মোবাইল ফোন ব্যবহারের সাতটি ক্ষতিকারক ফলাফল
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩৩ | আপডেট : ১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫০
বর্তমানে মানুষের জীবনে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত হয়ে গেছে এই মোবাইল। এই স্মার্টফোনগুলো (smartphone) হল এমন যন্ত্র যা শুধুমাত্র যোগাযোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এই একটা মাত্র ডিভাইসেই আমরা পাচ্ছি নানান ধরণের ফাঙ্কশন। যেমন – ক্যাল্কুলেটর, রেডিও, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রবেশাধিকার, অনলাইন ব্যাঙ্কিং, ওয়েবসিরিজ, সিনেমা দেখার ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করে নানান ধরণের অনলাইন শপিং অ্যাপ ও আরও কত কিছু। প্রতিটি ফাঙ্কশনের উপলব্ধতা আমাদের জীবনকে অনেকটাই সহজতর ও দ্রুততর করে তুলেছে। ইন্টারনেট-নির্ভর মোবাইল পরিষেবা আমাদের যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্যের অ্যাক্সেস দেয়। এর ফলে, মোবাইল ফোনের ব্যবহার আমাদের জীবনে যথেষ্ট সার্থকতা নিয়ে আসে আর জীবনের অনেক অমূল্য সময় বাঁচিয়ে দেয়।তাই, মূলত এই ডিভাইস সম্পূর্ণভাবেই জীবনযাত্রাকে সহজ-সরল করতেই তৈরী করা হয়েছে। তবে এর বেশ কিছু অপব্যবহারও রয়েছে। যা মানুষের সময়, স্বাস্থ্য কেড়ে নিচ্ছে।
যেগুলোকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারলে আপনার জীবনযাত্রার মান যথেষ্ট উন্নত হবে ও নিজেকে এক সুস্থ-সবল জীবনের পথে চালিত করতে পারবেন।
১. মোবাইল ব্যবহারে চরম আসক্তি:
কোনো জিনিসের অতিরিক্ত ব্যবহার কিন্তু তার অপব্যবহারকেই দর্শায়।
আর, মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আপনাকে আসক্ত করে তুলতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ।
এর ক্রমাগত ব্যবহার আপনাকে উদ্বেগ, একাকীত্ব ও আত্মসম্মানহীনতার দিকে ঠেলে দেয়।
মোবাইলের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার ফলে এর থেকে দূরে থাকলে হলে, আপনার মনে হতাশা, রাগ, বিরক্তি, ও অধৈর্যভাব তৈরী হতে পারে।
দরকারের তুলনায় অতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার আপনার ঘুমও কেড়ে নিতে পারে।
যার ফলে, আপনার স্মৃতিশক্তিও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
অন্যদিকে, পরিষ্কারভাবে চিন্তার ক্ষমতাও কমে যেতে পারে।
এমনকি, আপনার জ্ঞানীয় ও শেখার দক্ষতাও কমতে পারে।
আর, মনোবিজ্ঞানীদের মতে, স্মার্টফোন আসক্তি হল একটা ব্যাধি।
যা মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষের মধ্যে তৈরী হতে পারে।
মনস্তাত্ত্বিকেরা বলেন, যে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারাদিনে ২ ঘন্টার বেশি সময় মোবাইলের পিছনে খরচ করা অনুচিত।
তবে, শিশু, টিনএজার ও যুবক-যুবতীরাই এই মোবাইল আসক্তির প্রধান শিকার হয়।
২. সাইবার ক্রাইম:
আমরা কম-বেশি সবাইই, এই সাইবার ক্রাইম কথাটির সাথে পরিচিত।
আসলে, এটি হল এক ধরণের অপরাধমূলক কাজকর্ম; যেখানে অপরাধীরা কম্পিউটার বা ডিভাইসের নেটওয়ার্কের অপব্যবহার করে অন্য ব্যক্তির ডিভাইসে থাকা তথ্য অবৈধভাবে চুরি, জালিয়াতি, অধিকার গ্রহণের চেষ্টা ও নানান অপরাধ সংঘটিত করে।
এই ধরনের অপরাধ ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করেই হয় বলে, প্রাথমিকভাবে অনলাইনেই গুলো ঘটে।
অনেক দুঃশ্চরিত্র মানুষ সারা দুনিয়াতেই ছড়িয়ে রয়েছে, যারা টেকনোলজি ও মোবাইল প্রযুক্তির অপব্যবহার করে নানানভাবে অন্য মানুষের ক্ষতি করে।
তারা নিরাপরাধ মানুষদের টাকা চুরি করে, সমম্মানহানির চেষ্টা করে, হুমকি দিয়ে তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।
এমনকি, এরা মানুষের ব্যাঙ্কের বিবরণ ও ক্রেডিট কার্ড নম্বরের মতো ব্যক্তিগত তথ্য বের করার জন্যে বিভিন্ন স্বনামধন্য কোম্পানীর নাম নিয়ে, ফোন করে তাদের প্রতারণাও করে থাকে।
৩. অশ্লীল, অমানবিক বিষয়বস্তুতে স্বাধীন প্রবেশাধিকার:
অশ্লীল বস্তু দেখাকে যতই অবৈধ বলে ঘোষণা করা হোক, চোরা-পথে ইন্টারনেট ও মোবাইল অপব্যবহার করে বহু মানুষই বিষেশ করে যুবক সমাজ ব্যাপকভাবে এই ধরণের অশ্লীল বস্তু দেখে থাকে।
ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস সকলের কাছেই প্রায় মুক্ত হওয়ায়, এখানে এইসব বিষয়বস্তু দেখার জন্যে কোনো সীমাবদ্ধতাও থাকে না।
তাই, অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো ব্যক্তিরাই এই অশ্লীল কনটেন্ট দেখার ফলে, তাদের মনের উপর কুপ্রভাব পড়তেই পারে।
যার থেকে জন্ম নিতে পারে নানান ধরণের মানসিক বিকার।
এর ফলে, সমাজ ক্রমশ অবনতির দিকে যেতে পারে।
এছাড়াও, বর্তমানে নানান ধরণের ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও বিভিন্ন অশ্লীল দৃশ্য দেখানো হয়, যা অপ্রাপ্তমনস্কদের মানসিক ক্ষতি করতে পারে।
৪. অনলাইন গেমিং ও গ্যাম্বলিং-এর নেশার আবদ্ধ হওয়া:
অনলাইন গেমে হেরে গিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা তো আমরা আগেই শুনেছি।
বিশেষ করে, ব্লু ওহেল কিংবা মোমো অনলাইন গেমের কথা মনে আছে তো?
তাই, মোবাইলের অপব্যবহারের আরেকটি দিক হল অনলাইন গেমিং ও গ্যাম্বলিং-এর নেশা।
ভিডিও গেম, যথা- রিয়েল-মানি গেমিং, টোকেন বাজি ধরা, সোশ্যাল ক্যাসিনোয় খরচ করা, কিংবা অনলাইন জুয়া হল মোবাইল গেমিং আসক্তির নিকৃষ্টতম উদাহরণ।
সমীক্ষা বলছে যে, ভিডিও গেম থেকে আমরা সাইবার বুলিং, গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ, কনসোল, কম্পিউটার ও ডিভাইসের থেকে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, ওয়েবক্যাম থেকে অবৈধ নজরদারি, অনলাইন অপরাধের শিকার থেকে শুরু করে ম্যালওয়্যার ও নানান ক্ষতিকারণ ইন্টারনেট ভাইরাসের সম্মুখীনও হতে পারি।
যেটা পুরোপুরিভাবেই মোবাইলের অপব্যবহারের মধ্যেই পড়ে।
৫. হিংসাত্মক চিন্তা-ভাবনার মাত্রাতিরিক্ত প্রচার:
নানান সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, মোবাইল ফোনের অপব্যবহার করে জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রে হিংসাত্মক সংঘাতে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে ৷
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কোনো গোষ্ঠী সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই রাখে।
কারণ, মোবাইলের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহার সাংগঠনিক যোগাযোগের খরচ কমায়, যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ও কার্যকর উপায় প্রদান করে আর সংগঠিতভাবে বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্যে মানুষকে নানাভাবে অনুপ্রেরিত করে৷
যে গোষ্ঠীগুলো আগে থেকেই সহিংসতা প্রসারে সক্ষম, তাদেকে মোবাইল ফোনগুলো কম খরচে, আরও বেশি করে হিংসাত্মক চিন্তাভাবনার প্রসার ঘটাতে যথেষ্ট সাহায্য করে থাকে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে ব্যবহার করে এরকম বিদ্বেষমূলক চিন্তাভাবনার প্রচার করে থাকে।
৬. অপরাধমূলক কাজকর্মে লিপ্ত হওয়া:
মোবাইলের অপব্যবহার মানুষকে বিভিন্ন ভয়ানক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে তাদের নিজের অজান্তেই ঠেলে দেয়; যথা – দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার, ডেটা হ্যাকিং ও আরও গুরুতর সামাজিক অপরাধ।
কিংবা, সাধারণভাবে দেখতে গেলে, পরীক্ষায় মোবাইলের সাহায্যে চিট করা কিংবা অতিরিক্ত চ্যাটিং করে সময়ের অপচয় করা; সেই হিসাবে অপরাধী কার্যকলাপের মধ্যে না পড়লেও, নৈতিকতার দিক থেকে এগুলো কিন্তু অবশ্যই এক ধরণের অপরাধ।
৭. ডার্ক ওয়েবের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা:
ডার্ক ওয়েব হল ইন্টারনেটের একটি এনক্রিপ্ট করা অংশ।
যেটা আমরা সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন থেকে ব্যবহার করতে পারি না।
কারণ, এটি অ্যাক্সেস করার জন্য নির্দিষ্ট কনফিগারেশন বা অনুমোদন লাগে।
এই ওয়েব আসলে বিপজ্জনক না, বরং এই নেটে থাকা মানুষজন অনেকক্ষেত্রেই গুরুতর অপরাধের সাথে লিপ্ত থাকে।
ডার্ক ওয়েবের বিপদ তখনই আসে, যখন আপনি এটিকে অ্যাক্সেস করার সময় সতর্ক না থাকেন।
এখানে আপনি সহজেই হ্যাকারের শিকার হতে পারেন কিংবা নিজের অজান্তেই ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে দিতে পারেন।
ফলে, আপনার মোবাইলকে অপব্যবহার করেই আপনি এই ধরণের অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে যেতে পারেন।
এখান থেকে মানসিক ক্ষতির সম্ভাবনাও থাকে।
কারণ, এখানে যে ধরণের অবৈধ কার্যকলাপ হয়, তা আপনার মনে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে।
মূলত, নানান ধরণের অপরাধের প্রধান আড্ডাখানা হল এই ডার্ক ওয়েব।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত