মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে বাগেরহাটে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

  বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:৫১ |  আপডেট  : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৪

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারুইখালী ইউনিয়নের দক্ষিন সুতালড়ী (ভাষন্ডা) গ্রামের কবির বয়াতী নামের এক কৃষককে বারবার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। সঠিক বিচারের দাবিতে বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন কবির বয়াতির বোন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী মর্জিনা বেগম। এসময়, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাখাওয়াত হোসেন, কবির বয়াতির স্ত্রী লাকি বেগম উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে কবির বয়াতির বোন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন,বারুইখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য গাউছুল হক দুলাল ও তার লোকজনের সাথে আমাদের বিরোধ রয়েছে। গাউছুল হক দুলালসহ ৮২ জনের বিরুদ্ধে আদালতের নিষেদ্ধাজ্ঞাও রয়েছে। এতে দুলাল ও তার লোকজন বেপরোয়াভাবে আমাদের উপর কয়েকবার হামলা করেছে। শুধু হামলা করেই শান্ত হয়নি তারা, আমাকে এবং আমার ভাই কবির বয়াতীকে একের পর এক মামলা করে হয়রানি করছেন। গাউছুল হক দুলাল ও তার সহযোগিরা পুলিশের সাথে যোগসাজস করে আমার ভাই কবির বয়াতীর নামে নামে ২২টি মামলা দিয়েছেন। যার প্রতিটি মামলাই মিথ্যা। এর মধ্যে ১০টি মামলা ইতোমধ্যে মিথ্যা প্রমান হওয়ায়, আদালত আমার ভাইকে বেখসুর খালাস দিয়েছেন। গাউছুল হক দুলালদের হাত থেকে বাঁচতে  আমার ভাই কবির বয়াতি বাগেরহাটের ভাড়া বাসায় থাকা শুরু করে। এই অবস্থায় সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে ডিবি পরিচয়ে  কয়েকজন লোকের সামনে বাসা থেকে আমার ভাই কবির বয়াতিকে তুলে নেয়। পরবর্তীতে জানতে পারি ডেমা বড়বাশবাড়িয়া এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় আমার ভাইকে। কিন্তু আমার ভাই ওই এলাকায় কখনওই যায়নি। এভাবেই দিনের পর দিন আমার ভাইকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এভাবে যদি প্রশাসন একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয় তাহলে আমরা কার কাছে নিরাপদ। আমরা সকল ঘটনার সঠিক তদন্ত পূর্বক বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের ২৮ আগস্ট মোঃ মাসুম তালুকদার নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে আমার ভাই কবির বয়াতির নামে একটি গরু চুরির মামলা দেয়। কিন্তু মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সময় ২৮ আগষ্ট  আমার ভাই ফকিরহাটের অন্য একটি মিথ্যা মামলায় ৪ জুন থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাগেরহাট জেলা কারাগারে ছিলেন। এভাবেই দিনের পর দিন প্রতিপক্ষ ও প্রশাসন যোগসাজোসে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে । বিনা অপরাধে তাকে বানানো হয়েছে ডাকাত। তাদের দেওয়া মামলাগুলো সঠিক ভাবে তদন্ত করলে দেখা যাবে সব মামলাই মিথ্যা।

কবির বয়াতির স্ত্রী লাকী বেগম বলেন, ১৬ বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে। সেই থেকেই দেখছি আমার স্বামীর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা করছে প্রতিপক্ষরা। তাদের করা মিথ্যা মামলায় অধিকাংশ সময়ই জেলে ও পলাতক থাকতেন আমার স্বামী। সন্তান ও সংসার সামলাতে সবসময়ই হিমশিম খেতে হয় আমার। দুলাল মেম্বার ও তার লোকজন আমার নামেও মিথ্যা গরু চুরির মামলা দিয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানি করাচ্ছে। প্রশাসনও আমাদের কোন কথা শোনে না। এভাবে জীবন চলে না, এর থেকে মরে যাওয়া ভাল বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অসহায় এই নারী।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সাখাওয়াত বেপারী বলেন, গাউছুল হক দুলাল ও তার লোকজন এত বেপরোয়া যে এলাকার কোন লোক তাদের বিরুদ্ধে কথাও বলে না। ওরা আমার শ্যালক কবির বয়াতি ও আমাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছে। একজন মুক্তযোদ্ধা হওয়া স্বত্তেও তারা আমাকে ও আমার পরিবারকে একাধিকবার মারধর করেছে। মোড়েলগঞ্জ উপজেলার সামনে এই দুলাল  ও তার লোকজন আমার মুক্তিযোদ্ধার ব্যাচ খুলে ফেলে আমাকে লাি ত করেছে। শুধু আমাদের নয়, এলাকার অনেক সাধারন মানুষকে বিনা কারনে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে তারা। তাদের মামলার ভয়ে অনেক মানুষ এখন এলাকা ছাড়া। মামলাবাজ দুলালের কঠোর শাস্তির দাবি জানান এই মুক্তিযোদ্ধা। 

মামলার বাদী মাসুম হাওলাদার বলেন, আমার গরু চুরি হয়েছে আমি মামলা দিয়েছি। কিন্তু চোর কোথায় ছিল তা আমি জানিনা।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য গাউছুল হক দুলাল বলেন, কবির বয়াতির সাথে আমাদের কিছু বিরোধ রয়েছে।  যেসব মামলার কবিরের নামে দেওয়া হয়েছে সেসব অপরাধ কবির বয়াতি করেছে। আমি তাকে কোন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করি নেই।

মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন, অপরাধি হলেই তার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়। কোন নিরাপরাধ লোকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার সুযোগ নাই। কবির বয়াতি অপরাধি তাই মামলা করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত