পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫৯ | আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:১৪

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে উপজেলার মুনসুরাবাদ এলাকায় কাফনের কাপড় পরে রাস্তা অবরোধ করেছে এলাকাবাসী। একইসঙ্গে অবরোধকারীরা ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে উপজেলার কমপক্ষে সাতটি স্থানে মহাসড়ক ও রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে স্থানীয় জনতা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে।
মহাসড়কের ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং বেরিকেট দিয়ে অবস্থান করছে হাজারো জনতা। দুটি ইউনিয়নকে বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে ও পুনর্বহালের দাবিতে তৃতীয় দফায় ভাঙ্গায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে অবরোধের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহন চালক ও ২১টি জেলার সাধারণ যাত্রীরা। মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ, র্যাব এপিবিএন, সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে।
ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-৪ আসনে ফেরত না দেওয়া হলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো। এর আগে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর)সন্ধ্যার দিকে আলগী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম. ম. সিদ্দিক। স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও প্রায় ৫০০-৬০০ মানুষ এতে অংশ নেন।
বক্তারা অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন অযৌক্তিকভাবে ভাঙ্গার দুটি ইউনিয়নকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার না করলে রক্ত দিয়ে হলেও পূর্বের অবস্থান রক্ষা করা হবে। একই সঙ্গে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। কর্মসূচি ভাঙ্গা পৌর শহরের হাসপাতাল গেট থেকে শুরু করে রেললাইন, পুলিয়া বাসস্ট্যান্ড, হামিরদী ইউনিয়নের পুকুরিয়া রেলক্রসিং, পুকুরিয়া বাসস্ট্যান্ড, মনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড, হামিরদী বাসস্ট্যান্ড, মাধবপুর বাসস্ট্যান্ড এবং আলগী ইউনিয়নের সুয়াদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একযোগে পালন করার ঘেষণা দেওয়া হয়।
এসময় বক্তারা আরও বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইউনিয়ন বিভক্ত করা হলে ভাঙার ১২ ইউনিয়নের মানুষ নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করবে। পাশাপাশি কার প্রভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা খুঁজে বের করার দাবি জানান তারা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দেন চেয়ারম্যান ম. ম. সিদ্দিক মিঞা।
অবরোধের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোকিবুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, অবরোধকারীরা সকাল থেকে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এবং ঢাকা-খুলনা রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। তবে পূর্ব থেকে ঘোষণার কারণে আজ যানবাহনের চাপ খুবই কম। আমরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) আসিফ ইকবাল বলেন, সাধারণ জনগণের ভোগান্তি দূর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভোর থেকে মহাসড়কে চারজন ম্যাজিস্ট্রেট ও বাইরে থেকে আসা সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের অন্তত এক হাজার সদস্য মহাসড়কে টহল দিচ্ছে।
২০১৩ সালের আগে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা ছিল ফরিদপুর-৪ আসনে এবং ভাঙ্গা উপজেলা ছিল ফরিদপুর-৫ আসনে। পরবর্তীতে পুনর্বিন্যাসের সময় ফরিদপুরের পাঁচ আসন ভেঙে চার আসন করা হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন ফরিদপুরর ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত কয়েক দিনে ভাঙ্গায় একাধিকবার মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও হাইকোর্টে রিট দায়ের করা এবং রেলপথ অবরোধ করা হয়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত