাউন্সিলর জিআরএম শাহাজাহান বলেন, ট্রেনের টিকিট না পাওয়ার প্রধান কারণ কালোবাজারিদের হাতে টিকিট চলে যাওয়া। মূলত দুই ভাবে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের হাতে যাচ্ছে। আমাদের প্রচলিত অনলাইনে টিকিট কাটার সিস্টেমে যে কেউ প্রতিদিন এনআইডি/ফোন নম্বর ব্যবহার করে টিকিট অনলাইন থেকে কিনতে পারে। এসব টিকিট পরে বেশি দামে বিক্রি করছে তারা। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন সকালে কালোবাজারিদের নিদিষ্ট লোকজন টিকিট কাউন্টারের এসে লাইনে দাঁড়িয়েও কাউন্টারের টিকিট ক্রয় করেন। ফলে অনেক ট্রেন যাত্রী লাইনে দাড়িয়েও টিকিট পায় না।
সান্তাহার ট্রেন যাত্রী আলমগীর হোসেন সাথে টিকিট কাউন্টারের কথা হলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, টিকিট কাউন্টারের টিকিট পাওয়া যায় না। সেই টিকিটগুলো অনেক বেশি দামে কাউন্টারের আশেপাশে বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায়। তিনি রংপুরের ট্রেনের এসি সিগ্ধা ১টি টিকিট ১৫ শত টাকায় কিনেছেন। কাউন্টারের ৩ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তাকে টিকিট দেওয়া হয়নি। কাউন্টার থেকে বলা হয়েছে টিকিট শেষ হয়ে গেছে। অথচ তিনি লাইনে ৩ নাম্বার সিরিয়ালের যাত্রী ছিলেন। তাহলে টিকিট কেমন করে শেষ হয় আপনারা বলেন ?
এ বিষয়ে সান্তাহার রেলস্টেশনের স্টেশন মাষ্টার রেজাউল করিম ডালিমের সাথে একাধিক মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত