শ্রম আইন লঙ্ঘন : ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার রায় আজ
প্রকাশ: ১ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৭ | আপডেট : ৯ নভেম্বর ২০২৪, ২২:১৬
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলার রায় আজ সোমবার (১ জানুয়ারি) ঘোষণা করবেন আদালত। নতুন বছরের প্রথমদিনে রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা এ রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। একইসঙ্গে এই মামলায় রায় ঘোষণার জন্য ১ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। সেদিন রাত ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানার রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও অ্যাডভোকেট মো. হায়দার আলী। সেদিন টানা ৮ ঘণ্টা পক্ষে-বিপক্ষে শুনানি হয়। শুনানিতে আদালতে ড. ইউনূসসহ আসামিদের খালাসের আর্জি জানিয়েছেন তার আইনজীবী। অন্যদিকে ড. ইউনূসসহ আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আর্জি জানান কলকারখানা অধিদপ্তরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। ড. ইউনূসসহ আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলাটি করেছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। ড. ইউনূস ছাড়াও এই মামলায় আসামি করা হয় গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে।
কলকারখানা প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত। তাই সর্বোচ্চ সাজা পাবেন আসামিরা।’
অপরদিকে, ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমার মক্কেলদের মামলা থেকে খালাস চেয়ে আরজি জানিয়েছি।’ রায় প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ড. ইউনূসসহ অন্যান্যরা সংশ্লিষ্ট আছেন সাক্ষীদের বর্ণনায় এমন কোনো কিছু নেই। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ডকুমেন্ট নেই। মামলার আর্জিতে কোথাও আসামিরা অপরাধী—এমন কোনো অভিযোগও উল্লেখ নেই। কোম্পানি আইন অনুযায়ী, অপরাধ কোম্পানির হবে। কিন্তু, এখানে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ কারণে এ মামলা চলতে পারে না।’
ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কোম্পানির অপরাধে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হবে। তারপর সংশ্লিষ্টরা আসবেন। এখানে ড. ইউনূসের মতো ব্যক্তিকে কীভাবে জড়ানো ও ফাঁসানো যায়, সেটিই ছিল মূল উদ্দেশ্য।’
তবে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আমাদের দরখাস্তগুলোতে আমরা কখনোই নোবেলজয়ী শব্দটা উচ্চারণই করিনি। কেননা আমাদের মামলায় কোনো নোবেলজয়ীর বিচার হচ্ছে না। এখানে বিচার হচ্ছে শ্রম আইন লঙ্ঘনকারীদের। জিত কিংবা হার, ড. ইউনূস ও প্রসিকিউশন দুপক্ষই তাদের পরবর্তী আইনি লড়াইও ঠিক করে রেখেছেন।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘৩০৩ (ঙ) ধারায় ছয় মাসের জেল ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। একইসঙ্গে ৩০৭ ধারা প্রমাণিত হলে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানায় দণ্ডিত হবেন।’
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।’
মামলায় অভিযোগে বলা হয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে পারেন। এর মধ্যে ১০১ শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।
এর আগে গত ২২ আগস্ট এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত ৮ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন আসামিরা। গত ৮ মে মামলা বাতিলের আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসের লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এরপর ৬ জুন আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
এ মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন বিবাদীর আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্যে জমা দেওয়া হয় আদালতে। সেখানে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে তা নবায়নের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের প্রকল্প নোকিয়া কেয়ার ও পল্লীফোনের কার্যক্রম তিন বছরের চুক্তি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। মেয়াদ শেষে তা নবায়ন হয়। যেহেতু গ্রামীণ টেলিকমের কার্যক্রম চুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত, তাই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়। ফলে, মূল লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিলে দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারী ইউনিয়ন ওই অর্থ পাওয়ার আশায় শ্রম আদালতে মামলা করে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে জানানো হয়, বিষয়টি নিয়ে মামলা চলমান। আদালত যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত