নিজে নীতি অবলম্বন করুন, সন্তানকে শিক্ষা দিন
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪০ | আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২২:০২
সন্তান বাবা মায়ের আয়ত্বে থাকবে এটাইতো স্বাভাবিক। তার জন্য আবার কৌশলের দরকার কি? এমন কথা মনে হতেই পারে। তবে বাবা-মায়ের কিছু ভুলের জন্য সন্তান হতে পারে অবাধ্য। তাই সন্তাকে সঠিক শিক্ষা দিন যাতে সে আপনার অনুগত সন্তান হতে পারে। ষেষকথা সে একজন সৎ সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
অনিচ্ছাকৃত ভুলে ক্ষমা চাওয়া: আমরা যদিও সন্তানের চেয়ে বয়সে এবং বিবেক-বুদ্ধিতে বড়, তবুও এটা মানতেই হবে যে কোনো মানুষই ভুলের বাইরে নয়। আপনি যখন বুঝতে পারছেন আপনার কোনো ভুল হয়ে গিয়েছে এবং আপনি সেটার জন্য অনুতপ্ত, কোনো দ্বিধা না করে সরাসরি ক্ষমা চেয়ে নিন। এতে আপনি যেমন আপনার সন্তানের নিকট স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ থাকবেন তেমনি আপনার সন্তানও আপনার কাছ থেকে এই মহৎ শিক্ষাটি পেয়ে যাবে। তখন পিতামাতা ও সন্তানের মধ্যে অহেতুক দূরত্ব বা ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না।
সবকিছু বয়স দিয়ে বিচার থেকে বিরত থাকুন: শুধু মাত্র বয়সে বড় বলে আপনি এটা অনুমান করবেন না যে আপনার সকল সিদ্ধান্ত বা কাজ সব সময় ঠিক এবং সন্তানের নিজের মতামত সবসময় ভুল। সন্তানকে সবসময় একজন আলাদা সত্ত্বার মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তার নিজের পছন্দ-অপছন্দের গুরুত্ব দিন। তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন এবং তার মতামত যুক্তিসংগত হলে তা যদি আপনার মতের সাথে সাংঘর্ষিকও হয়, তবুও রিয়েক্ট না করে ঠান্ডা মাথায় মেনে নিন।
প্রশংসা করুন: সন্তানকে আয়ত্বে আনতে প্রশংসা করুন ধন্যবাদ দিন। আপনার সন্তান যখন কোনো ভালো কাজ করবে তখন তার প্রশংসা করে তাকে ভালো কাজে উৎসাহিত করুন। পজেটিভ কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ দিন পারলে কাজের জন্য পুরষ্কার দিন। এতে করে তার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়বে তেমনি আরো বেশি ভালো কাজ করতে উৎসাহ পাবে।
নিজের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার থাকতে শিক্ষা দিন: অনেক ছেলেমেয়ে বেড়ে উঠার সাথে সাথে মিথ্যে বলার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাবা মায়ের সাথে সম্পর্কের দূরত্ব। সন্তান যখন আপনাকে সরাসরি কোনো কিছু শেয়ার করতে ভয় পাবে তখনই তার মাঝে মিথ্যে বলে নিজের ভুলকে আড়াল করার প্রবণতা দেখা দেবে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগেই আপনার সন্তানকে নিজের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার থাকতে শিক্ষা দিন।
সঠিক-ভুল ও উপকার-অপকার সম্পর্কে ধারণা দিন: সন্তানকে আয়ত্বে আনতে ভুল এবং সঠিক ধারণা দিন। সঠিক কাজের জন্য যেমন তাকে পুরষ্কৃত করবেন তেমনি ভুল কোনো কাজ করলে কখনোই তাকে তিরষ্কার করবেন না। বরং অন্য সময় যেন এরকম ভুল না হয় সেটা সম্পর্কে বুঝিয়ে বলুন। এই ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে তাকে সাহায্য করুন। দেখবেন যে কোনো ভুলে বা সমস্যায় পড়লে সে আপনাকেই সবার আগে বলবে এবং এর থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করবে। ফলে দ্বিতীয়বার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না আর আপনিও থাকবেন নিশ্চিন্ত।
সন্তানকে সময় দিন, সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ করুণ: অনেক ক্ষেত্রে বাবা মায়ের ব্যস্ততার কারণে সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়ে উঠে না। ফলে সন্তান কি করছে না করছে, কার সাথে মেলামেশা করছে কোনো কিছুর খেয়াল থাকে না। এই সুযোগে সন্তান খারাপ পথে যাওয়ার সুযোগ পায়। বাবা-মাকে এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে যেন কোনো মতেই কমিউনিকেশন গ্যাপ না আসে। সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে তাদের পর্যাপ্ত সময় দিন। ছুটির দিনে বাইরে ঘুরতে যান, বাসায় নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ান। তাদের কথা শুনুন, খেলাধুলা করুন। সন্তানকে আয়ত্বে আনতে হলে অবশ্যই সন্তানকে বুঝতে হবে, বকাঝকা করে কঠোর হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে হিতের বিপরীত হতে পারে। সন্তানকে পারতপক্ষে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে রাখুন, নিজের সাথে সম্পর্ক সহজ করে নিন।
সন্তান ও আপনার মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তি: অনেক সময় পরিবারে বা আশেপাশে এমনকিছু ব্যাক্তি থাকবে যারা তাদের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছায় আপনার ও আপনার সন্তানের মঝে দুরত্ব সৃষ্টি করার কারণ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে তারা আপনার সন্তানকে প্রচন্ড ভালবাসে। যা চাইছে তাই করতে দিচ্ছে। কিন্তু যখন আপনি আপনার সন্তানকে কিছু করতে বাধা দেন তখন সরল মনের শিশুটি আপনাকে প্রতিপক্ষ এবং তৃতীয় ব্যাক্তিটিকে আপন ভাবা শুরু করে। তখন শিশুটি আপনার অবাধ্য হওয়া শুরু করে।
পিতা মাতার সমালোচনা: আশেপাশে এমন ব্যক্তি মাঝে মাঝে থাকবে যারা সন্তানের সামনেই পিতামাতার সমালোচনায় মেতে উঠে। এই ধরণের নেতিবাচক কথা শিশু মনে প্রভাব ফেলতে পারে। সে তার পিতামাতাকে নেতিবাচক ভাবা শুরু করে। তখন সন্তানের অবাধ্য হবার সম্ভাবনা বেশি থাকতে পারে। তাই এই ধরণের সমালোচক ব্যক্তিদের হাত থেকে আপনার সন্তানকে দূরে রাখুন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত