৫৬ জনের নাম স্থান পেয়েছে
কাউনিয়ায় শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থেই স্মৃতি স্তম্ভ ‘চেতনা’
সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৮ | আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৪৮
১৯৭১ সাল মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্নিগর্ভদিন। নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের উপর অর্তকিত বর্বর পাকসেনারা যে তান্ডবলিলা চালিয়ে ছিল, সেই বর্বরতা থেকে রেহাই পায়নি রংপুরের কাউনিয়ার শান্তিকামি নারী শিশু আবাল বৃদ্ধ বনিতা। তিস্তা রেল সেতুর দক্ষিনে বাংকার করে ঘাটি করে পাকসেনারা। এই বাংকার থেকেই আশেপাশের গ্রাম গুলোতে জুলুম নির্যাতন হত্যা পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। সেদিন ছিল বাংলা ভাদ্র মাস। একদিন এই সেনা ছাউনি থেকে চার নরপশু বিশেষ অভিযান শুরু করে প্রাণনাথচর, চরসাব্দী, তিস্তার উপকন্ঠে। উদ্দেশ্য ছিল জুলুম করে খাদ্যদ্রব্য লুন্ঠন ও নারী ধর্ষনের। চরসাব্দী গ্রামের ২/৩জন নারির প্রতি লোলুপ দৃষ্টিতে অগ্রসর হতে থাকে পাকসেনারা। এলাকার মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গেগেলে গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে অতর্কিত আক্রমণ করে কুপিয়ে হত্যা করে ওই ৪নরপশু পাকসেনাকে। হত্যা কান্ডে অংশ নেয়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওয়াজ ফকির, আবেদ আলী ফকির, হাতকাটা সিকান্দার, সাত ভাই ওয়ালা আবেদ আলী ও সেকান্দার মেম্বারসহ চরাঞ্চলের অনেকেই। সেনা ছাউনিতে যখন ওই ৪সদস্য ফিরছিল না তখন এ হত্যাকান্ডের সংবাদ দেন স্থানীয় প্রখ্যাত রাজাকার প্রধান আঃ রহমান। তার সংবাদের ভিত্তিতে পাক সেনারা মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রানাথচর, চরসাব্দী, বল্লভবিষু, সাব্দী, চরনাজিরদহ, ভূতছাড়া গ্রামে। শুরু হয় নির্বিচারে গুলি, হত্যা, জ্বালাও পোড়াও। তিস্তা ব্রীজ থেকে ৮/১০কিঃমিঃ বকুলতলা বাজার পর্যন্ত চলে এ নারকীয় হত্যা কান্ড। বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে নিরিহ মানুষদের। অকালে ঝড়া পড়া গলিত লাশ দাফনের অভাবে তিস্তা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হন আবেদ আলী, বাদশা, সামছুল কসমের, মোসলেম, চয়াল চন্দ্র, নেছকেটু, মক্কার আলী সহ অনেকের নাম। চরসাব্দী গ্রামের গণি মিয়ার স্ত্রী জীবন বাঁচাতে শিশুপুত্র কে নিয়ে পাট ক্ষেতে আশ্রয় নেয়, সেখানেই গুলি খেয়ে মারা গেলেও লাশের উপর শিশু দুদিন দুধ খেয়ে বেঁচে থাকে,পরে তাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও পাকসেনাদের হাতে যারা শহীদ হয়েছেন তারা হলেন-আলেফ সরকার, মালেক সরকার, বাদশা, কংশের আলী, কর্ণধর, অজোর মোল্লা, হাছেন মোল্লা, মোসলেম আলী, রহিমা বেগম, রইচ আকন্দ, ভোলা মন্ডল, দয়াল, রফিকুল, আইয়ুব আলী, জাফর আলী, ছই মুদ্দিন, ইব্রাহিম মন্ডল, হাগুড়া, মক্কর মন্ডল, রাজেন্দ্র হরেন, মজিবর রহমান, কাশেম আলী, আছিমুদ্দিন, খোকা চন্দ্র, মোজাম উদ্দিন, যগেশ্বর, বাশন্তী রাণী, কান্দুরাম, শামছুল আকন্দ, জসমত আলী, আলেপ প্রামানিক, খতি বেওয়া, শোখল শাকিলদার, গোলাম রসুল, সিদ্দিক আলী, সিরাজুল বক্স গাড়িয়াল, আরমান, তছলিম উদ্দিন, আবুল কাশেম, মজিবর সরকার, মমতাজ উদ্দিন, আঃ জলিল, কিরন বালা, ময়েজ ফকির, কালটি রাণী, রামেশ্বর, সুন্দরী, আছির উদ্দিন, কান্দরা মিয়া, ফুরকানি রাণী, কেন্দ্রা সরকার, রহিম উদ্দিন, কান্দুরা মিয়া, লুৎফর রহমান সহ ৫৬জনের নাম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ভে স্থান পেয়েছে। স্থানীয় শহীদবাগের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগী মানুষের নাম নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এবং শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে বেইলী ব্রীজের নিকট আর কে রোডের ধারে “চেতনা” নামে এ ভাস্কর্যটি কবি নজরুলের অমর কবিতাটির দু’টি লাইন তুলে ধরা হয়েছে-উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই। বর্তমানে ভাস্কর্যটি অযতœ আর অবহেলায় রয়েছে। কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া প্রয়াজন বলে বিজ্ঞমহল মনে করছেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত