ভ্যান চালক ও জেলে পরিবারের ২ মেয়ের গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন, লেখাপড়া চালানো নিয়েই সংশয়

  শফিক স্বপন,মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:২১ |  আপডেট  : ২ মে ২০২৪, ১৮:৪৮

চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় শিবচরের উমেদপুর অজিফা রবিউল্লাহ লাইসিয়াম স্কুল থেকে অতি দরিদ্র পরিবারের ২ মেয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। শিবচরের উমেদপুর ইউনিয়নের গ্রামে মাছ ধরে জীবন নির্বাহ করা দরিদ্র জেলে কাঞ্চন মালো ও লক্ষী মালোর মেয়ে মিতা মালো এবং  একই ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের দরিদ্র ভ্যান চালক লিটন চৌকিদার ও রিতা বেগমের মেয়ে শান্তি আক্তার গোল্ডেন জিপিএ -৫ পাওয়ায় বিস্মিত সবাই। এই দুই অদম্য মেধাবীরই ঢাকার ভাল কলেজে ভর্তির ইচ্ছা থাকলেও পরিবারের অসহায়ত্বের কারনে লেখাপড়া চালানো নিয়েই সংশয় রয়েছে।  

সরেজমিনে জানা যায়, শিবচরের উমেদপুর অজিফা রবিউল্লাহ লাইসিয়াম স্কুল থেকে মানবিক বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের সন্তান শান্তি আক্তার। শান্তি উমেদপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের দরিদ্র ভ্যান চালক লিটন চৌকিদার ও রিতা বেগম দম্পত্বির মেয়ে। শান্তির ফলাফল যখন প্রকাশ হয় তখনো ভ্যান চালক দরিদ্র বাবা লিটন চৌকিদার জীবন যুদ্ধের ময়দানে। সেরা ফলাফল করার পর ঢাকার ভাল কলেজে ভর্তির প্রস্তুতির পরিবর্তে  লেখাপড়ার খরচ চালানো নিয়েই শংকিত দেনায় জর্জরিত পরিবারটি। দূর্ঘটনায় আহত শান্তির বাবা শারীরিক সমস্যার কারনে ভ্যান চালাতেও সমস্যা হওয়ায় আয়ের সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট। স্কুল শিক্ষকদের সহযোগিতায় শুধু বই পড়েই এ সাফল্য এসেছে। ৩ ভাই বোনের ২য় শান্তি। মেয়ের লেখাপড়ার চালিয়ে যাওয়ার কথা বলতেই ভ্যানচালক বাবা বাস্পরুদ্ধ কন্ঠে কাঁদেন। তবে শান্তি ও তার মার কন্ঠে দৃড়তার সুর সহযোগিতা পেলে এগিয়ে যাবার। আইন বিষয়ে পড়ে বড় কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন তার। 

 অপরদিকে একই ইউনিয়নের একই বিদ্যালয় একই বিভাগে থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫  পেয়েছে অপর অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান  মিতা মালো।  তার বাবা দরিদ্র জেলে  কাঞ্চন মালো রাতভর মাছ ধরে সকালে বাজারে বিক্রি করে ৩ মেয়েসহ ৫ জনের সংসার কোনমতে চালায়। মিতা লেখাপড়া চালিয়ে যেতে ছোট এক বাচ্চাকে প্রাইভেট পড়ায়। মিতা স্কুল শিক্ষকদের সহায়তা ও সরকারের উপবৃত্তি দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে অন্যের বইও ধার নিতে হয়েছে।  ঢাকার ভাল কলেজে ভর্তির প্রবল ইচ্ছা থাকলেও সেটি প্রকাশ করার সুযোগও পাচ্ছে না মা বাবার অসহায়ত্বের কারনে। তাই স্থানীয় কলেজে ভর্তি ছাড়া বিকল্প নেই মিতার সামনে,তাতেও রয়েছে সংশয়।  লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উঠতে বাবা  মাথা নিচু করে বসে থাকেন। ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন দেখেন মিতা। 

মিতার বাবা কাঞ্চন মালো বলেন, আমি ওর লেখাপড়ার তেমন কিছুই করতে পারিনি। করবো কিভাবে ? নদীতে তেমন মাছ নাই। সারারাত জাল বেয়ে আজ পেয়েছি সাড়ে ৫ শ টাকা। মাঝে মাঝে পাইও না।  এ দিয়ে ৩ মেয়ে নিয়ে সংসার চালানোই কষ্ট। ওর খুব পড়ার ইচ্ছা। সবার সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব না।

শান্তির বাবা চোখ মুছতে মুছতে বলেন, বড় মেয়েটাও ভাল ছাত্রী ছিল। টাকার অভাবে বিয়ে দিয়ে দিতে হয়েছে। এই মেয়েটা খুব পড়তে চায়। সহায়তা ছাড়া আমার পক্ষে পড়ানো সম্ভব না।

অদম্য মেধাবী মিতা মালো নিজের অসহাত্বের তথ্য তুলে ধরে বলেন, এত ভাল রেজাল্ট করে ঢাকার ভাল কলেজে পড়তে ইচ্ছা করলেও  মা-বাবাকে বলার সুযোগ নেই। এখানকার কলেজে ভর্তি হলেও সহায়তা ছাড়া লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া খুবই দুঃসাধ্য। 

মেধাবী শান্তি আক্তার বলেন, আমার বাবা অনেক দেনাগ্রস্থ। তাই ভাল কলেজতো দুরের কথা এখানে পড়লেও  শেষ পর্যন্ত পড়া হবে কিনা সন্দেহ আছে। 

স্কুলটির প্রধান  শিক্ষক মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, চরম দারিদ্রতাকে জয় করে ওদের এ সাফল্য প্রশংসার দাবীদার। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে ওদের সহায়তা প্রয়োজন । ওরা সুযোগ পেলে নিজেদের মেধার প্রকাশ ঘটাতে পারবে।  সহযোগিতার জন্য প্রধান শিক্ষকের মোবাইল নাম্বার (০১৭১২৪৩১৫৬৬),শান্তির পরিবারের মোবাইল নাম্বার (০১৭৭৬৬০২৫০৫) ও মিতার পরিবারের মোবাইল নাম্বারে (০১৩১৯৬৯২৫০৮) যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত