ড. ইউনূস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
নোবেল পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার নেই, আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা জেলাসি করি না
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১৫:৩৮ | আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নোবেল প্রাইজের জন্য না কি আমি ড. ইউনূসকে হয়রানি করছি। আমার সঙ্গে আসলে কারো কোনো দ্বন্দ্ব নেই। জীবনেও আমার নোবেল প্রাইজের জন্য কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। নোবেল প্রাইজ পেতে লবিস্ট রাখার মতো অত টাকা-পয়সাও নেই। আর আমি কখনো চাইনি।
তিনি আরও বলেন, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। যে জায়গায় আর কেউ কখনও আসতে পারবে না। আর সেটাই আমার গর্ব। প্রধানমন্ত্রী তো সামান্য ব্যাপার। আমি দেশ বেচি না, দেশের স্বার্থও বেচি না। শেখ হাসিনা কারও সঙ্গে জেলাসি করে না।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) বেলা ১১টার দিকে গণভবনে সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি সবসময় দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই চলি। যে কারণে আমি ক্ষমতায় মাঝে আসতেও পারিনি। তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমার কাজ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। দেশের মানুষের মাথা যেন উঁচু থাকে। আমার কাজ সেটাই। আমি এর কাছে ওর কাছে ধর্না নিয়ে বেড়াই না।
সোমবার (২৪ জুন) টাইম ম্যাগাজিনে ড. ইউনূস প্রসঙ্গে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। সেই প্রবন্ধে আপনার নামও এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওনি তো (ড. ইউনূস) সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সরকারের নয়, লেবার কোর্টে সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামিকে নিয়ে সাংবাদিক লেখে কি করে? আইএলও কনভেনশনে আমরা স্বাক্ষর করেছি। শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা করতে আমরা বাধ্য। আমাদের তো লেবার কোর্টের ব্যাপারে কিছুই করার নাই।
সরকারপ্রধান বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) তো রাজনৈতিক দল করতে চাইছিল, সেটিও লেখালেখি হয়েছে। ২০০৭ সালে দল করতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হলেন কেন? গ্রামের মানুষের জন্য যিনি এত কিছু দিয়ে থাকে, তিনি দল করতে পারলেন না কেন? তার দলে তো সেই মানুষগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা। তারা সাড়া দেয়নি। কারণ তারা সুদের চাপে মৃতপ্রায় ছিল। সে দায় কী আমার? আর আমি তো তখন জেলে।
ড. ইউনূসকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি করার পর অনেক বিদেশি, অনেক নোবেল বিজয়ী আমাকে নিয়ে লিখেছে। কই আমি তো তদবির করতে যাইনি। ওগুলো আমার মাথার মধ্যেও নেই। যিনি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলেন, ব্যাংকের একটা এমডি... সে যখন একটা নোবেল প্রাইজ পায়, সেজন্য আমি কনটেস্ট করতে যাবো কেন?
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি আমি করেছি। পৃথিবীতে যত শান্তিচুক্তি হয়েছে, কয়টা অস্ত্রধারী আত্মসমর্পন করেছে? এক হাজার ৮০০ জন অস্ত্রধারী আমার কাছে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে। আমি তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তির কারণে আজকে সেখানে উন্নয়ন হয়েছে। চুক্তির আগে সেখানে কী অবস্থা ছিল? সেখানে কী আমরা কেউ যেতে পারতাম? ৬৪ হাজার শরণার্থী ছিল ভারতে। আমি তাদের ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠিত করেছি।
তিনি আরও বলেন, কেউ যদি এখন আমার নামে নোবেলের জন্য প্রস্তাব দেয়... আমরা তো যাইনি তাদের কাছে। আমার আসলে এসব পুরস্কারের দরকার নেই। এখানে আলাদা একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে, এখানে আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। আর বলে দিলো এটা নিয়ে আমার না কি জেলাসি!
তিনি বলেন, আমি তো কখনো কিছু বলিনি। একটা প্রশ্ন আমার, এই যে বিদেশে বিদেশে বিনিয়োগ, এটা কীভাবে হলো? টাকাটা কোত্থেকে আসলো, কাদের টাকা? সেই জবাবটা দিক। এটা সংবিধিবদ্ধ চাকরিতে থাকা অবস্থায় বিদেশে বিনিয়োগ, আইন কী বলে? আমরাই তো সবাই মিলে তাকে তুলেছি, এটা ঠিক। এখন না কি সব দোষ আমার। কারণ সব থেকে বেশি টাকা আমি দিলাম তার গ্রামীণ ব্যাংকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার গ্রামীণ ব্যাংক দাঁড় করাতে টাকা দেওয়া, ১৯৯৭-৯৮ সালে বন্যা... গ্রামীণ ব্যাংক যায় যায় অবস্থা। ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছি। সব থেকে বেশি যে করে, তার মূল্যায়ন এমন! আবার জেলাসি... জেলাসি করার কী আছে? সে আসুক না, মাঠে আসুক! চলুক আমার সঙ্গে। আসুক, কথা বলব। সব থেকে বেশি আর্থিক সুবিধা নিয়েছে আমার কাছ থেকেই।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, উনার পয়সা আছে, উনি লেখাচ্ছেন। উনি যদি এতই জনপ্রিয় হন, তাহলে বিজ্ঞাপন কেন? তার জন্য তো সারা বিশ্ব ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা। একটা মামলা চলছে। সেটি নিয়ে তো আমি কথা বলতে যাই না।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত