পঞ্চগড়ে বহিষ্কৃত শিক্ষককে পুনরায় নিয়োগের প্রতিকারের দাবিতে ডিসির বরাবরে লিখিত অভিযোগ

  মোঃ কামরুল ইসলাম কামু

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:০০ |  আপডেট  : ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:২২

পঞ্চগড়ে একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল ছাত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগে এক বহিষ্কৃত শিক্ষককে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করছে অন্য একটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিবাবক সদস্য রনজিৎ রায়। ঘটনাটি পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাতকুঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে। লিখিত অভিযোগের পর থেকে বিদ্যালয় ও পার্শবর্তি এলাকায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে অভিবাবক ও কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীরা।

জানা গেছে গত ৯ নভেম্বর ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্যসহ ২৬ জন সাক্ষরিত একটি অভিযোগ দেয়া হয় জেলা প্রশাসক বরাবরে। ওই অভিযোগে বলা হয় পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি নতুনহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহিমকে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগের চেষ্টা করছেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম। আব্দুর রহিমকে নারীলোভী ও ধর্ষণকারী হিসেবেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগকারীরা জানান, আব্দুর রহিম সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি নতুন হাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তার মেয়ের বয়সী এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ ও পরে মামলার চাপে পড়ে বিয়ে করেছেন। এর আগে তার আরও দুইটি স্ত্রী ছিলো। দ্বিতীয় স্ত্রী তালাক দিয়ে চলে গেছেন। স্কুল ছাত্রীকে বিয়ের পর বিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি তাকে চরিত্রহীন, লম্পট ও শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক বলে অবহিত করা হয়। পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে।

এদিকে কামাতকুঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য সর্বশেষ এ বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আবেদন জমা পড়ে ১৩ জনের। এর মধ্যে সাময়িক বহিস্কৃত শিক্ষক আব্দুর রহিমও রয়েছেন। এদিকে গোপনে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও আলীগ নেতা নজরুল ইসলাম বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আব্দুর রহিমকে নিয়োগের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকরা। বিরোধীতা করায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিউদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি দিয়েছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা নষ্ট হতে বসেছে। শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সভাপতির এমন কাÐে বিস্মিত। প্রভাব পড়েছে লেখাপড়াতেও।

ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য রঞ্জিত রায় বলেন, যে শিক্ষক নিজের মেয়ের মতো ছাত্রীকে ধর্ষণ ও বিয়ে করতে পারে এমন শিক্ষককে আমরা আমাদের স্কুলের শিক্ষক হিসেবে মেনে নিতে পারি না। এতে আমাদের ছাত্রীরা হুমকির মধ্যে পড়বে। আব্দুর রহিম বাদে অন্য যে কোন একজনকে নিয়োগ দিলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু সভাপতি আগেই টাকা নিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়ার পায়তারা করছেন। তাই এই নিয়োগ বন্ধের আবেদন করেছি আমরা। নিয়োগ বন্ধ না করা হলে সবাইকে নিয়ে বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিউদ্দিন বলেন, সভাপতি আব্দুর রহিমকে নিয়োগের জন্য টাকা নিয়ে তাকে ফাঁকা চেক দিয়েছেন বলে আমরা জেনেছি। তাই তিনি তাকে নেয়ার জন্য আমাদের চাপ প্রয়োগ করছেন। তিনি ছাড়া আর কেউ ওই শিক্ষককে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দেখতে চান না। এছাড়া তার আবেদনের কাগজপত্রেরও ঘাটতি রয়েছে।

সভাপতির কথা না শোনায় তিনি আকস্মিক আমাকে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি দেন। আমাকে হুমকি দিয়েছেন যে আব্দুর রহিমকে না নেয়া হলে আমাকে বিদ্যালয়ে থাকতে দেয়া হবে না। কোন নোটিশ ও কারণ ছাড়াই আমাকে সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন এই চিঠি ও সিল সবই প্রস্তুত করেছে বহিস্কৃত শিক্ষক আব্দুর রহিম। এ বিষয়ে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করবো।

বিদ্যালয়ের সভাপতি নজরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যারা পরীক্ষায় ভালো করবে তাকেই নেয়া হবে। আব্দুর রহিমকে নেয়া হবে এমন কোন কথা নেই। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের আগেই তার সাথে বসে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি দেয়া হয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মালেক এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি। তবে তিনি জানিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ে থেকে নিয়োগের জন্য মহাপরিচালকের প্রতিনিধি চাওয়া হয়েছে। কাগজপত্র যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত