নেতাকর্মিদের মাঝে চরম হতাশা

বগুড়া-৩ আসনে তৃতীয় বারের মত প্রার্থীতা হারালো আওয়ামীলীগ

  মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম (উজ্জল)

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৫৭ |  আপডেট  : ১৫ মে ২০২৪, ০৭:২৩

নিশ্চিত জয়ের সম্ভবনা থাকার পরও একটানা তৃতীয় বারের মত বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থীর কাছে আসন বঞ্চিত হলো আওয়ামীলীগ। 

দলীয় প্রতীক পাওয়ার পরও দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন নৌকার প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম খান। দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের সংবাদে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন এই আসনের আওয়ামীলীগ দলীয় নেতাকর্মিরা,অনেকে চির দিনের জন্য দল ছাড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন ।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন,আ্যড. নুরুল ইসলাম। এই আসনে জাতীয় পার্টির সাংগাঠনিক অবস্থা ভাল না থাকায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোট প্রার্থী হওয়ার কারনে স্থানীয় আওয়ামীলীগ জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলামের পক্ষে কাজ করে তাঁকে জয়ী করেন। যদিও ওই নির্বাচনে ভোটাররা কেন্দ্রেই যেতে পারেন নি। এ কারনে নৌকায় ভর করে এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম একটানা দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান ওরফে রাজু খান। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন দুপুরে তাঁকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় আওয়ামীলীগের হাই কমান্ড। এদিকে রাজু খানের মনোনয়ন প্রত্যাহারের সংবাদ পাওয়ার দুই উপজেলায় বিরাজ করছে শুনসান নিরবতা। হতাশায় ভেঙে পড়েছেন দলের নেতাকর্মিরা। আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক সুমিনুল ইসলাম’সহঅনেক নেতাকর্মি ক্ষোভের সাথে বলেন, এখানে আওয়ামীলীগ করার মানষিকতা হারিয়ে ফেলেছি। দলের হাই কমান্ড মনে করে বগুড়ার মানুষ আওয়ামীলীগ করেনা,আওয়ামীগ শুধু গোপালগঞ্জে রয়েছে। কিন্তু বগুড়ায় যাঁরা আওয়ামীলীগ করে তাঁরাই প্রকৃত আওয়ামীলীগ। বিএনপি’র শাসনামলে এখানকার আওয়ামীলীগ যে নির্যাতন সহ্য করেছে সারা দেশের আওয়ামীলীগকে সেই অত্যাচার সহ্য করতে হয়নি। অথচ বার বার আমাদের জনগনের কাছে অগ্রহনযোগ্য ব্যক্তির জন্য কাজ করে তাঁকে জয়ী করতে হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আওয়ামীলীগ কর্মি জানান, আমরা বার বার আর জাতীয় পার্টি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে তাঁকে জয়ী করবো না। প্রয়োজনে আমরা দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে করে যাবো। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এই আসনে অন্য দল’সহ একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করবেন।এঁদের মধ্যে সিরাজুল ইসলামের ছেলে খান সাইফুল্লাহ আল মেহেদী রয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছেন আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যান কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য অজয় সরকার, জাসদের আব্দুল মালেক, তৃণমুল বিএনপি’র এ্যাড. আব্দুল মোত্তালেব, অফজাল হোসেনসহ কয়েকজন প্রার্থী। 

এসব কারনে অন্যবারের মত এবারের নির্বাচনে জাতীয়পার্টি প্রার্থী নুরুল ইসলামের বিজয় সহজ হবে না। ২০০১ সালে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও এই আসনে প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা আনসার আলীর মৃধার মনোনয়ন বাতিল করে প্রতীক বরাদ্দের এক দিন আগে বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদানকারি মেজর জেনারেল (অবঃ) গোলাম মওলাকে দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামীলীগ।

উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু বলেন, এই আসনে আওয়ামীলীগ অনেক সুসংগঠিত। কিন্তু জোটগত মারপ্যাচে পরে আমরা জয়ী হওয়ার সম্ভবনা থাকার পরও আবারও প্রার্থী হারালাম, যা অত্যান্ত দুঃখজনক।

এ বিষয়ে এলাকার সাধারন মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান সংসদ সদস্য বেশিরভাগ সময় এলাকায় না থাকায় এবং কোন উন্নয়ন মুলক কাজ না করায় তাঁর মনোনয়ন পাওয়ায় মানুষ খুশি নন। সান্তাহার নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমি এখনও আমাদের সংসদ সদস্যকে চোখে দেখিনি, এ ধরনের মানুষকে কি ভাবে মূল্যায়ন করা হয় তা ভাবতে অবাক লাগে। তিনি এলাকায় কখন আসেন কখন যান কেউ বলতে পারেন না বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাড. নুরুল ইসলাম মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, গত দুই বার আমি জোটের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছে এবং এলাকার রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন উন্নয়ন করেছি। আমি কোন দুর্নীতি করিনি ও আমার দলের কেউ দূর্নীতির সাথে জড়িত নয়। আমি আশা করছি এবারেও আমি জয়ী হবো।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত