শামীম ওসমান নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও তা নোটিশ করার মতো নয়: সিইসি

  নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৩৪ |  আপডেট  : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ২১:০৩

সংবাদ সম্মেলন করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও তা নোটিশ করার মতো নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।

সিইসি বলেছেন, ‘সাংবাদিক সম্মেলন করে শামীম ওসমানের আচরণবিধি লঙ্ঘন করার বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো নোটিশ করা হয় নাই। তার (শামীম ওসমান) সাংবাদিক সম্মেলনটি আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে, কিন্তু এতটা হয়নি যে তাকে নোটিশ করতে হবে।’

বুধবার দুপুর একটায় নারায়ণগঞ্জ নগরীর মর্গান গার্লস স্কুলে সিটি নির্বাচনে নিয়োগ পাওয়া প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনামূলক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

আগামী ১৬ জানুয়ারির নারায়ণগঞ্জ সিটির তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আগের দুইবারের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আ্ইভী। নির্বাচনে আইভীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর আলম খন্দকার, যিনি বিএনপির প্রতীক ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন। নির্বাচনে দুই পক্ষের ব্যাপক গণসংযোগের মধ্যেই আলোচনায় আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

আইভী তার প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর আলম খন্দকারকে ‘ওসমান ভাইদের’ প্রার্থী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। যদিও তৈমুর দাবি করেছিলেন, তিনি জনগণের প্রার্থী, কারো সঙ্গে তার পারসোনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং নেই।

এই দুই প্রার্থীর এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পর নির্বাচনের ছয় দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। সেখানে দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে নামার ঘোষণা দিলেও পুরো সংবাদ সম্মেলনজুড়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নাম একবারের জন্যও উচ্চারণ করেননি।

স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একজন সংসদ সদস্যের সংবাদ সম্মেলন করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাকে। জবাবে সিইসি বলেন, ‘তার (শামীম ওসমান) সাংবাদিক সম্মেলনটি আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে, কিন্তু এতটা হয়নি যে তাকে নোটিশ করতে হবে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন মত থাকতে পারে। বিভিন্ন ব্যক্তির প্রতি দুর্বলতা, রাজনৈতিক দলের প্রতি সহানভূতি থাকতে পারে এমন সব কিছুই স্বাভাবিক। গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ায় এটাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। কিন্তু যখন আপনি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন তখন কে কোন দলের, কোন মতের, কোন ধর্মের, কোন গোত্রের সেটা মাথায় থাকে না নিশ্চয় এবং সেভাবেই দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং আমরা সকলেই তাই করি। এটা একটা নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তীকালীন শপথ।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে জানিয়ে কে এম নুরুল হুদা বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথেষ্ঠ তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রশাসন সকল প্রার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের দাবিগুলো সম্পর্কে জেনেছেন এবং প্রার্থীরা যখন যেটা চেয়েছেন প্রশাসনও সেভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। এটাই বাস্তবতা এবং খুব সুন্দর একটা নির্বাচন হতে যাচ্ছে এখানে।

যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নারায়ণগঞ্জের ভোট নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সিটি নির্বাচনের প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকবে এবং মাস্ক ছাড়া কাউকে ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

নির্বাচনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা সম্ভব নয় জানিয়ে নুরুল হুদা বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পাওয়া যায় সকালে নারীদের অনেক ভিড় থাকে। তারা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে পারে না।

সারাদেশে নির্বাচনি সহিংসতায় শতাধিক লোকের মৃত্যুর বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচন কমিশনকে অভিযুক্ত করেছেন। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ করতেই পারে। তারা তাদের মতো করে বলেন আর আমরা আমাদের মতো করে কাজ করি। নির্বাচনে মানুষ মারা গেছে, কিভাবে নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করা হয়। নির্বাচন হয়ে যায়, যখন বাড়ি চলে যায়, নির্বাচনের মালামাল নিয়ে যখন বের হয়ে যায় তখন শত শত লোক তাদেরকে ঘেরাও করে আক্রমণ করে ব্যালট বক্স ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ জাতীয় ঘটনা যখন ঘটে সেখানে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কি থাকতে পারে। প্রশাসনও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হতাহতের শিকার হচ্ছেন। প্রশাসনও চেষ্টা করছেন এ জাতীয় ঘটনাগুলো রোধ করার জন্য।

শেষ নির্বাচন হিসেবে কোনো চাপ অনুভব করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, চাপ অনুভব আগেও করি নাই, এখনো করি না।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত