মহান মে দিবস
প্রকাশ: ১ মে ২০২২, ০৮:৩৩ | আপডেট : ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০
আজ ১ মে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। সারা বিশ্বে দিবসটি মহান মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আছে শতাধিক বছর আগে থেকে। ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রম ও ন্যায্য মজুরীর দাবিতে ধর্মঘট রত শ্রমিকদের ওপর মালিকশ্রেণির লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনী নির্বিচার গুলি চালিয়েছিল। হত্যা করেছিল অগণিত শ্রমজীবী মানুষকে। শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল পরবর্তীতে পৃথিবীর কসাইখানা হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া শিকাগোর কালো মাটি। বীর শ্রমিকদের রক্তের ধারা বেয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনের কাছে অবশেষে মালিকশ্রেণি মাথা নত করতে বাধ্য হয়, বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পায় দৈনিক আট ঘণ্টা কাজসহ শ্রমিকের অন্যান্য অধিকার, যা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্তা বা আইএলও সনদে স্বীকৃত। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষরকারি দেশ।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্শ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক বাণী দিয়েছেন। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা ও নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও প্রতি বছর মে দিবস পালিত হয় বেশ ঘটা করেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও শ্রমিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নানা আয়োজনে ব্যস্ত থাকে। এবার অবশ্য করোনা মহামারীর কারণে সেসব সভা সেমিনার সিম্পোজিয়ামের ঘটা তেমন হয়তো থাকবে না। তবে, সমাজপতিদের কণ্ঠে শ্রমিকের অধিকারের বাণী আমরা আবারো শুনবো। শুনবো শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা আদায়ের নানা প্রতিশ্রতির কথা। কিন্তু এসবই যে কেবল কথার ফুলঝুড়ি তা অতীতে যেমন দেখা গেছে, এখনও তেমনি হয়তো দেখা যাবে। দিবসটি পেরিয়ে গেলে শ্রমজীবী মানুষগুলোর হাহাকারের কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাবো। এ এক নিদারুণ পরিহাস!
মে দিবস এলেই আমরা অনেক চটকদার কথা শুনি। শ্রমিকের অধিকারের কথা বলা হয়, তাদের ন্যায্য পাওনার আওয়াজ শোনা যায়। কিন্তু আজও আমাদের দেশে নির্বিচারে শ্রমিক ছাঁটাই চলে, অন্যায্য মজুরি দিয়ে শ্রম কিনে নেয়ার হীন মানসিকতায় আক্রান্ত এক শ্রেণির মালিক। দেশে শ্রম মন্ত্রণালয় আছে, শ্রমিক কল্যাণ আইন আছে। কিন্তু শ্রমিকের অধিকার নিশ্চয়তা সৃষ্টির সে আইনের কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। এখনও প্রতিবাদী শ্রমিকদের ওপর মালিক শ্রেণির নির্যাতনের খবর আমরা প্রতিনিয়ত পাই। এ অবিচার যতদিন চলবে, সমাজে মানবাধিকার ততদিন অধরাই থেকে যাবে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কর্ম হারিয়ে বেকার হয়েছে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ। অনাহারে অর্ধাহারে তারা আজ মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের দুঃখের কথা শোনার কেউ নেই।
আমরা মনে করি, শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা না গেলে সমাজে ধনবৈষ্যম্য যেমন কমবে না, তেমনি শান্তি ও স্থিতিশীলতাও আসবে না। কেননা, মানুষকে ক্ষুধার্ত রেখে সামজে শান্তি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।
মহান মে দিবসে তাই আমাদের আহবান, শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হোক। আর এর দায়িত্ব রাষ্ট্রেরই।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত