যশোর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কের পদত্যাগ

  যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১ জুলাই ২০২৫, ১০:৩১ |  আপডেট  : ১ জুলাই ২০২৫, ১৪:১৬

যশোর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলার আহ্বায়ক রাশেদ খান

 

যশোরে জুলাই আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলার আহ্বায়ক রাশেদ খান সংগঠন থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বছরের প্রথম প্রহরে (সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের আইডি থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দিয়ে তিনি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার আহ্বায়ক পদ থেকে আমি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিচ্ছি। একই সঙ্গে এনসিপি ও এর ছাত্র কিংবা যুব উইংয়ের সঙ্গে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই।’

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিজয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে যখন সারা দেশে মোমবাতি প্রজ্বালন হচ্ছে, এমন সময়ে রাশেদের অব্যাহতির স্ট্যাটাসে হতবাক হয়েছেন তার সহকর্মীরা। দ্রুত তার সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনাও করছেন।

পদত্যাগের কারণ জানতে রাশেদ খানের সঙ্গে মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে এই স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ার জবাবে রাশেদ খান (একই স্ট্যাটাসের কমেন্টে) লিখেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যশোর জেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। আমি সব সময় আমার শ্রম, মেধা, অর্থ, ধৈর্য ও সময় ব্যয় করে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে; কতটা পেরেছি সেটা মূল্যায়ন করার দায়িত্ব আপনাদের। কিন্তু আমি আমার নিজেকে যদি মূল্যায়ন করি, সেক্ষেত্রে বলবো, আরও ভালো কিছু হওয়া উচিত ছিল।’

‘আমি একজন আর্টিস্ট, ব্যক্তিগতভাবে আমি দীর্ঘদিন যাবৎ পেশাগত কোনও কর্মে যুক্ত না থাকায় অর্থকষ্টে আছি। আমার বিরুদ্ধে যে সকল অর্থবিষয়ক/ব্যাংক ব্যালেন্সবিষয়ক মুখরোচক গল্প উৎপাদন করা হয়, তা নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ, আমার বাস্তবতা আমি নিজে ফেইস করি। তবু যদি কারও সন্দেহ থেকে থাকে, তাহলে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করে দেখার অনুরোধ রইলো। আমি এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুত আছি।’

‘এতটুকু বলতে পারি, জুলাই বিক্রি করিনি আমি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিখিত কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শ না থাকলেও আমার নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে, সেটা হয়তো অনেকের সঙ্গে মিলবে না। এই প্ল্যাটফর্মে থেকে আমার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে অসংখ্য ভালো কাজ করার সুযোগ হয়েছে, তার জন্য আমি গর্বিত। আমার শ্রেণির লড়াই, ন্যায্যতার লড়াই জারি থাকবে।’

‘দীর্ঘদিন যাবৎ কেন্দ্রীয় কমিটির কোনও নির্দেশনা না থাকায়, সংগঠন সারা দেশেই স্তিমিত হয়ে গেছে। স্ব স্ব ইউনিট থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকসময় কেন্দ্রীয় নেতাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। একইসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এনসিপি, যুবশক্তি, বাগছাস ইত্যাদি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি কমন প্ল্যাটফর্ম হলেও এর নবগঠিত কমিটি এনসিপি দ্বারা প্রভাবিত একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। তবু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সব সময় শুভকামনা থাকবে। গণমানুষের কল্যাণে তাদের নিবেদনকে আমি সব সময় শ্রদ্ধার চোখে দেখবো।’

এদিকে, রাশেদ খান ফেসবুকে তার স্ট্যাটাস দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তার শুভানুধ্যায়ীরা। মোস্তাফিজুর রহমান জীবন নামে একজন লিখেছেন, ‘সৈয়দ শামসুল হকের (আমার পরিচয়) কবিতাটির শেষ দিকের ওই লাইনটি তবে রাশেদের জন্যই লেখা হয়েছিল! একজন রাশেদ বড় কষ্টে তৈরি হয়, সময় তাকে এভাবেই হারায়।’

মো. সিরুশ খান নামে একজন লিখেছেন, ‘এই চাটুকার চাঁদাবাজ বৈষম্যবিরোধী টোকাই এবং এনসিপি আপনার সমাজতান্ত্রিক আদর্শের যোগ্য নয়। আগামীর পথচলার জন্য শুভকামনা। আপনার প্রতি ভালোবাসা অবিরাম।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ নভেম্বর রাশেদ খানকে আহ্বায়ক এবং জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তিকে সদস্যসচিব করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট যশোর জেলা কমিটি অনুমোদন দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় পরিষদ। এই কমিটি ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলা কমিটির অনেকের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেন যুগ্ম আহ্বায়ক-১ মাসুম বিল্লাহ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে অভিযোগ তুলে এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ৭ নেতা পদত্যাগ করেন।

সর্বশেষ চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা কমিটি গঠনে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সদস্যসচিব জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তির পদ স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ও জেলার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠায় অনেক নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত কর্মসূচিতেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায় হাতেগোনা।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, গত বছর কোটা আন্দোলনের প্রথম থেকেই যশোরে নেতৃত্ব দেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশেদ খান। বাম ঘরানার ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা এই শিক্ষার্থী জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে জেলায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। যার পুরস্কারস্বরূপ পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলা কমিটির দায়িত্বভার তুলে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। হঠাৎ কমিটি থেকে পদত্যাগ করায় হতবাক হয়েছেন জেলার বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ।

কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত