রাষ্ট্রপতিসহ ১৪ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে ডকুমেন্টারি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪, ১৪:৩৪ |  আপডেট  : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৩

বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও সাবেক মো. আব্দুল হামিদসহ ১৪ জন বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকারভিত্তিক ডকুমেন্টারি তৈরি করছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা’ প্রকল্পের আওতায় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংগ্রহ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকারের ভিডিও ধারণ ও সংরক্ষণের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা’য় বীর মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ে ব্যক্তির বর্তমান অবস্থান বিবেচনায় না নিয়ে একাত্তরে তার অবদান ও নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৮০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার রণাঙ্গনের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং ১৬টি ডকুমেন্টারি তৈরি, নির্মিত তথ্যচিত্র এবং ডকুমেন্টারি সংরক্ষণ, তথ্যচিত্র ও ডকুমেন্টারি সম্প্রচার ও আর্কাইভ করার জন্য ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা’ প্রকল্প গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী যে সব মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের সাক্ষাৎকার আগামী প্রজন্মের জন্য সংগ্রহ, সম্প্রচার ও সংরক্ষণ। পাশপাশি তাদেরকে মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সম্মিলন ঘটানো ও নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে তথ্যচিত্র এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন সেক্টরে সংঘটিত সম্মুখ যুদ্ধসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে জাতীয়ভাবে ই-আর্কাইভ স্থাপন। ৪৯ কোটি ৫৭ লাখ ৫ হাজার টাকার প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এর মেয়াদ শেষ হবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর জন্য প্রক্রিয়া চলছে।

বুধবার (১০ জুলাই) অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৌখিক সাক্ষাৎভিত্তিক ভিডিও ধারণ কার্যক্রমের সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, গত ১ এপ্রিল ১৬টি ডকুমেন্টারি তৈরির লক্ষ্যে ‘বিস্তৃত ডকুমেন্টারিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য গঠিত কমিটি’র সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ১৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। যাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা হলেন— বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ (বৈমানিক) বীর উত্তম, অপারেশন জ্যাকপটের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও দলনেতা আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ- বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, সাব সেক্টরের অধিনায়ক এবং পরে দশম ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক জাফর ইমাম বীর বিক্রম, ২ নম্বর সেক্টরের ক্র্যাক প্লাটুনের কমান্ডার ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, সাব সেক্টর কমান্ডার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, মুক্তিযুদ্ধকালীন রওশন আরা ব্যাটারির সহ-অধিনায়ক কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদার।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই ১৪ ব্যক্তির মধ্যে ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম ও মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমের সাক্ষাৎকারের ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও কাজী সাজ্জাদ আলী জহিরের আংশিক ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়েছে। এদিকে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও সাবেক মো. আব্দুল হামিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির আগের বৈঠকে ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা’ প্রকল্পের ডকুমেন্টারি তৈরি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা’ প্রকল্পে ব্যক্তির বর্তমান অবস্থান বিবেচনা না করে একাত্তরে তাদের ভূমিকা ও যুদ্ধে নেতৃত্বের পর্যায়ে বিবেচনায় রেখে কাজ করার প্রস্তাব দেন।

বৈঠকে কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রকিুল ইসলামও লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্ব ও মূল্যায়ন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ওই মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকা ও অবদানের ভিত্তিতে বিবেচিত হবে, আজকের অবস্থান দিয়ে নয়। এটা করতে গিয়ে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যাতে বিকৃত না হয়, সেটাও লক্ষ্য রাখার কথাও বলেন তিনি।

পরে কমিটির বৈঠকে ব্যক্তির বর্তমান অবস্থান বিবেচনায় না নিয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ওই মুক্তিযোদ্ধার অবদান ও নেতৃত্ব বিবেচনায় রেখে সিলেকশন করার সুপারিশ করা হয়। অবশ্য, ১২ জুনের বৈঠকে এ সুপারিশ হলেও ১ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকেই যে ১৪ জনের ডকুমেন্টারি হবে, তাদের সিলেকশন করা হয়।

বুধবার অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকের পর সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে ‘বীরের কন্ঠে বীরগাঁথা’ নামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৌখিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ওই মুক্তিযোদ্ধার অবদান এবং  নেতৃত্ব বিবেচনায় রেখে নির্বাচন করার পরামর্শ প্রদান করা হয়। বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে যেসব ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট, শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস রয়েছে— সেসব ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরা এবং সংরক্ষণ করার পরামর্শ প্রদান করা হয়।

এদিকে যাদের নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তারা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে অসীন রয়েছেন জানিয়ে গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা’ নামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মৌখিক সাক্ষাৎকার ভিডিও আকারে সংরক্ষণ করা হবে। বর্তমানে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকারের উচ্চপদে আছেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের একটু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা প্রকল্পের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে, কত কষ্টের বিনিময়ে, দুঃসাহসিক কাজ করেছেন, তাদের প্রত্যক্ষভাবে যার যে ভূমিকা ছিল, সেগুলো রেকর্ড করে সংরক্ষণ করা হবে। যাতে পরবর্তীকালে যারা গবেষক, যারা ইতিহাস লিখবেন, পড়বেন, তারা যেন সত্যিকারভাবে জানতে পারেন। কীভাবে যুদ্ধ হয়েছে, কোথায় যুদ্ধ করেছেন, কার কী অবদান— সেগুলো প্রত্যেকের আলাদা আলাদাভাবে রেকর্ড করে সংরক্ষণ করবো। ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাথা’ নামের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কেয়ামত পর্যন্ত প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাঁথা জানতে পারবে বলেও মন্ত্রী মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও সরকারের উপসচিব মোহাম্মদ আফরাজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৪ জন প্রথিতযথা বীর মুক্তিযোদ্ধার ডকুমেন্টারি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের ভিডিও চিত্র ধারণ শুরু হয়েছে। চার জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকারের জন্য আমরা সময় চেয়েছি। ওনারা সময় দিলেই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি ডিসেম্বরে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে, নানা কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে আমাদের এক বছরের মতো দেরি হয়েছে। এজন্য আমরা আরও এক বছর সময় বাড়াতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবো।

৮০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার রণাঙ্গনের স্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে কমবেশি ২৬ হাজারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত