লিবিয়ায় মাফিয়াদের নির্যাতনের শিকার বিদেশ ফেরত তিনশ’ যুববকের কর্মসংস্থান

  শফিক স্বপন, মাদারীপুর

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ১৪:৪৬ |  আপডেট  : ২ মে ২০২৪, ০০:২২

অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালী যাওয়ার সময় লিবিয়ার বন্দিশালায় মাফিয়াদের হাতে আটক প্রায় তিনশো’ যুবককে দেশে ফিরিয়ে এনেছে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসন। এরইমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহায়তা প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে কর্মসংস্থানের। বদলে যাচ্ছে জীবনযাত্রার মানও। আর, অবৈধভাবে বিদেশযাত্রা রোধে সভা, সমাবেশ ও র‍্যালিসহ নানা প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন।

জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার কুমড়াখালীর বাসিন্দা আব্দুর রশিদ চৌকিদারের ছেলে আরিফুর ইসলাম। দালালের মাধ্যমে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালী যাবার সময় আটক হয় লিবিয়ায়। ২১দিন জেলে থাকার পর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় দেশে ফেরেন তিনি। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চরমুগরিয়া এলাকায় কম্পিউটারের দোকান দিয়ে আয় করে চালাচ্ছেন সংসার। আরেক ভুক্তভোগী সদর উপজেলার মধ্য খাগদীর আব্দুর বর বেপারীর ছেরে রকিব হোসেন। লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে ৭ মাস অমানবিক নির্যাতনের পর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দেশে ফেরেন। পরে ফ্রিলাান্সিং কোর্সের প্রশিক্ষণ নেন। এখান থেকেই আয়ের স্বপ্ন বুনেছেন চোখেমুখে। আরিফ আর রকিবের এই করুন কাহিনী শুনে হতবাক অন্য বেকার যুবক-যুবতীরাও।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, গত তিনবছরে অবৈধপথে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে জেলার তিন হাজার একশো ৪৮ জন, লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে আটক হয়ে নির্যাতনের শিকার কয়েকশ’। আর জেলখানায় বন্দি হয় ১২৭ যুবক। সাগরে যুবে মারা যায় ২৫ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে এর সংখ্যা দুই থেকে তিনগুনের বেশি। 

ভুক্তভোগী আরিফুর ইসলাম বলেন, দালালদের লাখ লাখ দিয়েও বিদেশে যেতে পারিনি। লিবিয়ায় আটকের পর জেলাখানায় বন্দি ছিলাম। পরে সরকারের মাধ্যমে দেশে ফেরত এসে, সরকারিভাবে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নেই। এখন দোকান দিয়ে ব্যবসা করছি, বেশ ভালই আছি। তবে, সবাইকে বলবো, কেউ অবৈধভাবে দালালদের মাধ্যমে বিদেশ যাবেন না। তাহলে আর্থিক ও শারিরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

আরেক ভুক্তভোগী রকিব হোসেন বলেন, আমি লিবিয়ার জেলখানায় ৭ মাস বন্দি ছিলাম। পরে জেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় দেশে ফেরত আসি। এরপরে ভর্তি হই ফ্রিলান্সিং কোর্সে। এখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে সংসার চালাবো। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা করছেন।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন বলেন, মানবপাচার ও অবৈধপথে বিদেশযাত্রা রোধে যুবক-যুবতীদের কম্পিউটার, ফ্রিলাান্সিং, মার্কেটিংসহ দেয়া হচ্ছে নানা প্রশিক্ষণ। এতে বেকাররা সৃষ্টি করতে পারছে কর্মসংস্থান। পাশাপাশি অবৈধভাবে বিদেশযাত্রাও রোধ হচ্ছে।

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান বলেন, প্রশাসন থেকে সবসময় বৈধভাবে বিদেশে যেতে বলা হয়। যারা অবৈধভাবে বিদেশ যেতে চায়, তাদের অধিকাংশ দালালদের মাধ্যমে নিঃস্ব হয়ে যায়। তাই, সঠিক পরামর্শ নিয়ে, কেউ বৈধভাবে বিদেশে গেলে কোন অসুবিধা বা ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, মানবপাচাররোধে বিভিন্নস্থানে সভা, সমাবেশ ও র‍্যালিসহ নানা প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছ পুলিশ। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বেশি সচেতন হলে অবৈধভাবে বিদেশযাত্রা অনেকাংশেই কমে আসবে। আর, জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা দালালচক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত