মাদারীপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ২ গ্রামের ৪ শতাধিক মানুষ 

  শফিক স্বপন,মাদারীপুর

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২২, ১৫:০৫ |  আপডেট  : ১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:০৭

মাদারীপুরে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ২ গ্রামের ৪ শতাধিক মানুষ । মাদারীপুর সদর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অবৈধভাবে  বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙ্গনের মুখে পরে সদর উপজেলার ২টি গ্রামের শত শত হেক্টর ফসলী  জমি। এই ব্রপারে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন ফল পাননি ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা। প্রতিবাদ করতে  গেলেই হুমকি-ধামকীর শিকার  হচ্ছে অসহায় গ্রামবাসীদের। দ্রুত অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে গ্রাম ও ফসলী জমিগুলো বাঁচাতে সরকারের দৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। আত্মঘাতী ড্রেজার  দিয়ে প্রতিদিন রাত ৮  থেকে  ভোর ৭টা পর্যন্ত অবৈধভাবে চালানো হয় এই বালু উত্তোলনের কাজ । আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে বালু উত্তোলন করা হয় মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের বলাইচর এলাকায় ।

জানাাযায়, মাদাররীপুর সদর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী এলাকা কালিকাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ হোসেনাবাদ , বলাইচর, চরনাছনা, হবিগঞ্জ,  হোসনাবাদসহ প্রায় ১০ টির বেশী গ্রাম রয়েছে । এসব গ্রামগুলি নদীর তীরবর্তী হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৩৫ টি ঘড়সহ বিপাকে শতাধিক পরিবার। অবৈধ  ড্রেজার দিয়ে বালুকাটার কারণে এই পরিবারগুলো নদীগর্ভে  বিলীন হয়ে যাওয়য়ার  আতঙ্কে রয়েছে। আতংকে শুধু বসত-বাড়ী নয় জেগে ওঠা তীরে রয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের লিজ নেয়া শত শত হেক্টও আবাদী কৃষি জমিও। গ্রাম আর কৃষি জমি সংলগ্ন নদী থেকে সরকারের নিয়ম না মেনে অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

সিরাজ মাতুব্বর, মতি খান, আলমগীর খান,বিসাই আকন,রাজ্জাক হাওলাদার, ফজেল খা, রত্তন খা, সালাম খাসহ একাধিক পরিবারের ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙ্গন কবলে বিলীন হয়েছে। নদীর এপার থেকে ওপারের সরিয়ে  নিতে হয়েছে বসতভিটা  অনেকবারই। নিঃস্ব পরিবারগুলো প্রশাসনের কাছে গিয়ে পাইনি  কোন সমাধান। সরকারের কাছে  জোর দাবি জানান। এই অবৈধ ড্রেজার বন্ধের জন্য।

 হোসেনাবাদ এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, আড়িয়াল খাঁ  নদী থেকে  ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে গত বছরের মার্চ মাসে আমরা গ্রামবাসী মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করি। কিন্তু আজ পর্যন্ত  সেই বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। ইতোমধ্যেই  হোসেনাবাদ  মৌজার অনেক কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কৃষি জমিতে বালু পড়ে ফসল চাষের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। আবাদি কৃষি জমি নদী গর্ভে হারিয়ে অনেক কৃষক নি:স্ব হয়ে গেছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখলে অচিরেই হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর ও জমিজমা সবকিছু নদী গর্ভে হারিয়ে ফেলবেন। বালু  খেকোদের কিছু বলতে  গেলেই প্রাণনাশের হুমকি দেয়। 

এর আগে নদীর কবলে ৮ বার বসতভিটা বিলীন হওয়া হোসেনাবাদ গ্রামের আরেক কৃষক সিরাজুল মাতুব্বর জানান, প্রতিবছরের চাইতে এবার নদী ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারন করছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও বিস্তৃীর্র্নএলাকা। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে বালু উত্তোলন করছে ওই চক্রটি। তাদের ভয়ে অনেকে মুখ খুলে কিছু বলতে পারছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি।

কালিকাপুর ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল সাত্তার ফকির  বলেন, আমরা নদীভাঙ্গা এলাকার লোক। ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু কাটার কারণে আমাদের বসতঘর দুইবার নদীতে ভাঙছে । যারা ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে  বালু কাটে নিষেধ করা হলেও থামেনা। বাধ্য  হয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এখন আরো বেশি করে বালু কাটে। বালু কাটার সাথে সম্পৃক্তরা হলেন, ফারুক সরদার(৪৮), মজিবর,(৪৫), শফিক মাতুব্বর (৩৫), দেলোয়ার মুন্সিসহ (৩৮)অনেকে। এরা অনেক ক্ষমতাশালী  লোক তাদের বাধা দিতে গেলেই তারা আমাদেরকে মারতে আসে এবং বালি  যেখানে কাটে ওই ড্রেজারের ভিতরে অস্ত্র রাখে এজন্য  কেউ বাধা দিতে পারে না ভয়ে। এদেরকে প্রতিহিত করার জন্য  আমি জোর দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ফারুক সরদার,মজিবর খা,শফিক মাতুব্বর দেলোয়ার মুন্সির সাথে আলাপ করলে তারা জানান, এখন আর বালু উত্তোলন করা হয় না। আমরা এ বিষয় কিছু জানিনা।

কালিকাপুর ইউনিয়নের  চেয়ারম্যানন  মোঃ ফাইকুজ্জামান বাবুল বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে নদীতে বালু উত্তোলনে নামে আর সকাল ৮টায় বালি কাটা বন্ধ করে।  আমরা শত বাধা দিলেও আমাদের কথা শোনে না। উল্টো আমাদের দিকে তেরে আসে। কোন উপায়ন্ত না  পেয়ে এই অবৈধ ড্রেজার বন্ধ করার জন্য আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  জেলা প্রশাসক, মাাদারীপর সদর উপজেলা  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভূমি কর্মকর্তা, ভূমি ম্যাজিস্ট্রেটসহ সরকারি সকল সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেছিলাম। কিন্তু তারা এখনো কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নদীর পারের লোকজনের আতঙ্কে দিন কাটছে।

মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ বি এম মাহবুবুল আলম খন্দকার বলেন,  যে এলাকায় ভাঙন বেশি, তার একটি তালিকা করা হয়েছে। শিগগিরই  সেখানে জিওব্যাগ দেওয়া হবে। আমরা স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধে সারা  জেলায় দেড় হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রকল্পটির সমীক্ষা চলছে। সমীক্ষার প্রতিবেদন হাতে আসলেই আমরা বাঁধের কাজ সম্পন্ন করব।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মাইনউদ্দীন জানান, নদী ভাঙন রোধ করতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত