পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে সৌদি আরব

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৪ |  আপডেট  : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:০৪

চট্টগ্রাম বন্দরে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব শীঘ্রই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সৌদি আরবের বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘রেড সি গেটওয়ে’ নামে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি সই করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চুক্তির দিন থেকে ২২ বছরের জন্য এই টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি করবে প্রতিষ্ঠানটি।

এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে পিসিটি নির্মাণ করেছে। নতুন নির্মিত এই টার্মিনালে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ ভিড়তে পারবে। পতেঙ্গা এলাকায় নির্মিত এই টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে চার লাখ ৪৫ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে বন্দর-সংশ্লিষ্টরা।

পাশাপাশি এ টার্মিনালটি বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বাকি টার্মিনাল থেকে এখানে বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। যেখানে বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ৯ মিটার ড্রাফট ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারে, সেখানে পিসিটিতে অপারেশনে গেলে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও, প্রকল্প এলাকায় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা স্থানান্তরসহ নানা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। বন্দরের ড্রাইডক থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত ২৬ একর জমিতে এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

নতুন নির্মিত এই টার্মিনালে ৫৮৪ মিটার লম্বা জেটিতে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। ২২০ মিটার দীর্ঘ ডলফিন (তেল খালাসের) জেটি, ৮৯ হাজার বর্গমিটার আরসিসি ইয়ার্ড, দুই হাজার ১২৮ বর্গমিটার কনটেইনার শুল্ক স্টেশন, দুই হাজার ১৫০ মিটার লম্বা ছয় মিটার উচ্চ কাস্টম বন্ডেড হাউস, দুই হাজার ৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্রাক, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার, এক হাজার ২০০ বর্গমিটার মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ এবং পাঁচ হাজার ৫৮০ বর্গকিলোমিটার অফিস ভবন।

পতেঙ্গা টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে জাহাজ থেকে পাঁচ লাখ আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার ওঠানো-নামানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া ২০৪ মিটার লম্বা ডলফিন জেটিতে তেল পরিবহনকারী একটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে চার লাখ ৪৫ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে।

দেশের ৯৪ ভাগ আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আবার মূল রফতানি বাণিজ্যের ৯৮ ভাগ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য যে হারে বাড়ছে, তাতে বন্দরে আরও নতুন টার্মিনাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনেক আগেই দেখা দিয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বশেষ টার্মিনাল নির্মাণ করা হয় ২০০৭ সালে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় পর পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বাস্তবায়ন করা হয়। এটির ব্যবহার শুরু হলে বন্দরের টার্মিনালের সংখ্যা বেড়ে হবে চারটি। অন্যদিকে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য বন্দরের মূল জেটির সংখ্যা হবে ২১।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপি) টার্মিনাল পরিচালনার বিদেশি অপারেটর নিয়োগে কাজ করছে। সৌদি আরব, দুবাই, ভারত ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পিসিটি পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব দেয়। এর মধ্যে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আমদানি পোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিএস সিঙ্গাপুর প্রস্তাব জমা দেয়। এসব প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালকে অপারেটর হিসেবে নিয়োগে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, রেড সি গেটওয়ে সৌদি আরবের জেদ্দা ইসলামিক পোর্টের বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর। প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল পরিচালনার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্দর সম্প্রসারণ ও নির্মাণ করে থাকে। জেদ্দা পোর্ট বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বন্দরের তালিকায় ৪১তম। চট্টগ্রাম বন্দর ৬৭তম।

রেড সি গেটওয়ে প্রস্তাবে বলেছে, পিসিটি পরিচালনায় ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিযোগ করবে প্রতিষ্ঠানটি। যা বাংলাদেশি টাকায় দুই হাজার ৬৪০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে)। নিজেদের অর্থে যন্ত্রপাতি কিনে ২২ বছরের জন্য এই টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি করবে প্রতিষ্ঠানটি। আর চুক্তির দিন থেকে গণনা শুরু হবে।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত