বরগুনায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভাংচুর ও প্রাণনাশের হুমকি

  হিমাদ্রি শেখর কেশব

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ১৫:৫১ |  আপডেট  : ২৪ জুন ২০২৫, ২১:০৬

বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঢলুয়া এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশী পরিবারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কায়দায় ভাঙচুর ও প্রাণনাশের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী ঢলুয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ নূর-এর ছেলে জর্ডান প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধা মো. মনিরুল ইসলাম। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন মনিরুল ।

স্থানীয়রা জানান, বহু বছর ধরে মনিরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা ওই জমি ভোগদখল করে আসছিলেন। আমরা এমনটাই দেখে আসছি। তবে এখন দেখছি জমিটি রাস্তার পাশে থাকায় এবং পরিবারে বসবারত সক্ষম মানুষ না থাকায় এই জমি উপর অনেকেরই কুদৃষ্টি পড়েছে। অনেকেই বিভিন্ন সময় দখলের অপচেষ্টা করে ঝামেলা সৃষ্টি করেছে।

প্রবাসী মনিরের বাবা বলেন, এ বছরের ১৩ জুন শুক্রবার রাত আনুমানিক ২টার দিকে স্থানীয় প্রতিবেশী মৃত রশীদ আকন এর ছেলে মো. আলমগীর (৫২) ও তার স্ত্রী খাদিজাসহ (৩০) তাদের ভাড়াটিয়া গুন্ডাপাণ্ডা নিয়ে আমার বসতঘরের সামনের বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে গাছপালা কেটে নেয় এবং ঘরে থাকা আমি, আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলে কে খুন করার হুমকি দেয়। পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনা স্থলে এসে দেশীয় অস্ত্র সহ তাদের হাতেনাতে ধরে। আমি বৃদ্ধ মানুষ প্রতিবাদও করতে পারছি না। প্রশাসনের কাছে আমি সঠিক বিচার দাবি করছি।

প্রবাসী মনিরুল ইসলাম এর মা মোসা. লাইলী বেগম বলেন, জমিটি নিয়ে বরগুনা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা চলমান রয়েছে (মামলা নং: ১৭১/২৪)। মামলার প্রেক্ষিতে আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই প্রতিপক্ষরা ভাংচুর করেছে। ঘটনার পরদিন ১৬ জুন আমি বাদী হয়ে বরগুনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করি। বিজ্ঞ আদালত প্রাথমিক শুনানি শেষে বরগুনা থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রবাসী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবারের ৬ জন সদস্য জর্ডানে অক্লান্ত পরিশ্রম করে রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখছি। কিন্তু বাড়িতে বারবার হুমকি-ধামকি, দেয়াল ভাঙা ও গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনায় আমার পরিবারটি চরম আতঙ্কে রয়েছে। এ অবস্থায় আমার বিদেশে মনোযোগ দিয়ে কাজ করাও সম্ভব হচ্ছে না। আমি প্রশাসন সহ সকলের কাছে ন্যায্য বিচার চাচ্ছি।

এ বিষয়ে প্রতিবেশী মো. সেন্টু মিয়া বলেন, "আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, মোহাম্মদ এ জমি ভোগদখল করে আসছেন। হঠাৎ করে খাদিজা ও তার লোকজন এসে জমিটি নিজেদের দাবি করে রাতের আঁধারে সেখানে ঘর তুলে দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ এসে তাদের বাধা দিলে তারা লোকজনসহ স্থান ত্যাগ করে। আসলে খাদিজা ও তার লোকজন কী ধরনের কাগজপত্রের ভিত্তিতে জমিটির মালিকানা দাবি করছেন, তা আমাদের জানা নেই।"

প্রতিবেশী ও মসজিদের ইমাম রুহুল আমিন বলেন, "দীর্ঘ বছর ধরে আমরা মোহাম্মদকে এই জমি ভোগদখল করতে দেখছি। হঠাৎ করে রাতের অন্ধকারে কিছু লোক এসে জমির দখল নিতে চেষ্টা করে এবং দাবি করে যে এটি তাদের সম্পত্তি। তবে তারা কীভাবে এই জমির মালিকানা দাবি করছেন, তা আমাদের জানা নেই। শুনেছি, একটি জমির একাধিক দাগ থাকতে পারে এবং তারা সম্ভবত ওয়ারিশ হিসেবে জমির দাবি করছেন।"

এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি মো. জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, এই জমির ওপর আদালতের স্টে অর্ডার রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে এবং ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে একাধিকবার সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাদিজা জমি দাবি করলেও তারা স্থানীয় সালিশকারীদের নিকট  তাদের জমির কোনো বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করতে না পারায় জমির দখল তাদের হাতে দেওয়া সম্ভব হয়নি। একটি জমির একাধিক দাগ থাকতে পারে এবং বিভিন্ন অংশীদাররা সেই জমি ক্রয় করে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছিলেন। হঠাৎ করে রাস্তার পাশে মোহাম্মদের জমির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, রাতের অন্ধকারে ওই জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করা হয়। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দখল প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় এবং তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রতিবেশী মোসাঃ খাদিজা বেগম বলেন, "এই জমির বৈধ মালিক আমরা। প্রমাণস্বরূপ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদের কাছেই রয়েছে। আমরা ঢাকা থেকে ছাত্রদের নিয়ে এসে জমিতে ঘর উত্তোলন করি। কিন্তু প্রতিপক্ষ আমাদের নির্মিত ঘর ভেঙে চুরমার করে দেয়। আমরা এ ঘটনার সঠিক ও ন্যায়সংগত বিচার চাই।"

বরগুনা সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. ইউনুস আলী ফরাজী বলেন, ৯৯৯ নম্বরে ফোনের মাধ্যমে প্রবাসীর জমিতে রাতের আঁধারে দখলচেষ্টার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দখলকারীরা পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পালিয়ে যায়। তবে তাদের দাবি, জমিটি তাদের মালিকানাধীন, তাই তারা সেখানে বসতঘর নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—যদি আদালতের রায় তাদের পক্ষে থেকেই থাকে, তবে কেন তারা রাতের আঁধারে গোপনে ঘর নির্মাণের চেষ্টা করলেন?

তিনি আরও জানান, ঘটনার পরদিন তিনি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব যদি থানায় অর্পণ করা হয়, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত