প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণ

মাদারীপুরে দেশের প্রথম ১০তলা সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন 

  শফিক স্বপন, মাদারীপুর

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৩৩ |  আপডেট  : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৭

মাদারীপুরে দেশের প্রথম ১০তলা বিশিষ্ট সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জেলার উন্নয়ন কর্মকান্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির আরো এক ধাপ পূরণ হলো। মাদারীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র শকুনী লেকের পাড়ে এক একর জায়গার ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় চলতি বছর জুন মাসে। গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবনটির উদ্বোধন করেন। ভবনে একত্রে ৪০টি সরকারি অফিসের বরাদ্দ রয়েছে। ভবনের কিছু কাজ এখনও বাকি থাকায় বরাদ্ধকৃত অফিসগুলো নতুন ভবনে উঠতে একটু সময় লাগতে পারে। আগামী মাসে নতুন ভবনে বরাদ্ধকৃত অফিসগুলো উঠতে পারবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানাগেছে , মাদারীপুর জেলা শহরে অনেকগুলো ছোট-বড় সরকারি অফিস রয়েছে, যাদের নিজস্ব কোন ভবন নেই। শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভাড়া বাসায় রয়েছে এ সরকারি অফিসগুলো। ফলে সাধারণ মানুষ সরকারি অফিসের সেবা নিতে বিড়ম্বনায় পড়ছে। জেলার এ সকল সরকারি অফিস কিভাবে এক জায়গায় একটি ভবনের রাখা যায় তার জন্য মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান বিগত ২০১২ সালে জেলায় একটি সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাবনা দেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য ওই বছর ২৬ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ভবনটির ধারণা একেবারেই নতুন ছিল বলে অনেক গবেষণা করা হয়। ভবনের নকশা প্রনয়ণ করার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের ওপর দায়িত্ব অর্পন করা হয়। দীর্ঘ সময় গবেষনা ও পর্যবেক্ষণের পর ২০১৬ সালের মার্চ মাসের একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ভবনটির অনুমোদন দেন। দরপত্রের কার্যক্রম সম্পন্ন করে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু  হয়। নিচতলা থেকে ৪র্থ তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে ২০ হাজার বর্গফুট এবং ৫ম তলা থেকে ১০ তলা পর্যন্ত প্রতি ফ্লোরে ১৬ হাজার বর্গফুট জায়গা রয়েছে। ভবনটিতে ৪০টি সরকারি অফিসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভবনের বেসমেন্টে ৪২ টি গাড়ি এবং নিচতলায় ১৩টি গাড়িসহ ৫৫টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ভবনে চারটি লিফট, পাঁচশত কেভিএ জেনারেটর, বারশত পঞ্চাশ কেভিএ বিদ্যুতের সাবস্টেশন, বিভিন্ন ফ্লোরে এবং বাইরে সিসিটিভি স্থাপন, পার্কিংয়ে থাকা গাড়ির জন্য পিএ সিস্টেম, অফিস প্রধানদের রুম ও মাল্টিপারপাস হলরুমে এয়ার কন্ডিশন সরবরাহ এবং স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। ফলে ভবনের ভিতরে ব্যবহৃত অপরিশোধিত বর্জ্য বাইরের নর্দমায় আসবে না। ফায়ার হাইড্রেন্ড, ফায়ার প্রোটেকশন ও ডিটেকশন সিস্টেম ও ফায়ার ডোর স্থাপন করা হয়েছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং স্থাপন, ৩৫ কিলোওয়াট অনগ্রিড সোলার প্যানেল, সুপরিসর ক্যান্টিন, ডে কেয়ার সেন্টার, ব্যাংক এর শাখা, আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম ও স্টেজ সমৃদ্ধ তিন হাজার দুইশত বর্গফুট মাল্টিপারপাস হলরুম, প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষের জন্য হুইলচেয়ার এক্সেসিবল টয়লেট, ইন্টারনেট, পিএবিএ· টেলিফোন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। 

মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম মাদারীপুরে সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়। সরকারি সকল নির্দেশনা ও বিল্ডিং কোড মেনে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে ভবনটিতে। এক একর জায়গার উপর ভবনটি প্রতিষ্ঠিত। ভবনটির নির্মাণে খরচ হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। চলতি মাসের ৩ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন ভবনটি উদ্বোধন করেন। ইতোমধ্যে ভবনে ১৮টি সরকারি অফিস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মাদারীপুরকে অনুসরণ করে গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই মডেলের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। একই ভবনে এক সাথে অনেকগুলো সরকারি অফিস থাকায় সরকারের অনেক টাকা সাশ্রয় হয়েছে। পাশাপাশি সেবা নিতে আসা  জেলার সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেক কমে যাবে।’

জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘শহরের শকুনী লেকের পাড়ে ১০ তলা বিশিষ্ট একটি দৃষ্টিনন্দন সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মিত হওয়ায় জেলাবাসী একই ভবনে পাবে সরকারি সকল দপ্তরের সেবা। এতোদিন অনেক সরকারি অফিস ভাড়া ভবনে কাজকর্ম করতো। এখন সেই সব অফিস এই ১০ তলা ভবনে চলে আসবে। এই ভবনে রয়েছে আধুনিক সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা।’ 

 মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান বলেন, ‘২০১২ সালে আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন জেলায় একটি সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাবনা দেই। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী আমার প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের মার্চে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ভবনটির অনুমোদন দেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবনটি উদ্বোধন করেন।  ১০তলা ভবনটি বাংলাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম মাদারীপুরেই নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে একই ভবনে এক সাথে অনেকগুলো সরকারি অফিসের সেবা নিতে পারবে জেলাবাসী মানুষ।’ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত